ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

'সব ভুলকেই অনিচ্ছাকৃত ভুল বলার সুযোগ নেই'

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
'সব ভুলকেই অনিচ্ছাকৃত ভুল বলার সুযোগ নেই'

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ভুল স্বীকার করা লজ্জার কোনো বিষয় নয়। ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত ভুলের ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। এটা অনুধাবন করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তাই সব ভুলকেই অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমের জেলে যাওয়া প্রসঙ্গ টেনে দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘ভুল স্বীকার করা লজ্জার কোনো বিষয় নয়। তবে ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এটা করা না হলে অবশ্যই লজ্জার। অনিচ্ছাকৃত ভুল এবং ইচ্ছাকৃত ভুলের ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। এটা অনুধাবন করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তাই সব ভুলকেই অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

আলোচনা সভার প্রারম্ভেই দুদক চেয়ারম্যান ভাষা শহীদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের  স্মৃতির প্রতি গভীর এবং বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। একই সময় রাজধানীর চকবাজারের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং আহতদের আশু আরোগ্য কামনাসহ নিহত এবং আহত পরবিারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

আলোচনসভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমরা ইতিহাস জানি কিন্তু তা মানি না, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হয় জানি, কিন্তু নেই না। ২১ ফেব্রুয়ারি কি শুধু বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন ছিল? এটি ছিল অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন এবং চরম অব্যস্থাপনার বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে সমন্বিত প্রতিবাদের প্রকাশ। আমরা যদি এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতাম, তাহলে আমাদের এই পবিত্র মাটিতে প্রতিটি সংস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির বাসা বাধতে পারতো না।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গণকর্মচারীকে নির্ধারিত সময়ে সেবা প্রদান করার কথা কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তা  তারা পাচ্ছেন না।’

এসময় দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা কেন নির্ধারিত সময়ে অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত সম্পন্ন করতে পারছেন না। সব একই সূত্রে গাথা। এর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তীব্র প্রতিবাদ নেই। তবে অবশ্যই প্রতিবাদ হবে। আমরা যদি ঠিক মতো কাজ না করি, তাহলে এমন  প্রতিবাদ হবে যা কেউ ঠেকাতে পারবেন না। ৫২ এর প্রতিবাদের প্রায় ১৯ বছর পরে ৭১ এর প্রতিবাদ সবকিছুকে ছাপিয়ে একটি সর্বত্মক জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সময়াবদ্ধকালে তদন্ত বা অনুসন্ধান সম্পন্ন করতে না পারলে দুদকের সংশ্লিষ্ট কমকর্তাদের বেতন-ভাতা থেকে ক্ষতিপূরণে অর্থ আদায় করা যায় কিনা ভেবে দেখা হবে। সরকারি সংস্থাগুলোতে যারা সময়মতো সরকারি সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের বেতন থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টিও সংশ্লিষ্টরা ভাবতে পারেন।

আমিত্ব এবং আমার শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখার আহ্বান জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদেরকে আমিত্বের প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সবসময় আমি ভালো থাকবো, আমার সন্তান ভালো থাকবে, আমিই শ্রেষ্ঠ। এই মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। আমরা কীভাবে ভালো থাকতে পারি, আমাদের সন্তানরা কীভাবে ভালো থাকবে এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ কিংবা সংস্থার শ্রেষ্ঠত্ব এবং আমিত্বের অনাকাক্ষিত প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার পরিবর্তে অসহযোগিতার মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। সবাই মিলে একই লক্ষ্য অর্জনে সম্মিলিতভাবে কাজ না করলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব। ঠিক সেরকম সকল পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং এটি হলো ২১ এর চেতনার শিক্ষা। নীতির বাইরে যা কিছু করা হয় তাই দুর্নীতি এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের এগুলো দেখার আইনি দায়িত্ব রয়েছে।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সংস্থাটির প্রধান বলেন, আপনাদের নিকট যে সকল নাগরিক আসেন তাদের প্রত্যেককে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করতে হবে। আপনারা যদি সময় মতো অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্য সম্পন্ন্ করেন তাহলেই অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত সম্মানিত বোধ করবেন।’

আলোচনা সভায় দুদক কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘২১ এর চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। এ চেতনাকে শুধু মুখে মুখে উচ্চারণ না করে, স্ব-স্ব আচরণেও এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে।’

এসময় দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, ‘নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) সারোয়ার মাহমুদ, পরিচালক মোঃ গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, উপপরিচালক মোঃ তালেবুর রহমান প্রমুখ।

আরো উপস্থিত ছিলেন দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মোঃ মইদুল ইসলাম, মহাপরিচালক (তদন্ত) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক এবং উপপরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়