ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সংকটে আগের চুক্তি নিয়ে পদক্ষেপ চায় বিএনপি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গা সংকটে আগের চুক্তি নিয়ে পদক্ষেপ চায় বিএনপি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অতীতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে চুক্তি হয়েছিলো সেটিকে ভিত্তি ধরে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে যে সেফ জোনের কথা বলা হচ্ছে তা প্রত্যাখ্যান করে দলটির নেতারা বলেছেন, এই পদক্ষেপ হবে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের জন্য ‘বিপদজনক, ভয়ংকর ও স্বার্থবিরোধী।

রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোর-এ এক সেমিনারে তারা এই মতামত তুলে ধরেন।

‘মিয়ানমারের গণহত্যা ও বাংলাদেশের ভুমিকা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে বিএনপি। এতে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এম সেরাজুল ইসলাম।

সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটে বিএনপি জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাখ্যান করা দু:খজনক। এই সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হলে কুটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। আর এজন্য জাতীয় ঐক্যের দরকার। বিএনপি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ। কারণ জিয়াউর রহমান (৭৮ সালে) ও খালেদা জিয়ার সময়েও (২০০৫ সালে) রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিলো। তখন তাদের ফেরত পাঠিয়ে নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা হয়েছিলো। সেই দায়বদ্ধতা থেকে বিএনপি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে।’ 

জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া না দিয়ে ক্ষমতসীনরা দলীয় রাজনীতি করতে চাচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বেশ কিছু প্রস্তাবও রাখেন দলটির এই নীতি নির্ধারক। এগুলো হলো-

1    রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনে চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং অস্থায়ীভাবে থাকতে দিতে হবে। 
2    সংকট মোকাবেলা ও সমাধানে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান করছি।
3    যেসব রোহিঙ্গা বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছে তাদের শরনার্থী হিসেবে স্বীকৃত দিতে হবে।
4    মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের এসব নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। এজন্য যথাযথ আন্তর্জাতিক কুটনৈতিক কার্যক্রম গ্রহন করে মিয়ামানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
5    রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিএনপি সরকারের অভিজ্ঞতা নিয়ে অতীতের চুক্তির আলোকে সংকট নিরসনের আহ্বান।
6    প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে সেফ জোন সম্পর্কে যে কথা বলেছেন তা পরিস্কার করার আহ্বান। এটা হবে বাংলাদেশ  এবং রোহিঙ্গাদের জন্য বিপদজনক, ভয়ংকর ও স্বার্থ বিরোধী। সেফ জোন বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করছি। এ নিয়ে যেন আর কথা না হয়। সেফ জোন বিষয়টি ষড়যন্ত্রমুলক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করছি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকায় আন্তর্র্জাতিক মহলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা মিয়ানমারের গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদ গুরুত্ব দিয়ে এখানো রেজুলেশন নিতে পারে নি। আশা করি, তারা এমন পদক্ষেপ নেবে যাতে মানবিক বিপর্যয় সমাধান হয়।’

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মুল করতে গণহত্যা চালাচ্ছে। সমগ্র বিশ্ব সোচ্চার হলেও বাংলাদেশ সরকারের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। আজকের সেমিনারের মুল বিষয় হচ্ছে জনসমর্থন তৈরি করা।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই ধরণের জাতীয় ইস্যুতে সরকার জাতীয় ও বিশ্বকে একত্রিত করলেও এখন উল্টো আমাদের সরকারকে একত্রিত করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এখন কোন অবস্থানে আছে সেটি পরিস্কার নয়। লোক দেখানোর কারণে সরকার অবস্থান নিয়েছে।’

‘সেফ জোন’ প্রস্তাবের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সেফ জোন কোথাও কখনো কাজ করে না। কোনো দেশেই কাজ করে নি।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত-চীন-রাশিয়ার বিতর্কিত ভুমিকার দিকে ইঙ্গিত করে খসরু বলেন, ‘এই অঞ্চলের যারা বড় শক্তি তারা এক্সক্লুসিভ জাতির পক্ষে কাজ করছেন। যদি ক্ষমতাধররা এই কাজ করেন তবে এটি ভবিষ্যতে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করবে। এটি শুধু মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।’

মিয়ানমারের সঙ্গে হওয়া আগের চুক্তিগুলো ভিত্তি ধরে কাজ শুরু করা উচিত মন্তব্য করেন তিনি।

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘১৯৭৮, ’৯৩, ’০৫ সালেও এই সংকট দেখেছি। আন্তর্জাতিক চাপ দিয়ে বার্মিজ সরকারকে বোঝাতে হবে রোহিঙ্গারা যতই ক্ষুদ্র জাতিসত্তা¡ হোক না কেন তাদের নির্মূল করা যাবে না। এটা করা গেলে অনেকাংশে সংকট কমে যাবে। সেইফ জোনের কথা বলে ছাড় দিলে চলবে না।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দলটির নেতাদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম, এম মোরশেদ খান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, সুকোমল বড়–য়া, মুজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল উপস্থিত ছিলেন। সেমিনার সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ।

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, জাপান, কুয়েত, ইরান, ফ্রান্স, পাকিস্তান, সুইজারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডসহ মোট ১২টি দেশের উচ্চ পর্যায়ের কুটনীতিকরা অংশ নেন। তবে চীন, ভারত ও রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করিম, ব্যারিস্টার নওশাদ জামিল, এম মোর্শেদ খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক কবি আবদুল হাই শিকদার, এম আবদুল্লাহ, এস এম হাসান তালুকদার সেমিনারে অংশ নেন। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭/রেজা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়