গুলশান হত্যাকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেবে সরকার
কেএমএ হাসনাত : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপে গুলশানে হলি আর্টিজানে নিহতদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছেন। জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশি নিহত ২০ জনের পরিবারকে সরকার এ সহায়তা দেবে।
একই সঙ্গে ন্যাক্কারজনক ওই ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে আগামী ১ জুলাই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুলশানের দুঃখজনক ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমে শুধু নিহত ইতালীয় ৯ নাগরিককে এক লাখ ৩৫ হাজার ইউরোর সমপরিমাণ ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনও নিয়েছিল। পরে বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি এ সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে তিনি এতে আপত্তি জানান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার প্রস্তাব হবে এই ক্ষতিপূরণ সকল ক্ষতিগ্রস্ত নিরীহ পরিবারকে দেওয়া হবে এবং এই ব্যয় সরকারি কোষাগার থেকে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যে কোনো দেশেরই হোক না কেন (বাঙালিসহ) তারা সবাই এই সহায়তা পাবেন।’ অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে আনলে তিনি অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত পোষন করেন এবং জঙ্গি হামলা নিহত সব পরিবারকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া এক নোটে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘মাননীয় অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করি। যারা আক্রমণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তারা যে দেশেরই হোক সকলকে আমরা সহায়তা করব।’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় আবার নতুন করে বরাদ্দ তৈরি করছে। ফলে ২০ পরিবারকে কি পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে তা নির্ধারণে কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে গত ১লা জুলাই রাতে জঙ্গিরা ২০ জনকে হত্যা করে। এদের মধ্যে ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপানি, ৩ জন বাংলাদেশি এবং ১ জন ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের হামলায় দুজন পুলিশও প্রাণ হারান। নিহত সব পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমে শুধু নিহত নয় ইতালীয় নাগরিকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ইউরো (প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা)।
সূত্র জানায়, অপ্রত্যাশিত খাতে এ পরিমাণ অর্থ না থাকায় অর্থ বিভাগ জননিরাপত্তা বিভাগকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে তা জোগান দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিষয়টিতে আপত্তি জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি এক নোটে লিখেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলেন যে হলি আর্টিজানের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ইতালীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। তাদের মনেই হলো না যে এই সুবিধা সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দেওয়া উচিত। এই বিষয়ে জাপান সফরকালে কানাঘুষায় শুনতে পাই যে এরকম একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এবং এইটি তখনই তখনই একটি বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের নিন্দার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
গত ১৪ মে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া নোটের সঙ্গে একমত পোষণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই দিন প্রস্তাবে সম্মতি জানান এবং তাতে অনুমোদন দেন। ওইদিন তিনি অপর নোটে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে নিহত সব পরিবারকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। তিনি লিখেন, ‘এই অনুমোদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিন।’
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রথমে ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা ধরে ব্যয়ের হিসাব করলেও এখন ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অর্থের পরিমাণ বাড়বে।
এদিকে বুধবার জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘জাইকা’র প্রেসিডেন্ট ড. শিনিচি কিতাওকার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বুধবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে তার কার্যালয়ে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। প্রসঙ্গক্রমে গুলশানে নিহত জাপানিদের বিষয়টিও উঠে আসে।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ১ জুলাই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের বর্ষপূতি জাপানিরা বিশেষভাবে পালনের কথা জানিয়ছে। দিনটি বাংলাদেশের জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমরাও দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করার চিন্তা করছি। বাজেটের পর বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মে ২০১৭/হাসনাত/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন