‘আব্বু কখন বাস আসবে?’
হাসিবুল ইসলাম মিথুন || রাইজিংবিডি.কম
গাবলীতে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীরা (ছবি: সংগৃহীত)
হাসিবুল ইসলাম মিথুন : ছোট্ট সোনামণি সুমাইয়া। তার তর সইছে না। কখন আসবে বাস। কখন যাব দাদুবাড়ি? এমন আরো আরো প্রশ্নে বাবা-মার কান ঝালাপালা করে তুলছে সুমাইয়া।
সুমাইয়া যাচ্ছে ঈদ উৎসবে আনন্দ করতে দেশের বাড়ি রংপুরে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে তাই মা-বাবার সঙ্গে এসেছে গাবতলীর বাস কাউন্টারের সামনে। ভোর থেকেই রাজধানীতে ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তা উপেক্ষা করে শত শত যাত্রী ভিড় জমান সেখানে। সেই ভিড়ের মধ্যেই সুমাইয়া তার বাবা-মাকে বারবার বলছে, ‘আব্বু, আমরা কখন দাদু বাড়ি যাব, কখন আসবে বাস?’ বাবা-মা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, আসবে একটু পরেই আসবে। কিন্তু এসআর পরিবহনের বাসটি তখনও এসে পৌঁছায়নি।
শুধু এসআর পরিবহন নয়, দূরপাল্লার সব পরিবহনের চিত্র একই রকম। সময়মতো কোনো বাসই চলাচল করছে না। রোববার রাজধানীর ব্যস্ততম বাস কাউন্টার গাবতলীতে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। সকাল থেকেই অনেক যাত্রীকে কাউন্টারে বসে থাকতে দেখা গেছে বাসের অপেক্ষায়। কিন্তু সময়মতো কাউন্টারে আসতে পারছে না বাসগুলো। তাই সবাই শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। কখন গাড়ি আসবে, আর কখন বাড়ি গিয়ে পৌঁছাবেন সেই অপেক্ষায় আছেন তারা।
সকাল থেকেই টিপ টিপ বৃষ্টির মাঝেই যাত্রীরা ধীরে ধীরে ভিড় জমাচ্ছেন বাস কাউন্টারে। আর মাত্র দুই দিন বাকি ঈদুল ফিতরের। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য মানুষ পাড়ি জমাচ্ছেন স্টেশনগুলোতে। তবে আগের সব ঈদের তুলনায় এ বছর ঈদে বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কম।
সুমাইয়ার বাবা মাহবুব আলম বলেন, ঈদের বাকি আছে আর মাত্র দুই দিন। আজ কাউন্টারগুলোতে খুব ভিড় হবে ভেবেই একটু আগে বাসা থেকে বের হন। কিন্তু সকাল নয়টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও সাড়ে ১০টা নাগাদ সেই বাসের দেখা মেলেনি।
কেন সময়মতো বাস আসছে না, এ কথা জানতে চাইলে রংপুরগামী এসআর পরিবহনের কাউন্টারের এক কর্মী জানান, সকাল থেকেই রাজধানীজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই রাস্তায় খানিকটা জ্যামের সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণেই বাসগুলো সময়মতো কাউন্টারে এসে পৌঁছাতে পারছে না।
যাত্রীদের বেশি ভিড় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এ বছর একটু আগে ভাগেই রাজধানীর বিভিন্ন অফিস আদালত ছুটি হয়ে গেছে। দীর্ঘ নয় দিনের ঈদের ছুটি পেয়ে গত তিন দিনে অধিকাংশ যাত্রী শিকড়ের টানে রাজধানী ত্যাগ করেছেন। তাই এখন যাত্রীর চাপ কিছুটা কম। তবে আজ গার্মেন্টসগুলো ছুটি হলে দুপুরের পর থেকে যাত্রীর চাপ কিছুটা হলেও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
ঠিক একই কথা বললেন গাবতলী সাকুরা পরিবহনের কাউন্টারের কর্মী জুয়েল। তিনি বলেন, এ বছর রোজা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই রাজধানীর স্কুল, কলেজগুলো ছুটি হয়ে গেছে। তাই অনেকে আগে ভাগেই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। এ কারণে রমজানের শেষ মুহূর্তে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কম। গাবতলী বাস টার্মিনালে বরিশাল, রাজশাহী, বগুড়া, সাতক্ষীরা, খুলনাগামী পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে একই অবস্থা দেখা গেছে।
অন্যদিকে সকাল থেকেই বৃষ্টি হওয়ার কারণে যাত্রীদের পথে পথে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে বাসের সংখ্যা কম লক্ষ করা গেছে। তাই যাত্রীরা ঠিক সময়ে বাস পাচ্ছে না, যার কারণে অনেকেই গাবতলী, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুরে গিয়ে তাদের নির্দিষ্ট বাস পাননি। এমন ভোগান্তিতে পড়া এক যাত্রীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, সকাল ৯টার সময় তার বাস ছাড়ার কথা। তাই সকাল ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হন তিনি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তাকে গাবতলী পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। এ জন্য রাজশাহীর বাসের টিকিট থাকা সত্ত্বেও তিনি তা মিস করেছেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুলাই ২০১৪/মিথুন/সন্তোষ/এএ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন