ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০ অমীমাংসিত রহস্য

স্বপ্নীল মাহফুজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫১, ২৮ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০ অমীমাংসিত রহস্য

স্বপ্নীল মাহফুজ : পৃথিবী একটি গ্রহ। সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের তুলনায় পৃথিবী সম্পর্কে আমরা বেশি জানি, এর কারণ হলো আমরা এ গ্রহে বাস করি। কিন্তু পৃথিবীর সকল রহস্য এখনো আমাদের নখদর্পনে আসেনি। এ গ্রহ সম্পর্কিত অনেক বড় বড় রহস্যই অমীমাংসিত রয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা অমীমাংসিত রহস্যগুলো উম্মোচন করতে নিরলস গবেষণা করে যাচ্ছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০ অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* পৃথিবীতে এতো পানি কোথা থেকে এসেছে?
পানি, পানি, সবখানে পানি। পৃথিবী পৃষ্ঠের ৭০ শতাংশ দখল করে আছে পানি এবং এ কারণে গ্রহটির ডাকনাম ব্লু প্লানেট বা নীল গ্রহ। এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সুনিশ্চিতভাবে এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি যে, পৃথিবীতে পানি কোথায় থেকে এসেছে। আমাদের গ্রহে কেন পানির এত প্রাচুর্যতা, যেখানে এটি সৌরজগতের অন্যান্য স্থানে প্রায় অনুপস্থিত? বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে পৃথিবী গ্রহ গঠনের সময় (প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন বছর আগে) এটি ছিল শুষ্ক, পাথরময় গ্রহ। সবচেয়ে জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক তত্ত্বটি হলো- পৃথিবীতে পানি এসেছে বরফে পূর্ণ কিছু বিশাল গ্রহাণু থেকে। অন্য একটি তত্ত্ব ধারণা দিচ্ছে যে পৃথিবী গঠনের সময়কাল থেকে চারপাশে পানি আছে এবং নির্মিতব্য পৃথিবী সৌরজগৎ গঠনকারী গ্যাসের মেঘ ও ধূলি থেকে পানি সংগ্রহ করেছে। এ গ্রহে যেভাবেই পানি আসুক না কেন, পৃথিবীর জীবনগুলো সৃষ্টিতে এটি ভালোভাবে কাজ করেছে।

* অক্সিজেনের পরিমাণ কিভাবে স্থির হলো?
পানির মতো পৃথিবী গ্রহের জীবজগতের জন্য আরেকটি অপরিহার্য পদার্থ হলো অক্সিজেন। অক্সিজেন সম্পর্কে আমরা যা জানি তা হলো- প্রায় ২.৪ বিলিয়ন বছর আগে সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামক অতি ক্ষুদ্র জীব বর্জ্য দ্রব্য হিসেবে অক্সিজেন নিঃসরণ করে বায়ুমণ্ডলকে পূর্ণ করত। কিন্তু এরপর হাজার হাজার বছর ধরে অক্সিজেনের আগমন কোথায় থেকে হয়েছে তা সম্পর্কে স্পষ্ট জবাব নেই বিজ্ঞানীদের। এরপর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা খুব বেশি বৃদ্ধি পায়। একসময় অক্সিজেন কমতে শুরু করে। শেষপর্যন্ত ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে অক্সিজেনের মাত্রা স্থির হয়ে যায়। তখন থেকে বর্তমান পর্যন্ত অক্সিজেনের পরিমাণ শ্বাসযোগ্য মাত্রায় আছে। কিন্তু কি কারণে হঠাৎ করে অক্সিজেনের মাত্রা স্থির হয়ে গেল? এ বিষয়টি এখনো পর্যন্ত আমাদের বাসযোগ্য গ্রহের সবচয়ে বড় রহস্যগুলোর একটি।

* কি কারণে ক্যামব্রিয়ান এক্সপ্লোশন হয়েছে?
না, ক্যামব্রিয়ান এক্সপ্লোশন বিগ ব্যাংয়ের মতো কাবুম (উচ্চ বিস্ফোরণের শব্দ) নয়। পৃথিবীতে ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে জটিল জীবনের বিস্ফোরণকে বোঝাতে ক্যামব্রিয়ান এক্সপ্লোশন টার্মটি ব্যবহার করা হয়। এর আগে পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রাণের ইতিহাস ব্যাকটেরিয়া, ইউক্যারিয়োটস ও অতি সরল উদ্ভিদ সংক্রান্ত। কিন্তু ক্যামব্রিয়ান যুগের আরম্ভে যে বিবর্তন হয়েছে তাকে গ্রোথ স্পুর্ট অর্থাৎ হঠাৎ করে সংক্ষিপ্ত সময়ে দ্রুত বিকাশের ঘটনা মনে করা হয়। জটিল জীবগুলো এত দ্রুত হারে বিবর্তিত হতে থাকে যে আগে কখনো হয়নি। হঠাৎ করে জীবের মধ্যে মস্তিষ্ক, চোখ ও হাড় গঠিত হয়। বর্তমানে বাস করা অধিকাংশ প্রাণীর মধ্যে ক্যামব্রিয়ান যুগের বংশধরীয় চিহ্ন পাওয়া যেতে পারে। কিছু বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে অক্সিজেনের পরিমাণ স্থির হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এ ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণ হয়েছে। তারা আসলেই নিশ্চিত নন যে কেন এমনটা হয়েছে। অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে পৃথিবীর তাপমাত্রা ও অগভীর জলজ পরিবেশের মতো বিষয়গুলো এ বিস্ফোরণে ভূমিকা রেখে থাকতে পারে।

* আমরা কি ভূমিকম্পের আগাম খবর জানতে পারব?
পৃথিবী নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার শেষ নেই। তাদের গবেষণা পৃথিবীর অনেক কার্যকারণ উন্মোচন করলেও ভূমিকম্প থেকে রহস্যের পর্দা এখনো পুরোপুরি সরেনি। এ কারণে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানার জন্য উচ্চমানের প্রযুক্তি এখনো ডেভেলপ করা সম্ভব হয়নি। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পেতে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বর্তমানে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানতে আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করি তার নির্ভুলতার হার আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানানো প্রযুক্তির চেয়েও কম এবং আমরা জানি যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস কতটা মিথ্যে হতে পারে। আমাদের জানা আছে যে ভূগর্ভস্থ কঠিনাংশ বা শিলা ফেটে গেলে ভূমিকম্প হয় এবং ভূপৃষ্ঠের দিকে ভূকম্পন তরঙ্গ পৌঁছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এটা কেন ঘটে কিংবা আমরা কিভাবে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা জানব তা নির্ণয় করতে পারেননি।

* কখন প্লেট টেকটোনিকস শুরু হয়েছে?
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সহজে জানতে না পারার কারণ হলো ভূমিকম্প সৃষ্টির প্রকৃত প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের দুর্বোধ্যতা: প্লেট টেকটোনিকস। পৃথিবীর ভূত্বক গঠিত হয়েছে স্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম এমন কিছু প্লেট টেকটোনিকস বা ভূত্বকীয় পাত দ্বারা। এ প্রক্রিয়া কখন ও কিভাবে শুরু হয়েছে তা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কেবল অনুমানই করতে পারেন, কিন্তু নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। এসব প্লেট সম্পর্কিত রহস্য উন্মোচন করতে না পারার কারণ হলো, অনেক কাল আগে থেকে এ বিষয়ে সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কোনো ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন টেকটোনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে প্রায় তিনি বিলিয়ন বছর আগে, কিন্তু তা কিভাবে শুরু হয়েছে তা অনুমানের বিষয়।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়