ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

রানা প্লাজার ৪২ শতাংশ শ্রমিক বেকার

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ২২ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রানা প্লাজার ৪২ শতাংশ  শ্রমিক বেকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের এখনো ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ বেকার রয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড।

তারা জানিয়েছে, ৪৮ শতাংশ শারীরিক এবং ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ শ্রমিক এখনো মানসিকভাবে অসুস্থ।

শনিবার ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘অবিস্মরণীয় অমার্জনীয় : রানা প্লাজা’ শিরোনামে এক জরিপে সংস্থাটি এ সব তথ্য উপস্থাপন করে। গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার নুজহাত জেবিন।

সংস্থাটি বলছে, রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মধ্যে ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ বেকার থাকার মূল কারণ ৪৮ শতাংশ শারীরিক ও ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ মানসিক দুর্বলতা।

অ্যাকশন এইড ১ হাজার ৪০৩ জন আহত শ্রমিক ও ৬০৭ জন মৃত শ্রমিকের পরিবারের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করে।
 

গবেষণাপত্রে জানানো হয়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকের ১৩ দশমিক ১ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ৩০ দশমিক আট শতাংশের অবস্থা এখনো স্বাভাবিক না। এ ছাড়া গেল এক বছরে প্রায় ৯০ শতাংশ আহত শ্রমিক শারিরীক ও মানসিক চিকিৎসা পাননি। মৃত শ্রমিক পরিবারের অধিকাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তা ছাড়া আর কোনো প্রকার সঞ্চয় নেই। যা তাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।


প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা প্রতিবেদন বলেছে, ট্রাজেডির চার বছরের মাথায় এমন পরিস্থিতি অমানবিক ও দুঃখজনক। গবেষণার এই ফলাফল প্রমাণ করে, দুর্ঘটনার পর যে উদ্যোগ ও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট ছিল না। সঠিক পরিকল্পনা করা হয়নি শ্রমিদের পুনর্বাসন ওক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে।

গবেষণার প্রতিবেদন সম্পর্কে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, চার বছর পরও এত বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের এই অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর ফলে তারা আরো দারিদ্র্যের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের যেভাবে আর্থিক সহায়তা চুয়ে চুয়ে দেওয়া হচ্ছে তা দিয়ে তারা ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পরিকল্পনাও করতে পারছেন না। মানসিক এবং শারীরিকভাবে তারা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে পুনরায় সেই কাজে ফিরে যেতে পারছে না এবং ভয় পাচ্ছে। চার বছরেও যদি আমরা ভিন্ন পরিকল্পনা করতে না পারি তাহলে আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক।

এ সময় উপস্থিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, চিকিৎসার জন্য এখন আমারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। দুর্ঘটনার পর প্রথম ৬ থেকে ৮ মাস আমাদের কিছু সহযোগিতা করেছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এখন আর আমাদের কেউ খোঁজ নেয় না। আমি আমার ন্যায্যক্ষতিপূরণ চাই। অনুকম্পা চাই না। ৫ হাজার অথবা ৫০০ টাকা এবং একটি বিরানীর প্যাকেট আমরা চাই না। আমরা মূল্যায়ন চাই।

শারীরিকভাবে আহত বাকি বিল্লাহ বলেন, দেড় বছর হাসপাতালে ছিলাম। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কিছুটা সুস্থ হয়ে আমি একটি কারখানয় কাজ নিলাম। তবে শারীরিকভাবে খারাপ থাকায় তারা আমাকে চাকরিচ্যুত করেছে। আমি এখন কীভাবে চলব?

শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহবায়ক হামিদা হোসেন বলেন, শ্রমিকরা এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি এটা সত্য ও সঠিক। হাইকোর্ট একটি প্যানেল গঠনের মাধ্যমে শ্রমিকরা কে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার স্কেল তৈরি করে। কিন্তু এরপর আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এটা কোনভাবেই ঠিক না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, চার বছর পরও দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণও পুনর্বাসনের বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া যায়নি। প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের সময় সম্ভবত আমরা পার করে ফেলেছি। আহত শ্রমিকদের ভেঙে ভেঙে সহযোগিতা করা হয়েছে। যেটা তাদেরও কাজে আসেনি। যে হিসেব করে শ্রমিকদের টাকা দেওয়া হয়েছে তা খুবই সমান্য। সমস্যা হলো আহত শ্রমিকদের ক্ষতির পরিমাণ ঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।

তিনি আরো বলেন, সরকার যদি একটি স্বাস্থ্য কার্ডের ব্যবস্থা করে তাহলে আহতরা সেই কার্ড দেখিয়ে তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার হাসপাতালে গিয়েস্বল্প মূল্যে অথবা বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবেন। ঢাকার বাইরে যারা চলে গেছেন তাদেরও এই কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে।


এছাড়া অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা ও আহতদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে।


এর আগে ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত অ্যাকশন এইডের গবেষণা প্রতিবেদনে ৪৮ শতাংশ শ্রমিকের বেকারত্বের কথা জানানো হয়েছিল। আর আহত শ্রমিকদের ৫৯ শতাংশ মানসিক সমস্যার কথা বলা হয়েছিল। তখন আহত ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী এক হাজার ৩০০ শ্রমিকের ওপর জরিপ চালায় সংস্থাটি।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে আট তলা রানা প্লাজা ধসে শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন, আহত হন হাজার খানেক শ্রমিক।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ এপ্রিল ২০১৭/এম এ রহমান/উজ্জল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়