ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভাতা বিতরণ চালু করলেন প্রধানমন্ত্রী

সাইফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৭ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভাতা বিতরণ চালু করলেন প্রধানমন্ত্রী

রাইজিংবিডি ডেস্ক : সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতাসমূহ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে (জিটুপি-গভর্নমেন্ট টু পারসন) বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফান্সের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

এই কর্মসূচির আওতায় প্রবীণ, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বিধবাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬৭ লাখ ভাতাপ্রাপ্ত মানুষ প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইল ফোনে এসএসএম পাওয়ার পর সরাসরি ব্যাংক থেকে তাদের প্রাপ্ত ভাতা তুলতে পারবেন।

সরকার চলতি অর্থবছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তবলয় কর্মসূচির আওতায় ৪ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বেদে, হরিজন, চা শ্রমিক এবং দূরোরোগ্য ব্যাধি যেমন ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সমস্যায় আক্রান্তদের সহযোগিতার জন্য বরাদ্দ করেছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান প্রকল্পের অর্থ প্রদান সম্পর্কিত একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ এবং চাপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় আরো ৭টি জেলা অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুত্ত ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো। প্রতিটি গ্রামে মানুষ শহরের মতো সুবিধা পাবে।

তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি ভাতা দেওয়ার পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাতে দরিদ্র মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তাদের সম্পদ ও টাকা পয়সা কেউ কেড়ে নিতে না পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আগে ভাতার টাকা ব্যাংক ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে যেত। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ আমরা সেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে যারা যা প্রাপ্য তার কাছেই পৌঁছে দেব। কেউ আর কমিশন খেতে পারবে না। সরাসরি টাকা আপনার হাতে পৌঁছে যাবে।

তিনি বলেন, টাকা প্রাপকদের নামের একটি ডাটাবেজ করে রাখা হবে, যাতে কেউ তাদের নিয়ে কোনরকম খেলা খেলতে না পারেন। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তির কাছে অর্থাৎ ‘গভর্নমেন্ট টু পারসন’ এই ভাতা পৌঁছে যাবে।

সরকারি ভাতার ওপর নির্ভর করে কর্মবিমুখ না হতে হতদরিদ্রদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায় সেজন্য আমরা সহযোগিতা দিচ্ছি। পুরো সংসারের দায়িত্ব আমরা নেব না। মানুষ যাতে পুরোপুরি ভাতার ওপর নিভর্রশীল না হয়, কর্মবিমুখ না হয়।

তিনি বলেন, এমন পরিমাণে ভাতা দেওয়া হবে যা দিয়ে আপনি খাদ্য কিনতে পারবেন। কিন্তু আপনাকে কাজ করতে হবে। শুধু ভাতার ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। যারা কর্মক্ষম তারা কাজ করবেন।

তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতের আমলে দুঃস্থ মানুষ সেবার বদলে বারবার নিগৃহীত হয়েছে। তখন সামাজিক ভাতা ১০০ টাকা দিলে মাঝখান থেকে ৫/১০ টাকা নিয়ে নিতো। এখানেও দুর্নীতি ছিল। এমন ব্যবস্থা চালু করে যাচ্ছি যাতে মানুষকে আর ভোগান্তি পোহাতে না হয়।

সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতায় ২০০৫ সালে ১৩ শতাংশ হতদরিদ্র মানুষ থাকলেও, ২০১৮ সালে ২৮ শতাংশ প্রান্তিক মানুষ এখন সুবিধা পাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, ‘জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আবার ক্ষমতায় আসবো। না হলে আসবো না। এটা আল্লাহর ওপরও নির্ভর করে, তিনি যদি চান। তবে, তার আগেই আমি আমার কাজগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাই।’ ‘মানুষের সেবা করাই আমাদের কাজ, মানুষের পাশে থাকাই আমাদের কাজ,’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন শেষে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশে ফেরার সময়কার স্মৃতিচারণ করে বলেন, তখন সারা দেশে ছুটে বেড়িয়েছি। দেখেছি হাড্ডিসার, কঙ্কালসার মানুষ ক্ষুধার তাড়নায়, চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মুত্যুবরণ করছে। এসব দুর্ভাগা মানুষের জন্যই স্বাধীনতা, তাদের কল্যাণের জন্যই ছিল আমার বাবার (বঙ্গবন্ধু) রাজনীতি। তাদের জন্যই তিনি সারাজীবন জেল, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করে গেছেন।

দেশেকে ভালবাসা, দেশের মানুষকে ভালবাসার শিক্ষা তিনি বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য এদেশের মানুষের জন্য কিছু করা। তিনি সুষ্ঠুভাবে দেশসেবার জন্য সকলের দোয়া প্রত্যাশা করেন।

নরসিংদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোপালগঞ্জের প্রান্তিক এলাকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উপকারভোগীদের ব্যাংক হিসাবে টাকা পৌঁছার খবর তাদের মোবাইল ফোনে চলে যাবে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তারা টাকা তুলতে পারবেন। যেসব দুঃস্থ মানুষ টাকা আনতে ব্যাংকে বা ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারবেন না, তারা সমাজকল্যাণ অফিসকে জানালে বাড়িতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

ভাতা ভোগীরা মধুমতি, এনআরবি, ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

তথ্যসূত্র : বাসস



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুলাই ২০১৮/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়