‘প্রশ্নফাঁস সরকার সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দিয়েছে’
নিজস্ব প্রতিবেদক, সংসদ থেকে : ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহামারী কেবল পরীক্ষার্থী নয়, অভিভাবকদের মনেও সরকার সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দিয়েছে। শতভাগ পাস আর জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বরই পাচ্ছে না।’
সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় এসব কথা বলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
মন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু দুভার্গ্যজনক ঘটনা আমাদের সকল অর্জনকেই ধুলিস্যাৎ করে দিচ্ছে। ২০১০ সালে আমরা অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করি। এই সরকারের প্রথম থেকেই বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে উপবৃত্তি ছাড়াও উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণার জন্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দেশে বিপুল সংখ্যক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ নাই সেসব উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজকে সরকারি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মতোই তার কন্যা ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ণ করা হচ্ছে। এমনকি কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠানে কী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে তা কারো বিশেষ অজানা নয়। আমার সাবেক ড্রাইভারের ভাইকে আমার কাছে পাঠিয়েছে কর্মসংস্থানের জন্য। মাদ্রাসায় পড়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসা করে জানলাম, নামাজের নিয়মকানুন দূরে থাক, সুরা ফাতেহাও সে জানে না। এমনিতেই এই বহুমুখী শিক্ষা আমাদের সমাজ সংস্কৃতিকে বিভক্ত করছে। তার উপর যা তৈরি করা হচ্ছে তাতে তারা হয় মাদকাসক্ত অথবা জঙ্গিতে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। সরকারকে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মূলধন জোগাতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির টাকা ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না আমি জানি না। প্রতিনিয়ত বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। এই পাচারকৃত অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের কয়েকটি বাজেট হতে পারে। দুর্নীতির জন্য খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হয়েছে। এটা বিএনপি-জামাত জোট শাসনের সঙ্গে তারেকের দুর্নীতির ক্ষুদ্রাংশ। অনেকে এর পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি খুঁজছে। ১৪ দলের ২৩ দফায় দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তাই পূরণের সূচনা হল মাত্র। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নকে বিচারের আওতায় আনা ও তাকে পরিণতিতে নিয়ে যাওয়া জরুরি। খালেদা জিয়ার এই মামলা শেষ করতে ১০ বছর লেগেছে। এই দীর্ঘসূত্রতা জনমনের আস্থাকে কমিয়ে দেয়। জনগণ আশা করে, এই ধারা অব্যাহত থাকবে। কেবল দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলেই জাতীয় প্রবৃদ্ধি আরো ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। জনগণ আশা করে, দুদক ব্যাংক লুট, জালিয়াতি, অর্থ পাচার- এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতির তদন্ত করবে, আইনের আওতায় আনবে। পাকিস্তান যদি পানামা পেপারস্-প্যারাডাইস পেপারস নিয়ে তদন্ত করতে পারে, আমরা পারছি না কেন?
তিনি আরো বলেন, এটা নির্বাচনের বছর। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, গ্যাস সংকট, পানি সংকট- এসব দৈনন্দিন বিষয় মানুষকে আলোড়িত করে। আতঙ্কিত করে খুন, ধর্ষণ, গুমের ঘটনাবলী। মানুষ বিরক্ত হয় দলবাজি, দখলবাজি, অন্তর্দলীয় কোন্দলে। এক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে। ভারতে অটল বিহারী বাজপেয়ির শাইনিং ইন্ডিয়া এসব ইস্যুতে মুখ থুবরে পড়েছিল। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা-ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি তাদের পরাজয় ডেকে এনেছিল। বাংলাদেশে সে অবস্থা নেই। কিন্তু সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বিস্তার, সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর নিপীড়ন জনমনে যে অস্বস্তি তৈরি করে তাকে বিবেচনায় না নিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিপুল পরিশ্রম, তার মেধা, সততা, যোগ্যতার প্রতি জনগণের বিপুল আস্থা-বিশ্বাসের পরও সংশয়-সংকট তৈরি হবে। এসবের প্রতিবিধানে এখনই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী শক্তিকে, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ধারকদের রুখে দিতে পেরেছি। কিন্তু নিঃশেষ করতে পারি নাই। তারা প্রতিআক্রমণ করতে সদা তৎপর। এই সরকার তাদের কলিজায় হাত দিয়েছে। যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের তারা বিদেশি দূতাবাসে পুনর্বাসিত করেছিল, ইনডেমনিটি আইনে তাদের বিচার বন্ধ করে রেখেছিল, তাদের বিচার করে ফাঁসি দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে তারা জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের বিচার হয়েছে। এখন খালেদা-তারেকের দুর্নীতি, হত্যা-হামলার বিচার হয়েছে-হচ্ছে। সুতরাং এরা মরিয়া। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা চেষ্টা করেছিল। সরকারের দৃঢ়তা, জনগণের প্রতিরোধে তা প্রতিরুদ্ধ হয়েছে। এবার সেই প্রতিআক্রমণের মোকাবিলায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির, উন্নয়নের শক্তির দৃঢ় ঐক্য ছাড়া বিকল্প নাই। নির্বাচনে-রাজপথের লড়াইয়ে ১৪ দলের সেই ঐক্যকে আরো কার্যকর রূপ দিতে হবে। ইউনাইটেড ইউ স্ট্যান্ড, ডিভাইডেড উই ফল। জনগণের শক্তির উপর বিশ্বাস রেখে সেই ঐক্য নিয়ে ২০১৮-এর বিজয় মাসে নতুন বিজয় নিশ্চিত হবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/আসাদ/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন