ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সরকারি শেয়ার ছাড়তে কর্মপরিকল্পনার নির্দেশ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সরকারি শেয়ার ছাড়তে কর্মপরিকল্পনার নির্দেশ

কেএমএ হাসনাত : আগামী ১৫ জুনের মধ্যে সরকারি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়তে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সরকারি ১৫ কোম্পানির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

সরকারি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামল থেকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। বার বার সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পরও এখনো কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ার বাজারে ছাড়তে সক্ষম হয়নি। এসব কোম্পানিকে আবার সময় বেঁধে দেওয়া হলো। আগামী জুনের মধ্যে সরকারি ১৫ কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়তে হবে। এ বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে  সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে সরকারি ১৫ কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনা সম্ভব হচ্ছে না। নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, এই কোম্পানিগুলোর সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন করে লাভজনক পর্যায়ে নিতে হবে। এরপর এগুলো শেয়ার পুঁজিবাজারে অবমুক্ত করতে হবে। এজন্য দফায় দফায় সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আট বছর পেরিয়ে যাবার পরও এই কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়া যায়নি। শেয়ার না ছাড়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর অনিহা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করা হয়েছে।

বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের নয়টি, বিদ্যুৎ বিভাগের চারটি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দুটি কোম্পানি নিয়ে আলোচনা হয়। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের আওতাধীন- লিক্যুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল), বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিডেট, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডডি সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং রুপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানিগুলো হলো-পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং বিটিসিএল।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রস্তুতকৃত বৈঠকের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানিগুলো মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে না। সেগুলো সম্পদ পুনর্মূল্যায়নসহ মুনাফামুখী করার জন্য পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। এলক্ষ্যে দেশি-বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করে লাভজনক না হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে অগ্রসর হতে হবে। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কোম্পানিগুলো মুনাফাজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং পুঁজিবাজারে আসতে পারবে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে নেওয়া সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিল-জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের আওতাধীন নয়টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হতে হবে। তবে এজন্য পরামর্শক নিয়োগ করে কোম্পানিগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে। পরামর্শকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করে কোম্পানিগুলোকে লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। এসব কাজ  চলতি ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়।

অন্যদিকে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পক্ষ থেকে শেয়ার না ছাড়ার পিছনে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, ‘এই প্রতিষ্ঠানের গড় মার্জিন কমানোর ফলে কোম্পানির নিট প্রফিটের ওপর ঋণাত্মক প্রভাব পড়েছে। এক্ষেত্রে আরো ১০ শতাংশ শেয়ার (ইতোমধ্যে তিতাসের ১০ ভাগ শেয়ার বাজারে আছে) অফলোড করা হলে শেয়ারের বাজারমূল্য আরো হ্রাস পাবে। ফলে সর্বাধিক মূল্যপ্রাপ্তির সম্ভাবনা না থাকায় সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বর্তমান শেয়ারহোল্ডারগণও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।’

সূত্র জানায়, বৈঠকে এই কোম্পানিগুলোকে দ্রুত সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করে শেয়ার ছাড়ার জন্য বলা হয়েছে।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ডেসকোর অতিরিক্ত আরো ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোডের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী ২০১০ সালে ডিসেম্বরে প্রথমবার নির্দেশনা দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি শেয়ার অফলোড করতে না পারায় ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট আবারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ২০১১ সালের ২১ জুন ডিএসইকে চিঠি দেওয়া হলেও তার জবাব না পেয়ে পুনরায় এ ব্যাপারে একই বছর ২১ অক্টোবর চিঠি দেওয়া হলেও তা আর কার্যকর হয়নি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়