সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহঋণ নীতিমালা হচ্ছে

কেএমএ হাসনাত : সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১০ শতাংশ সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ নেওয়ার বিধান রেখে একটি নীতিমালা হচ্ছে। এই ১০ শতাংশ সুদের ৫ শতাংশ সরকার এবং বাকি ৫ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা পরিশোধ করবে। নীতিমালার আওতায় সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে। ২০ বছর মেয়াদে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১৮’-এর খসড়া তৈরি করেছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ-এর বার্ষিক সম্মেলন শেষে দেশে ফেরার পর নীতিমালার খসড়া চুড়ান্ত হবে। তার আগে বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার অর্থ সচিব মোহম্মদ মুসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়ার পর নীতিমালাটি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, সরকারি কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণে ঋণের মাধ্যমে অর্থের জোগান দিতে এই নীতিমালা করা হলেও সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও কার্যালয়গুলোতে স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মচারীরাও এ সুবিধা পাবেন।

জানা গেছে, ১৯৮২ সালে প্রথম সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা চালু করা হয়। চাকরিজীবীদের তখনকার মূল বেতনের ৪৮ মাসের সমপরিমাণ হিসাব করে এক লাখ ২০ হাজার টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছিল, যা ৪৮টি সমান কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। এরপর চাকরিজীবীদের বেতন বাড়লেও এই ঋণসীমা বাড়েনি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এটি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

সূত্র জানায়, ১০ শতাংশ সরল সুদে রাষ্ট্রায়ত্ত যে কোনো ব্যাংক ও বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) থেকে এই ঋণ নেওয়া যাবে। এই ১০ শতাংশ সুদের মধ্যে ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবে সরকার। বাকি ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবেন ঋণগ্রহীতা চাকরিজীবী। অর্থাৎ সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ চালু হতে যাচ্ছে। নতুন এই ঋণ সুবিধা ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

সূত্র জানায়, নীতিমালার আওতায় ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন উপসচিব থেকে সচিব পদমর্যাদা বা জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তারা। তারা ২০ বছর মেয়াদে এই ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন। তবে সর্বনিম্ন ১৮ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ নিতে পারবেন। সর্বোচ্চ ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত এই ঋণ নেওয়া যাবে।

নতুন নীতিমালার আওতায় সরকারের প্রায় ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণের সুবিধা নিতে পারবেন। এককভাবে এই ঋণ সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি নীতিমালায় আবাসিক বাড়ি করার জন্য গ্রুপভিত্তিক ঋণও নেওয়া যাবে। ফ্ল্যাট কেনার জন্যও এই ঋণ সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে সেটা হতে হবে সম্পূর্ণ তৈরি ফ্ল্যাট।

ঋণের সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেতন স্কেল অনুযায়ী সর্বোচ্চ যে সিলিং সরকার নির্ধারণ করে দেবে, সেটিও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের যথাযথ পদ্ধতিতে যে পরিমাণ ঋণ সুবিধা নির্ধারণ করবে, তার মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ ঋণ পাবেন। ফ্ল্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার জন্য ডেট ইক্যুইটি রেশিও হবে ৯০ঃ১০। অর্থাৎ ফ্ল্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য কেউ নিজস্ব উদ্যোগে ১০ টাকা খরচ করলে তিনি ৯০ টাকা ঋণ পাবেন। ঋণের সুদ সম্পর্কে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এটি হবে সরল সুদ এবং সুদের ওপর কোনো সুদ আদায় করা হবে না। ঋণগ্রহীতা কর্মচারী ব্যাংক রেটের সমহারে সুদ পরিশোধ করবেন। সুদের অবশিষ্ট অর্থ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ