ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন একতরফা, ভিত্তিহীন’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০০, ২২ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন একতরফা, ভিত্তিহীন’

সচিবালয় প্রতিবেদক : ‘সরকারের কোনো ভাষ্য না নিয়ে একতরফাভাবে তৈরি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার প্রতিবেদন মনগড়া, ভিত্তিহীন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সদ্য প্রকাশিত এ প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে  মতবিনিময়কালে  তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার একতরফাভাবে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর বার্ষিক প্রতিবেদন দিয়ে আসছে। এটা তাদের একতরফা পদক্ষেপ। যেসব দেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবেদন দেয়, সৌজন্যমূলকভাবেও সেসব দেশের সরকারের বক্তব্য বা মতামত নেয় না। এটি কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।’

তিনি আরো বলেন, ‘কোনো দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির সময় সে দেশের সরকারের ভাষ্য না নেওয়া কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। বাংলাদেশের ওপর এ প্রতিবেদন তৈরির আগে তথ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নেওয়া উচিত ছিল। তা না করে এ ধরনের মনগড়া ভিত্তিহীন প্রতিবেদন আমরা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি।’

‘এ রিপোর্টে যে বেসরকারি সংস্থাগুলোর বরাত দেওয়া হয়েছে তাদের বক্তব্যও পরষ্পরবিরোধী’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এদের মধ্যে একটির নাম ‘অধিকার’। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশ শেষে তারা হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেওয়ার পর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছিল। ‘অধিকার’ এনজিও তালিকা দিতে ব্যর্থ হয়। এমনকি পরবর্তীতে তারা যেসব ব্যক্তি নিখোঁজ এবং নিহত হয়েছিল বলে দাবি করেছিল, তাদেরকেও জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এমন এনজিওর বরাতে তৈরি প্রতিবেদন সঠিক হওয়ার কথা নয়।’

ইনু বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যম খুবই সরব এবং নিঃসংকোচে মতপ্রকাশ করে বলে রিপোর্টে স্বীকার করে নেওয়ার পরেও বলা হয়েছে সরকারবিরোধী বক্তব্যের জন্য তাদের সঙ্গে সরকারের নেতিবাচক সম্পর্ক, যে অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সমালোচনার জন্য কোনো গণমাধ্যমের সাথে সরকারে নেতিবাচক আচরণের ঘটনা নেই। এদেশের গণমাধ্যম জীবন্ত এবং সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কথা বলার অধিকারের ওপর কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই। সাংবাদিক কেউ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন বা কেউ দমন-পীড়নের আতংকে আছেন, এমন অভিযোগও নেই’।

গণমাধ্যমের লাইসেন্স প্রদানের বিষয় ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রের লাইসেন্স আইন অনুযায়ী প্রকৃত উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়।’

এনজিও হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সভা করার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে, এমন অভিযোগ খণ্ডন করে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘যে কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠনকে সভা-সমাবেশ করতে হলে বিশ্বের সব দেশের মতো এখানেও অনুমতি নিতে হয়। আর জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল। কোনো এনজিও না।’

তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন। সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজেই নিজেকে বিতর্কিত করে অবসর নিয়েছেন। তার বিষয়ে মার্কিন ওকালতি দুঃখজনক।’

প্রতিবেদনে উল্লিখিত বিচারকদের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এ দেশের আইনে ঘুষ খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই, খেলে শাস্তি হয়। মাননীয় বিচারকবৃন্দ এবং আদালতের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ এলে তদন্ত হয়। প্রতিকার হয়। মার্কিন প্রতিবেদনের এ ঢালাও মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ খণ্ডন করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দায়মুক্তির বিধান বাংলাদেশে নেই। অতীতের সামরিক-স্বৈরশাসন আমলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও আরো কিছু অপরাধের জন্য দায়ীদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনার সরকার সে দায়মুক্তির বিধান বাতিল করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। ‘বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তদন্ত হয়, শাস্তি হয়, কারো দায়মুক্তি নেই।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ এপ্রিল ২০১৮/নঈমুদ্দীন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়