ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নীতিমালা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৯, ১৭ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নীতিমালা

কেএমএ হাসনাত : সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নীতিমালা-২০১৭ চূড়ান্ত করেছে সরকার।

এ নীতিমালার আলোকে নতুন চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনের আগে বিষয়টি নিশ্চিত করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যমান চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর লাইসেন্স নবায়নের সময় এ শর্তটি পরিপালনের জন্য নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, সড়ক মহাসড়ক নির্মাণে কারিগরি ক্রুটি, যানবাহন চলাচলে অনিয়ম, চালকের অদক্ষতা, সড়ক মহাসড়কে অবৈধভাবে স্থাপিত হাটবাজার ও স্থাপনা, অবৈধ ও অযান্ত্রিক যানবাহনের উপস্থিতি, জনসচেতনার অভাব ও সড়ক-মহাসড়কে চলাচল উপযোগী নিরাপদ যানবাহনের অভাবে নাগরিকদের প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। এসব আহত ব্যক্তি যথা সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, বিকলাঙ্গ বা পঙ্গুত্ববরণ করেন এমন কি তাদের মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে।

সূত্র জানায়, এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির জরুরি চিকিৎসা আবশ্যক সে বিবেচনায জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি-২০১১ এ জরুরি চিকিৎসা সেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা ২০৩০ এর ৩.৬ সিদ্ধান্তে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা স্ট্র্যাটেজিক প্লান ২০১৪-১৬ এর অনুচ্ছেদ ৯(১) এ জরুরি স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশনের আদেশে ‘গুড সামারিটান’ নীতি অনুসরণ করে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরি স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।

নীতিমালায় হাসপাতাল বলতে কোনো সরকারি বা সরকার অনুমোদিত কোনো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিং হোম, মেডিক্যাল সেন্টার অথবা চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে স্থাপিত কোনো মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠান, তা যে নামেই হোক না কেন। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বলতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অধীনে নিবন্ধিত চিকিৎসক, মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, মিডওয়াইফ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেডিক্যাল বা নার্স, ছাত্র-ছাত্রী ও চিকিৎসা সহায়তাকারী অথবা স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, হাসপাতাল স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জনবল ও জরুরি বিভাগ স্থাপনের শর্ত আবশ্যকিভাবে প্রতিপালন করতে হবে। ইতিমধ্যে স্থাপিত হাসপাতালের অনুমতি/নিবন্ধন/লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে এ শর্ত পালন নিশ্চিত করতে হবে।

সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন রক্ষার্থে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নিকটতম হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে। আহত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। আইনি জটিলতার সম্ভাবনা বিবেচনায় চিকিৎসা প্রদানে দেরি করা যাবে না এবং আহত ব্যক্তির আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা না করে তাকে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। গুরুতর আহত ব্যক্তির প্রাথমিক স্ক্রিনিং করতে হবে।

সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা সুবিধা বা সক্ষমতা না থাকলে রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্যাবলী লিপিবদ্ধ করে উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। আহত ব্যক্তির চিকিৎসা প্রদানে সক্ষমতা সম্পন্ন হাসপতালে কোনো অবস্থাতেই রোগীর চিকিৎসা দেওয়া ছাড়া ফেরত বা স্থানান্তর করতে পারবে না।

সূত্র জানায়, আহত ব্যক্তির জরুরি শল্য চিকিৎসা প্রয়োজন হলে উপযুক্ত অভিভাবক বা আত্মীয়ের অনুপস্থিতিতে কোনো আত্মীয় বা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া প্রয়োজনীয় শল্য চিকিৎসার প্রস্তুতি গ্রহণ সাপেক্ষে চিকিৎসা দেওয়া যাবে। এমন জরুরি শল্য চিকিৎসার ফলে আহত ব্যক্তির জীবননাশের আশঙ্কা থাকলে বা জীবনহানি ঘটলে উক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো হাসপাতাল অবহেলা বা শৈথিল্য প্রদর্শন করলে তা অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো হাসপাতাল অবহেলা বা শৈথিল্য প্রদর্শন করলে নিবন্ধন/লাইসেন্স/অনুমতি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ উক্ত হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

নীতিমালায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে জরুরি চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা অন্য কোনো  ব্যক্তি কর্তৃক করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে চিকিৎসা সেবা প্রদানের আগে কোনো হয়রানি বা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কোনো পুলিশ স্টেশনে  প্রেরণ/আনয়ন করা যাবে না। একজন পুলিশ কর্মকর্তা কোনো প্রকার আইনি  প্রক্রিয়া শুরু করার আগে আহত ব্যক্তির প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পুলিশ কর্মকর্তা আহত ব্যক্তির জখমের প্রকৃতি এবং আঘাতের বিস্তারিত বিবরণ প্রদানের জন্য কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিকে কোনো প্রকার বল প্রয়োগ করতে পারবেন না।

সূত্র জানায়, আহত ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত হাসপাতালে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়া গেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপযুক্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করবেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এ নীতিমালার ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ অক্টোবর ২০১৭/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়