ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নিরপেক্ষভাবে বিচার করুন : প্রধান বিচারপতি

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৪, ২৪ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিরপেক্ষভাবে বিচার করুন : প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অ্যাডভোকেট শান্তি পদ ঘোষের ‘জুডিশিয়াল ইন্টারপ্রিটেশন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ  আহ্বান জানান।

বিচারপতি এস কে সিনহা বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিচার করতে গেলে কে কী রাজনীতি করত সেটা দেখবেন না। যদি রাজনীতি করতে হয় আপনারা বিচারকের পদ ছেড়ে চলে আসেন। বিচার নিরপেক্ষভাবে করবেন। এটা আপনাদের প্রতি মানুষের অধিকার।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিচারকদের বিচারিক জীবনে প্রবেশ করার আগের সব আদর্শিক চিন্তা পরিহার করে বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে মনস্থির করে জুডিশিয়াল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এগুতে হবে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারকদের হয়ত ছাত্রজীবনে বা প্রফেশন জীবনে চিন্তা-চেতনা থাকতে পারে রাজনীতি নিয়ে। আমরা বিচারকরা যখন বিচারক হিসেবে শপথ গ্রহণ করি এবং দেশে যারা বিচারক আছেন আপিল বিভাগে, হাইকোর্ট বিভাগ কিংবা নিম্ন আদালতে, তাদেরকে বলব, আপনারা আপনাদের পাস্ট (অতীত) ভুলে যান। এই বিচার বিভাগের আপনি যখন বিচারক, আপনাকে প্রেজেন্ট এবং ফিউচার নিয়ে ভাবতে হবে।’

আইনজীবীদের আরো পেশাদারিত্বের পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আইনজীবী এবং বিচারকদের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের বিষয়ে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমেরিকার প্রধান বিচরপতি আর্ন ওয়ারেন্ট জেলা আদালতে ওকালতি আরম্ভ করেছিলেন। এরপর তিনি সরকারি উকিল হয়েছিলেন। তার মেধার কারণে তিনি তিন তিনবার গভর্নর হয়েছিলেন। উনি ছিলেন রিপাবলিকান দলের। কিন্তু ১৯৭০ সালে যখন গভর্নর হন তখন তার নিরপেক্ষতার জন্য দলমত নির্বিশেষে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের আগে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি আর রাজনীতি করবেন না।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শুধু বিচারকদের বলব না, আইনজীবীদেরও বলব। এই সমাজে আপনাদেরও অনেক কিছু করার আছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আপনারা এক হোন।’

শোকের মাস প্রসঙ্গে এস কে সিনহা বলেন, ‘এটা শোকের মাস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারকে এই মাসে কয়েকজন বিপথগামী লোক নৃসংশভাবে হত্যা করেছিল। একটা বাচ্চা ছেলে রাসেল তাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? এটা পশুর চেয়েও জঘন্য। কিন্তু এর নথি যখন পর্যালোচনা করলাম, যেহেতু এটা ফাইনাল কোর্ট, আমরা দেখলাম অনেক ত্রুটি ছিল এই মামলায়। ইনভেস্টিগেশনে যেরকম ত্রুটি ছিল, সেরকম প্রসিকিউশনের ত্রুটি ছিল। এ বিষয়ে আমি ভবিষ্যতে কিছু লেখার চিন্তা-ভাবনা করছি। আমি সেই বইয়ে কী ত্রুটি ও গাফিলতি ছিল তা তুলে ধরব।’

‘বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় ‌পর্যালোচনা করে দেখবেন। কিন্তু আমরা দুই রায়ই না মেনে পরিষ্কার বলেছি, এটা ক্রিমিনাল কন্সপিরেসি ছিল। ক্রিমিনাল কন্সপিরেসি যদি হয়, এটা একেবারে ক্যান্টনমেন্টন থেকে কন্সপিরেসি হয়েছে। এই কন্সপিরেসিতে কে কে জড়িত ছিল? কন্সপিরেসিতে যদি একজন লোকও থাকে এবং তার সাথে আর যারা আছে প্রত্যেকেই সমভাবে দায়ী। আমরা মাত্র ১৫, ১৬, ২০ জনের বিচার করেছি। এখন যারা বড় বড় কথা বলেন, আমি একজন প্রধান বিচারপতি হিসেবে মুখ খুলতে পারছি না, কিন্তু আমি হয়ত কিছু লিখে যাব। আমি দেখিয়ে দেব, ষড়যন্ত্রের মধ্যে কারা কারা ছিল। গাফিলতি হওয়ার পরেও সেনাবাহিনীর মধ্যেও অনেকজন কোষাগার থেকে সুবিধা নিয়ে চলে গেছেন। তারা তো তা পাওয়ার কথা ছিল না।’

অনুষ্ঠানে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকট জয়নাল আবেদিন, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

আরো পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ আগস্ট ২০১৭/মেহেদী/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়