ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়’

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ২৪ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ বলেছেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়।’

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

আবদুর রউফ বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা কখনোই নিরপেক্ষ থাকে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে অবশ্যই নিরপেক্ষ কর্মকর্তা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে হলে সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হলো শৃঙ্খলা, যেটার বর্তমানে অভাব রয়েছে আমাদের দেশে।’

প্রাক্তন সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা ইসির কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সবাইকে নির্বাচনে আনতে ইসিকে এখনি উদ্যোগ নিতে হবে।’

এটিএম শামসুল হুদা বলেন, ‘বিদ্যমান আইন অভিজ্ঞতার আলোকে সংস্কারের দরকার। এজন্যে ইসির এখতিয়ার ও এখতিয়ারের বাইরের বিষয়গুলো দুইভাগে চিহ্নিত করতে হবে।’

এ সময় তিনি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, নির্বাচনকালীন সরকার, সীমানা পুনর্বিন্যাসে বৈষম্য দূরীকরণে সিট বাড়ানোর পাশাপাশি মফস্বলে কমানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

তিনি জানান, এসব বিষয়ের ব্যাপারে সংবিধান সংশোধনের দরকার। সব দলের সঙ্গে কথা বলে এসবের একটা স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত। যদিও মাত্র এক বছরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্বল্প সময়ে এর সমাধান হবে না বলেও মনে করেন তিনি।

শুধু সামনের নির্বাচন নয়, আগামীতে শক্তিশালী নির্বাচন ব্যবস্থার কথাই তুলে ধরেন সাবেক সিইসি। নির্বাচন এলেই খণ্ড খণ্ড বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার জন্যে তাগিদ দেন এটিএম শামসুল হুদা।

অবকাঠামোগত ও মানবসম্পদ উন্নয়নে নিজের আমলে নেওয়া উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি জানান, আগামীতে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে বাছাই করে কিছু লোককে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা যেতে পারে। এজন্য আরো প্রশিক্ষণের দরকার।

শামসুল হুদা জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করা ইসির একার পক্ষে সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু ইসির কাধে চাপিয়ে দিলে হবে না।

বিএনপির প্রতি তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার ভোটে না এলে মুশকিল রয়েছে। কেউ যেনো নির্বাচন না করার মনোবৃত্তি না রাখেন।’

তিনি বলেন, ‘পলিটিক্যাল পার্টিগুলোরও নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব আছে। গত নির্বাচনে যেমন কালচার অব বয়কট হয়েছে; সুতরাং এবার পলিটিক্যাল পার্টিগুলোকে সজাগ থাকতে হবে, সবাই যেন নির্বাচন করেন। সে মনোবৃত্তি যেন হয়।’

বিএনপি এবারও যদি ভোট বর্জন করে এবং তাদের ভোটে আনার বিষয়ে উদ্যোগ কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার যদি নির্বাচন বর্জন করে তবে এ ইলেকশনে মুশকিল আছে, এবার সব পার্টিকে অংশগ্রহণ করতে হবে। করাতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে পাক্তন এই সিইসি বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা যদি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর হবে না এটা সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এর পিঠাপিঠি ওই টাইম ফ্রেমে থেকে যদি আরেকটি নির্বাচন করতে হয় তাহলে ওইটা (তত্ত্বাবধায়ক) আর পারবেন না।’

নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি ইসির এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় বিদ্যমান পরিস্থিতিতেই ভোট করার কথা জানান শামসুল হুদা।

তিনি বলেন, ‘যে পরিস্থিতি এবং পরিবেশ, যে অবস্থা রয়েছে তা মেনে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। এখানে কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনাই হয় নি। এখানে আজ যারা ছিলেন তারা সবাই বুঝতে পেরেছে এটা নিয়ে এখানে আলাপ করে লাভ নেই, এটা ইসির কাজ না।’

এসব বিষয়কে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রাক্তন এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘শুধু নির্বাচন আসার আগেই তারা এগুলো বলবে কেন? এটা কন্টিনিউয়াস মুভমেন্ট করে করতে হবে।’

প্রাক্তন এ সিইসি জানান, সেনা মোতায়েন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। উইথ ইন দি এক্সিসটিং লিগ্যাল ফ্রেইম ওয়ার্ক তাদের নিয়োগ করতে হবে। নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরা রয়েছে, এ অবস্থায় আর্মিকে এ ক্ষমতা দিবেন কিনা এ প্রশ্ন রয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘যদি আর্মি কোথাও ডেপ্লয় করা হয়, আর্মির অফিসার যদি দেখেন এখানে অনিয়ম হচ্ছে তখন তো ব্যবস্থা নিতে পারেন।’

ইসির ওপর জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার বিষয়ে এটিএম শামসুল হুদা জানান, কমিশনকে অবশ্যই আস্থা অর্জন করতে হবে। ভোটে নিরাপত্তার বিষয়টি জোর দেওয়া হবে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’

বর্তমান ইসির চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কথা ও কাজে ফেয়ারনেস দেখাতে হবে, যাতে আস্থা নষ্ট না হয়। কিছুটা আস্থা তো হয়েছে, এটা ধারণ করতে হবে।’

প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন-মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, এম সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, মো. শাহনেওয়াজ। প্রাক্তন সচিবদের মধ্যে ছিলেন-আবদুল করিম, মনজুর হোসেন, হুমায়ুন কবীরসহ স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, পুলিশ ও মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন প্রাক্তন শীর্ষ কর্মকর্তা। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ২৬ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ১৬ জন উপস্থিত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ অক্টোবর ২০১৭/মিথুন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়