ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বৌদ্ধরা, আশ্বস্ত করেছে ১৪ দল

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বৌদ্ধরা, আশ্বস্ত করেছে ১৪ দল

নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সে ব্যাপারে তাদেরকে আশস্ত করেছেন ১৪ দলের  নেতারা।

বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলতি বৌদ্ধ সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে ১৪ দলের মতবিনিময় সভায় তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা হয়। এতে ১৪ দল এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম আমিন, জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া, নাজমুল হক প্রধান, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়–য়া, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, জেপির শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা, ওয়াজেদুল ইসলাম, অসিত বরণ রায়, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, বৌদ্ধ প্রচার সংঘের সভাপতি সংঘনায়ক সুধানন্দ মহাথেরো, সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের অশোক বড়ুয়া, পিয়ার বড়–য়া, কর্ণেল (অব.) সুমন বড়–য়া, রঞ্জিত বড়–য়া, দীপ্তি বড়ুয়া, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি অসীম রঞ্জন বড়ুয়া, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নিম চন্দ্র ভৌমিক, পূজা উদযাপন পরিষদের তাপস কুমার পাল উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে একটি মহল বিভিন্নভাবে উস্কানিমূলক তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে বলে বলে দাবি করেন বৌদ্ধ নেতারা। এ জন্য তারা নিজেদের সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এর জবাবে ১৪ দলের নেতারা তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম তাদেরকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে কোনভাবেই কখনো কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হয়েছে এবং দমন করা হবে। আমরা আপনাদের এই সভা থেকে আশ্বস্ত করতে চাই।’

বৌদ্ধ প্রচার সংঘের সভাপতি সংঘনায়ক সুধানন্দ মহাথেরো বলেন, ‘গতকাল সূচির বক্তব্য শুনে খুব উত্তেজিত হয়ে গেছি। আমাদের দেশে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান; আমরা সবাই এদেশের নাগরিক। কিন্তু তাদের দেশে ৯০ভাগ মানুষ বুদ্ধিস্ট হতে পারে! আজকে আমাদের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব?’

তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, রাখাইনে কয়েকশ হিন্দু ছাড়া বাকি সব মুসলমান। সামনে শারদীয় দূর্গাপূজা এবং প্রবারণা পূর্ণিমা। আজকে বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবে সমগ্র জনগণই উদ্বেগের সাথে আছে। আইএস এবং দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি-জামায়াত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোকে মদদ দিচ্ছে। এটা মানবিক দিক। এখানে রাজনীতির দরকার নেই। আর কোন জঙ্গিবাদ উত্থানেরও প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে সরকার সক্রিয় আছে। আগামী দিনে পূজাগুলো যাতে সুন্দরভাবে হয়, আপনারা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, আমরা যারা আছি আমরাও সকলে আপনাদের পাশে দাঁড়াব।’

অশোক বড়–য়া রোহিঙ্গা পরিস্থিতির কারণে বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় সরকার ও ক্ষমতাসীন জোটকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘মিয়ানমার যে কার্যক্রম চালাচ্ছে, আমরা বৌদ্ধ হিসেবে সেটার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমারে এই দুষ্কর্মের কারণে বাংলাদেশে বৌদ্ধদের ওপর অহেতুক দায় চাপানোর জন্য সামাজিক মাধ্যমে ও বিভিন্নভাবে কোন একটি মহল থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যে কারণে বৌদ্ধরা কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’ বৌদ্ধদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে শুধু সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

এ ব্যাপারে মোহাম্মদ নাসিম আশ্বস্ত করে বলেন, ‘সামাজিকভাবে আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৪ দলের যা যা করা দরকার আমরা করবো। আপনারা নিশ্চিত থাকেন, যে কোনভাবে আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আপনারা দায়ী নন। দায়ী হল মিয়ানমারের সামরিক শক্তি। মিয়ানমারের যে বৌদ্ধরা আছে তারাও এটা করতে পারে না। সামরিক বাহিনীই এই কাজগুলো করছে। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকবেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা আপনাদের সাথে আছি।’

জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘নিরাপত্তা বিষয়ে আপনারা উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার কথা এখানে প্রকাশ করেছেন। আমার মনে হয় এটা স্বাভাবিক জিনিস। একটা স্পর্শকাতর পরিবেশ এবং পরিস্থিতে আপনারা যে উদ্বেগ নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলতে এসেছেন, এটারও প্রয়োজন ছিল।

বাস্তবেই আমাদের দেশ একটা গভীর সমস্যার মধ্যে পড়েছে। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এই সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য আমাদের সরকার এবং সরকার প্রধান শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক এবং সরকারিভাবে যোগাযোগ করছেন। তার উপর আমাদের আস্থা আছে। আপনারাও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যারা অসাম্প্রদায়িক মানুষ তারা এক জায়গায় থাকতে পারি তাহলে যে কোন ষড়যন্ত্র, সেটা দেশের ভিতর থেকে হোক, দেশের বাইরে থেকে হোক, তা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো এবং সে সামর্থ্য আমাদের আছে। আমরা আপনাদের সাথে আছি। আপনাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। উদাসীন হওয়ার কিছু নেই। আমরা সবাই যদি সক্রিয় থাকি তাহলে আমরা যে কোন সমস্যা মোকাবেলা করতে পারব।’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের মনিদ্র কুমার দেবনাথ বলেন, ‘সামনে আসন্ন দূর্গোৎসব। এই শারদীয় দূর্গোসব সারাদেশে পালিত হতে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃংখলা বজায় রাখার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটা প্রশংসনীয়।’

বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি অসীম রঞ্জন বড়–য়া গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের মিডিয়াতে যে খবরগুলো আসছে তা আপনারা একটু যাচাই-বাছাই করে দেখবেন। এমন কোন খবর দেবেন না, যা আমাদের স্বাভাবিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে।’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তাপস কুমার পাল ফেসবুকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাসিরগর ও রামুতে যে ধরণের ঘটনা ঘটেছে তা স্মরণ করে বলেন, ‘ফেসবুকে কেউ কেউ এমন পোস্ট দিচ্ছে যেগুলো দেখলে আমাদের এখানে যে কোন সময় একটা গ-গোল লেগে যেতে পারে। ফেক আইডি ব্যবহার করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এসব লেখা হচ্ছে।’ এজন্য ১৪ দলের নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগসহ সকল দলকে বলে দেবেন যদি কোথাও কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাহলে কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় এবং সেটা আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে অনেকেই উসকানি দেবে কিন্তু আমরা উসকানিকে মোকাবিলা করবো। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে খুব স্পষ্টভাবে ও সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত করা হয়েছে। আপনারা সামাজিক নিরাপত্তার কথা বলেছেন। এই বৈঠক একটি সামাজিক নিরাপত্তার পরিবেশ সৃষ্টি করবে। আজকের বৈঠকটি সময়োচিত একটি বৈঠক হয়েছে। আপনারা কোন স্ট্যাটাস দেখে আতঙ্কিত হবেন না। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এদেরকে মোকাবেলা করবো।’

আওয়ামী লীগের আহমদ হোসেন বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশে আপনারা নিরাপদ। শেখ হাসিনার শাসনামলে আপনারা নিরাপদ। কিছু কিছু লোক শেখ হাসিনার আমলে ফিঙ্গারিং করে, পোস্ট করে আতঙ্ক সৃস্টি করে। যেখানেই ধর্মীয় সংঘাত হবে, সেখানেই আমরা বুক পেতে দেব, ধর্মীয় সংঘাত বাংলাদেশে হতে পারবে না।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭/নৃপেন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়