ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘আই লাভ ইউ’-এ আটকে আছে ঢাকাই সিনেমা

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আই লাভ ইউ’-এ আটকে আছে ঢাকাই সিনেমা

রাহাত সাইফুল : বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস গৌরবময়। ঢাকাই চলচ্চিত্রের সোনালি যুগে অসংখ্য দর্শকপ্রিয় সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। এসব সিনেমার অধিকাংশ সামাজিক-পারিবারিক গল্প নির্ভর। বাবা-মাকে কেন্দ্র করে সিনেমার পুরো গল্প শেষ হয়েছে, এমন জনপ্রিয় অনেক সিনেমাও রয়েছে্। চলচ্চিত্রে আজ আর সেই সো্নালি যুগ নেই, কেবলই এখন তা স্মৃতি।

‘সন্তান যখন শত্রু’, ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘মা যখন বিচারক’, ‘পিতার আসন’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘চাচ্চু’ শিরোনামের সিনেমাগুলোর নাম এলেই এসব সিনেমার চরিত্রগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এতে নায়ক-নায়িকা যতটা না মনে দাগ কেটেছে, তার চেয়ে বাবা-মার চরিত্রগুলো বেশি দাগ কেটেছে।

বর্তমানে আমাদের চলচ্চিত্র নাজুক অবস্থা পার করছে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো একটার পর একটা ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে। এসব সিনেমার গল্পগুলো শুধু নায়ক-নায়িকাকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হচ্ছে। পুরো সিনেমায় একজন নায়ক আর একজন নায়িকাকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খায়। তাদের প্রেম-বিরহকে কেন্দ্র করে সিনেমার গল্প এগিয়ে যায়। এসব সিনেমার গল্প ও সংলাপ প্রায় একইরকম। 

স্বাভাবিকভাবে সিনেমা দেখতে আসা দর্শক কয়েকটা দৃশ্য দেখার পরই বলে দিতে পারেন পরের দৃশ্যে কি থাকবে। এসব সিনেমায় যথারীতি ‘ছেড়ে দে শয়তান’, ‘আই লাভ ইউ’, ‘আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না’ এ ধরনের কমন সংলাপে ভরপুর থাকে। আর দর্শক এ ধরনের সিনেমা দেখে নাক সিটকান। 

ঢাকাই সিনেমায় এখন আর পারিবারিক গল্প দেখা যায় না। বাবা-মাকে কেন্দ্র করে কোনো সিনেমা নির্মাণ হয় না। অথবা শুধু বাবা বা শুধু মাকে কেন্দ্র করেও সিনেমা নির্মিত হয় না। যা সোনালি যুগে দেখা যেত। এজন্য বলা যায় বাংলা সিনেমা এখনো ‘আই লাভ ইউ’র মধ্যে আটকে আছে। এখন শুধু নায়ক-নায়িকার প্রেমের মধ্যে সিনেমার গল্প ঘুরে বেড়ায়।

সোনালি যুগের সিনেমায় বাবা-মা অথবা পরিবারের একটা গান থাকত। এখন তাদের সংলাপ বলার জায়গাটা খুব অল্প। গান তো অনেক পরের কথা। এখন নায়ক-নায়িকার তিনটি রোমান্টিক গান একটি স্যাড গান আর কারণ ছাড়াই একটি আইটেম গান দিয়ে পুরো সিনেমা শেষ করা হয়।

নায়করাজ রাজ্জাক, সোহেল রানা, ফারুক, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, শাবানা, ববিতা, সুচন্দাদের মতো গুণী শিল্পীদের আজ আর চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখা যায় না। হঠাৎ করেই চলচ্চিত্র থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন পর্দা কাঁপানো এ শিল্পীরা। এছাড়া অনেক গুণী শিল্পী চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাদের শূন্য স্থান আজও চলচ্চিত্রে পূরণ হয়নি। গতানুগতিক একই ধারার সিনেমা নির্মাণের পেছনে এটা অন্যতম কারণ। এসব অভিনয়শিল্পীরাই এখন বাবা-মায়ের চরিত্রে অভিনয় করত। সে হিসেবে বলা যায়, চলচ্চিত্রে এখন আর বাবা-মা নেই। বিষয়টা হলো, চলচ্চিত্রের গল্পে বাবা-মায়ের চরিত্রে অভিনয় করার মতো কোনো অভিনয়শিল্পী নেই। যারা দু’একজন আছে তাদের দিয়ে হয়তো কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করাটা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যখন ডিজিটালের ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক, তবে দুর্ভাগ্যজনক হলো, রুপালি জগত থেকে গুণী শিল্পীরা বিদায় নিচ্ছেন। তাদের হঠাৎ প্রস্থানই আজ ঢাকাই চলচ্চিত্রের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিনিয়র শিল্পীর অভাবে নির্মাতারা এখন নায়ক-নায়িকাকে কেন্দ্র করে সিনেমা নির্মাণ করছেন। একই ধরনের গল্পের সিনেমা দেখে দর্শক বিরক্ত। দর্শক হল বিমুখ হচ্ছে। দর্শকবিহীন সিনেমা হলগুলো ধুঁকে ধুঁকে চলছে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণ রয়েছে যার জন্য ঢাকাই সিনেমার মান উন্নয়ন হচ্ছে না। এসব শিল্পীরা চাইলে আবারো ঢাকাই সিনেমার হাল ধরতে পারেন। আবার পারেন ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিতে। দর্শক ফিরবেন প্রেক্ষাগৃহে। চলচ্চিত্র ফিরে পাবে ডিজিটাল সোনালি যুগ এমন প্রত্যাশা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের।



রাজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জানুয়ারি ২০১৭/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়