ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল পাস

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল পাস

সংসদ প্রতিবেদক : বিয়ের বয়স নির্ধারণে বিশেষ প্রেক্ষাপটে ছাড়ের বিধান রেখে সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল পাস হয়েছে। এই বিল পাসের ফলে নারীদের মতো পুরুষরাও বিশেষ প্রেক্ষাপটে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে করার সুযোগ পাবেন।

বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিল পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, সেলিম উদ্দিন, রওশন আরা মান্নান। তবে তাদের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে দিলে তা পাস হয়।

বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে' মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল সংসদে ওঠে গত ৮ ডিসেম্বর। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়।

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না। যা আগে অপ্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে শুধু নারীদের কথা উল্লেখ ছিল। এ ছাড়া ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’বিধি দ্বারা নির্ধারিত রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়। এতে ক্ষেত্র বিশেষে ১৮ বছরের আগেও বিয়ে দেওয়া যাবে।

বিলে আরো বলা হয়েছে, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ অপ্রাপ্তবয়স্ককে বিয়ে করলে তাকে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। অর্থ অনাদায়ে আরো তিন মাস কারাদণ্ড হবে। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ আরেক অপ্রাপ্তবয়স্ককে বিয়ে করলে তার এক মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড হবে।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বাল্যবিবাহ পরিচালনা বা সম্পাদনের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হয়। বাল্যবিবাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাবা-মাসহ অন্যদের সর্বোচ্চ দুই বছর থেকে সর্বনিম্ন ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে এক মাসের কারাদণ্ড এবং ১ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল।

বিলে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহের জন্য উদ্যোগী অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি আদালতের নির্ধারিত ফরমে যদি মুচলেকা দেয় যে, সে তার এলাকায় বাল্যবিবাহ বন্ধে উদ্যোগী হবেন এবং নিজে ভবিষ্যতে এ কাজে সম্পৃক্ত হবেন না, তবে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। এই আইনের অধীন আরোপিত জরিমানা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

বিলে আরো হলা হয়েছে, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং অআপসযোগ্য হবে। এ আইনের অধীনে বিচার হবে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাল্যবিবাহ নিরোধের লক্ষ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল বৈষম্য বিলোপ সনদ- ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ-১৯৮৯ এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং শিশু আইন-২০১৩ এ বর্ণিত শিশুসুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-১৯২৯’রহিতপূর্বক যুগোপযোগী ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বাল্যবিবাহ মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বাল্যবিবাহ হলে প্রজনন স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এতে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু বাড়ে। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গার্লস সামিটে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছর নিচে বিয়ের হার শূন্যে, ১৫-১৮ বছরের বয়সিদের বিয়ের হার একতৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। তারই অংশ হিসেবে এই আইন করা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/নৃপেন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়