ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যেভাবে হবে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ২৫ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেভাবে হবে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উদযাপনে আজ শনিবার দেশজুড়ে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত এই শোভাযাত্রাকালে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশজুড়ে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার, আলোকচিত্র, প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।

যেভাবে হবে আনন্দ শোভাযাত্রা : আনন্দ শোভাযাত্রার কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে। শোভাযাত্রাটি কলাবাগান-সায়েন্সল্যাব হয়ে শাহবাগ গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করবে। পরে বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। স্বাগত বক্তব্যের পর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে ভাষণটি বাজানো হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লেজার শোর মাধ্যমে শেষ হবে আনন্দ শোভাযাত্রার এই সমাবেশ।

ঢাকার বাইরে সব জেলা ও উপজেলায়ও একই ধরনের আনন্দ শোভাযাত্রা আয়োজিত হবে। সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের মধ্য দিয়ে জেলা-উপজেলায় এই কর্মসূচি শুরু হবে। সব জায়গায় সুবিধাজনক সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আজ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা আয়োজিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিকেল ৩টায় আনন্দ শোভাযাত্রা আয়োজিত হবে। সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির ব্যানারেও আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে এসব শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিলিত হবে।

এদিকে, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনেও সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ত করে একই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এসব শোভাযাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিশু-কিশোর, ক্রীড়া সংগঠক ও খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক, শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, এনজিও, স্কাউটস ও রোভার, পুলিশের সুসজ্জিত ঘোড়া, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুসজ্জিত বাদক দল, সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি এবং সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেবেন।

আনন্দ শোভযাত্রার প্রস্তুতি : সারা দেশের এই আনন্দ শোভাযাত্রার সর্বাত্মক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সরকারিভাবে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোরম সাজসজ্জা করা হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মনোরম আলোকসজ্জাও করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম শুক্রবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি ও বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরেছেন। সর্বস্তরের মানুষকে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সংগঠন সোহরাওয়ার্দীতে মিলিত হবেন। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে ঢাকা শহরকে প্রাণচাঞ্চল্যমুখর করা হবে।’

তিনি জানান, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শোভাযাত্রা সহকারে উপজেলা পর্যায়ে সবাই মিলিত হবেন। জেলা শহরে বিভিন্ন স্থান থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে এক জায়গায় মিলিত হয়ে অনুষ্ঠান হবে।

সরকারিভাবে কেন এই আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যখন ঘোষণা করা হয়েছিল, তখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুষ্ঠান হয়েছে। একইভাবে এটাও করা হচ্ছে। এটা জাতির জন্য বিশাল অর্জন। দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্যই এই অর্জন। এখানে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই।’

শোভাযাত্রা ও সমাবেশ আয়োজনে জননিরাপত্তা বিভাগ সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করছি কোনো অসুবিধা হবে না।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

ডিএমপির পক্ষ থেকে শোভাযাত্রার রুট প্রকাশ : রাজধানীতে আনন্দ শোভাযাত্রাকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগ প্রেরিত রুট ম্যাপ দেখে চলাচল ও ট্রাফিক বিভাগকে সহযোগিতা করার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে। শুক্রবার ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ করা হয়।

এতে বলা হয়, আনন্দ শোভাযাত্রার রুট হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর থেকে শুরু করে মিরপুর রোডের রাসেল স্কয়ার ক্রসিং হয়ে কলাবাগান দিয়ে সায়েন্সল্যাব বামে মোড় নিয়ে বাটা সিগন্যাল-কাঁটাবন ক্রসিং হয়ে শাহবাগ ডানে মোড় নিয়ে ছবির হাট হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত। যেসব গেট ব্যবহার করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করা যাবে, সেগুলো হচ্ছে- ছবির হাট গেট (চারুকলার বিপরীতে), টিএসসি গেট, বাংলা একাডেমির বিপরীতের গেট, কালী মন্দির গেট এবং তিন নেতার মাজার গেট।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ অক্টোবর ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেসকো) ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে (ওয়াল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) বিশ্বে প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। প্যারিসে ইউনেসকোর প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক ইরিনা বুকোভা এই ঘোষণা দেন। বর্তমানে ম্যামোরি অব ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে সব মহাদেশগুলো থেকে ৪২৭টি প্রামাণ্য দলিল ও সংগ্রহ তালিকাভুক্ত রয়েছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ২৫ নভেম্বর এই স্বীকৃতি উদযাপনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব সম্পর্কে দেশের জনগণ বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অবহিত করতে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই স্বীকৃতি উদযাপনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালা উদযাপন করা হয়। এ ছাড়া নাগরিক কমিটির ব্যানারে ১৮ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশ আয়োজিত হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ নভেম্বর ২০১৭/হাসান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়