ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভয়ের নাম ওই হাথুরুসিংহেই

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভয়ের নাম ওই হাথুরুসিংহেই

ক্রীড়া প্রতিবেদক : সাড়ে তিন বছর। অনেক সময়, অনেকগুলো মুহূর্ত। পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে খুব কাছ থেকে এ সময়টায় দেখেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ক্রিকেটারদের নাড়ি-নক্ষত্র সবই তার জানা। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে সাফল্য পাওয়াটা অনেকটাই প্রত্যাশিত। সেটাই যেন হলো শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশ সফরে।

ঘরের মাঠে বাংলাদেশের একের পর এক বাজে পরাজয়ে, জয় হয়েছে হাথুরুসিংহের শিষ্যদের। দল যতবার জিতেছে, তত চওড়া হয়েছে হাথুরুসিংহের মুখের হাসি। ময়নাতদন্তে বাংলাদেশের ব্যর্থতার কারণগুলোর শীর্ষে থাকবে ব্যাট-বলের পারফরম্যান্স। কিন্তু আড়ালে রয়ে যাবে হাথুরুসিংহের ভয়! সিরিজ শুরুর আগে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে দলের প্রত্যেকেই বলেছিলেন, ‘হাথুরুসিংহে বড় কোনো ফ্যাক্টর হবেন না।’

কিন্তু সিরিজের শেষ দিকে হাথুরুসিংহের নামই বারবার উচ্চারিত হয়েছে। দলের অনেকেই মনে করেন, হাথুরুসিংহে সাফল্যের পথে বড় কাঁটা হয়ে ছিল। তবে হাথুরুসিংহে যতটা না মাঠে ছিলেন, তার থেকেও বেশি ছিলেন ক্রিকেটারদের মস্তিস্কে, ভয়ের কারণ হয়ে। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন তো সরাসরি বলেও দিয়েছিলেন সে কথা, ‘হাথুরুসিংহে মনে হয় বেশি ছিল ছেলেদের মাথায়। ওকে নিয়ে একটা নেতিবাচক মাইন্ডসেট ছিল।’



নেতিবাচক চিন্তা সময় নিয়ে ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। কারণ প্রথম ম্যাচে তো জয় পেয়েছিল স্বাগতিকরা। দায়িত্ব নেওয়ার শুরুর সময়টায় হাথুরুসিংহে এক করতে পারেননি শ্রীলঙ্কা দলকে। তাই বাংলাদেশের পাশাপাশি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও ম্যাচ হারে নড়বড়ে শ্রীলঙ্কা। এরপরই দলটি ঘুরে দাঁড়ায়। প্রথমে জিম্বাবুয়েকে, পরে বাংলাদেশকে দুবার হারিয়ে জিতে নেয় ত্রিদেশীয় সিরিজ। এরপর তো ধরাছোঁয়ার বাইরে হাথুরুসিংহে, শ্রীলঙ্কা। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতে হেসেখেলে। তাইতো ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষে নিজের টুইটারে হাথুরুসিংহে টুইট করেছিলেন, ‘আমি কীভাবে পড়ে যাচ্ছি সেটা বিষয় না। আমি কতটুকু শক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’

হাথুরুসিংহের শিষ্যরা উঠে দাঁড়িয়ে দেখিয়েছে কীভাবে জিততে হয়। ঠিক যেভাবে মাশরাফি-সাকিবদের টেনে তুলেছিলেন। হারতে থাকা বাংলাদেশ হাথুরুসিংহের আমলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে শেখে। তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে না পারলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশকে এক করে সাফল্য এনে দিয়েছেন। তার হাত ধরে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, এশিয়া কাপ ফাইনাল ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। আর ঘরের মাঠে সব সাফল্যের রূপকারও তো ওই হাথুরুসিংহেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, মাঠ ও মাঠের বাইরের পরিকল্পনায় সফল বলেই ক্রিকেটারদের ভরসার পাত্র হয়ে ছিলেন হাথুরুসিংহে।



তাই তাকে প্রতিপক্ষ দলে পেয়ে পথ হারায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার চেয়েও বাংলাদেশের বড় প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন হাথুরুসিংহে। ওই ভয়েই কাবু বাংলাদেশ। পুরো বাংলাদেশ শিবির হয়ে যায় এলোমেলো। মাঠের পারফরম্যান্স যেন পরিস্কার বলে দিচ্ছিল ড্রেসিং রুমের পরিবেশটাও গম্ভীর, অসুখী! পাশাপাশি ত্রিদেশীয় সিরিজের পর সাকিব আল হাসান না থাকায় যেন বাংলাদেশ দল হয়ে যায় অস্তিত্বশূন্য! দল গঠনে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিল পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বাংলাদেশ।

সামনেই নিদাহাস ট্রফি। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলবে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পারেনি বাংলাদেশ। ওদের মাটিতে যে আরো কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হাথুরুসিংহে আরো শক্তিশালী হয়ে চালাবে আক্রমণ! এ ছাড়া বিরাট কোহলির ভারত তো আছেই। ঠিক এ মুহূর্তে নতুন করে সাজাতে হবে বাংলাদেশ দলকে। গড়তে হবে নতুন টি-টোয়েন্টি দল। ভুলগুলো শোধরাতে হবে। পাশাপাশি দূর করতে হবে হাথুরুসিংহে নামক ভয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ইয়াসিন/আমিনুল/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়