ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিচারপ্রার্থীদের প্রতি মানবিক হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

মুশফিকুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ২৮ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিচারপ্রার্থীদের প্রতি মানবিক হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচারপ্রার্থীদের প্রতি আরো মানবিক হয়ে সেবার মনোভাব নিয়ে ভোগান্তি কমাতে বিচারক ও আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা শুক্রবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৭’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধনমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু আইন আর অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধি করে বিচারপ্রার্থী মানুষের ভোগান্তি কমানো সম্ভব নয়। আমাদের বিচারক এবং আইনজীবীদের আরও মানবিক এবং জনগণের প্রতি সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গ- আইন, বিচার ও শাসন বিভাগকে একে অপরের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে হবে। তা না করে এই অর্গানগুলো একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকলে কোনো রাষ্ট্রই সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না। তিনি এ বিষয়টিতে সবাইকে সতর্ক থাকারও নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই, যেখানে ধনী-দরিদ্রের কোনো বৈষম্য থাকবে না এবং জনগণ সংবিধানের মৌলিক অধিকারসমূহ ভোগ করে নিজেরা নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারবেন।

শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমের বিস্তার ঘটিয়ে এটিকে একটি স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।



আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসহায়, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সুগম করার লক্ষ্যে আমরা ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন-২০০০’ পাস করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে সরকারি আইন সহায়তা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠন করে এই আইনকে গতিশীল করি। এ সংক্রান্ত আরও আইন ও বিধি প্রণয়ন করি। দুস্থ, অসহায় ও দরিদ্র বিচারপ্রার্থী জনগণ এর সুফল ভোগ করছেন। জনগণের অধিকার রক্ষায় আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি।

বিচার বিভাগের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিকল্প নেই। বাংলাদেশে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই আন্তরিক।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজে ভুক্তভোগী ছিলেন বলেই সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানে মানবাধিকারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেন। বিনাদোষে এবং বিনাবিচারে বঙ্গবন্ধুকে বছরের পর বছর জেলখানার নির্জন সেলে একাকী বন্দি করে রাখা হয়েছিল। বিচারের নামে প্রহসনও হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়লে আমরা জানতে পারি কী দুঃসহ দুঃখকষ্ট তাকে সহ্য করতে হয়েছে।

এ সময় শেখ হাসিনা সংবিধান থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, আমাদের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং সকলেই আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।’ আবার ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে।’

তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের আইনগত সহায়তা লাভের অধিকার রয়েছে। আমরা একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আধুনিক বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম এ বৈষম্য দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বলে আমি মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ জনগণ সরকারি অর্থ ব্যয়ে আইনগত সহায়তা পাচ্ছেন। এছাড়া এসিডদগ্ধ নারী-পুরুষ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারী, প্রতিবন্ধী, পাচারকৃত নারী বা শিশু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠীর জনগণও এই আইনগত সহায়তা পেয়ে থাকেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত আদালতগুলোতে এবং শ্রমিকদের কল্যাণে শ্রম আদালতসমূহে আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনগত সহায়তা কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টেও সরকারি আইনি সেবা দেওয়া হচ্ছে।

সরকার প্রধান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আট বছরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩৯ জন নারী-পুরুষ শিশুসহ মোট ২ লাখ ৩১ হাজার ৬২৬ ব্যক্তিকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমের মোট ৪৬ হাজার ৫৪৬টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে গত আট বছরে সুপ্রিম কোর্টে মোট ১ হাজার ৬৯৩টি আপীল মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসকে শুধু আইনি সহায়তার কেন্দ্র হিসেবে আমরা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। বিচারপ্রার্থী জনগণের কল্যাণে এটিকে আমরা ‘এডিআর কর্নার’ বা ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে কাজে লাগাতে চাই।

তিনি বলেন, ‘জুলাই ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের মাধ্যমে বিকল্প পদ্ধতিতে মোট ৩ হাজার ৫০০টি বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার ৬০০ টাকা আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর অধঃস্তন আদালতে ৫৮৬ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৩৫০ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন এবং নতুন নতুন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

মামলাজট নিরসন ও মামলার দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে আইনি সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতে বিচারাধীন মামলাসমূহ বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির পাশাপাশি দেওয়ানী কার্যবিধি সংশোধন করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের কাজ চলছে।

তিনি বলেন, তার সরকার বিচার বিভাগে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার চালু করেছে। এতে বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটিতে ৫৪০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অধঃস্তন আদালতের দেড় হাজার বিচারকের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সম্প্রতি ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমির সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র : বাসস।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ এপ্রিল ২০১৭/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়