ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘চোরাচালান কাপড়ের বড় উৎস ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হাট’

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৯, ২৪ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘চোরাচালান কাপড়ের বড় উৎস ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হাট’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: চোরাচালানকৃত কাপড়ের অন্যতম প্রধান উৎস উঠেছে ভারত-বাংলাদেশের ১৭টি সীমান্ত হাট। বছরে প্রতিটি হাট থেকে প্রায় ৮৭ লাখ মিটার কাপড় ও ৮ হাজার থ্রিপিস কোনো রকম শুল্ক বা ভ্যাট ছাড়াই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ফলে দেশীয় তাঁতী ও কাপড় ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত তাদের বাজার হারাচ্ছে বলে দাবি করেন দেশীয় তাঁত ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় এনবিআর-এর সম্মেলন কক্ষে তৈরি পোশাক খাত, তাঁত ও বস্ত্র উৎপাদনকারী বিভিন্ন সংগঠনের সাথে প্রাক-বাজেট আলোচনায় ব্যবসায়ীরা এ দাবি করন।

সভায় টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক শেখ আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় আছি।  এক সময় আমরা অনেক আমদানি শুল্ক দিতে পারতাম। এখন বন্ড সুবিধায় অনেকে সরাসরি ফেব্রিক্স বা থান কাপড় আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়। এর ফলে আমরা যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী মার খেয়ে যাচ্ছি। অন্যদিকে আমরা যারা লোকালভাবে ফেব্রিক্স বা কাপড় উৎপাদন করি কিন্তু রপ্তানি করি না, তাদের পণ্যের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে। তাই বন্ড সুবিধায় ফেব্রিক্স আমদানি বন্ধ করার পাশপাশি ভ্যাট মওকুফ করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া কাপড় আমদানিতে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করা দরকার।’

সীমান্ত হাটের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সামীন্ত হাটের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে কাপড় বাংলাদেশে অবৈধ উপায়ে প্রবেশ করে। এ বিষয়েও আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

এ সময় বিটিএমইএর পরিচালক খোরশেদ আলমসহ নেতৃবৃন্দ বলেন, বছরে এক একটি সীমান্ত হাট দিয়ে ৮৭ লাখ মিটার কাপড় ও ৮ হাজার থ্রিপিস বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে। এর ফলে পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প মার খাচ্ছে। এর কোনো মনিটরিং নেই।

অন্যদিকে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘এটা সত্য যে সীমান্ত হাট চোরাচালানকৃত কাপড়সহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্যের বাজারে পরিণত হয়েছে। এর জন্য কঠোর মনিটরিং দরকার। এনবিআরের শুল্ক স্টেশনগুলোকে পণ্যের ক্যাটাগারি অনুযায়ী মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।’

অবশ্য সীমান্ত হাটে চোরাচালানের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) রোজাউল হাসান।

সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘সীমান্ত হাটের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু আজ আপনাদের মুখে বিষয়টি জানলাম তাই এ বিষয়ে আমাদের দিক থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবগত করবেন।’

এদিকে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বন্ড সুবিধা বন্ধের পক্ষে বিপক্ষে বাহবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন নেতারা। সভায় ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সামসুল আলম বলেন, ‘দেশে বন্ডের অপব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। বন্ডের অপব্যবহারে কারণে আমাদের বস্ত্র শিল্প চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা হারাচ্ছে দেশ। তাই বন্ড সুবিধা বন্ধ করা অথবা এর অপব্যবহার বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’

এ সময় বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘কোথায় হচ্ছে, আপনারা ধরিয়ে দিন। আমরা তার মেম্বারশিপ বাতিল করাসহ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আমরা বন্ডের অপব্যবহার বন্ধ চাই। রাজস্বের স্বার্থে এটি বন্ধ হওয়া দরকার। বন্ডের অপব্যবহারের কারণে কেউ জেলে গেলে, আমরা তাকে ছাড়াতে কোনো তদবিরে আসব না। আর অস্তিত্বহীন কারখানার বন্ড লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’

এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের স্বার্থে বন্ড সুবিধা বন্ধ করা যাবে না। তবে বন্ডের অপব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এ জন্য অপব্যবহার রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

সভায় বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমএ)-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামস-উজ জোহা বলেন, ‘পাট পণ্যের রপ্তানি ভুর্তকি করমুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। আবার পাটপণ্য প্রস্তুতে টেলিফোন, পণ্য পরিবহন, জাহাজীকরণসহ এ শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য সর্বক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফের দাবি জানাচ্ছি।’

আলোচনায় প্লাস্টিক শিল্পের বিকাশে এর কাচাঁমালের আমদানি শুল্ক হ্রাসের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের নেতারা।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৮/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়