ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নির্বাহী আদেশ কী?।। রাসেল পারভেজ

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৪, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নির্বাহী আদেশ কী?।। রাসেল পারভেজ

সইয়ের পর একটি নির্বাহী আদেশ দেখাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর এ কয়েক দিন বিশ্ববাসীর মনোযোগ নিবিষ্ট হয়েছে তার জারি করা নির্বাহী আদেশগুলোতে।

প্রথম কার্য সপ্তাহে মোটা দাগে চারটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। প্রতিটি আদেশ গুরুত্বপূর্ণ। সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি নির্বাহী আদেশ বাতিল করে নতুন নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন ট্রাম্প। তা ছাড়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন তিনি।

নতুন প্রেসিডেন্টের যে আদেশটি বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ, উদ্বেগ ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে, সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী নিষিদ্ধ করা ও সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করা। এই আদেশ জারির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কংগ্রেসের অনুমোদনের অপেক্ষা করেনি, নিজ উদ্যোগে কাজ শুরু করেছেন।

এই যে একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করছেন ট্রাম্প, চাইলেই খেয়ালখুশিমতো তা করতে পারেন কি তিনি? বিষয়টি কি এমন- প্রেসিডেন্টের মনে যা এল, একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে তা চালু করে দিলেন? না কি এমন আদেশ জারি করতে গেলে কোনো আইনিভিত্তির প্রয়োজন আছে? এসবের উত্তর পেতে আগে জানা দরকার, নির্বাহী আদেশ আসলে কী এবং তার ভিত্তি কী?

নির্বাহী আদেশ ও তার ভিত্তি
নির্বাহী আদেশ হলো কেন্দ্রীয় সরকার বরাবর প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরযুক্ত লিখিত আদেশ, যা বাস্তবায়নে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগে না। নাটকীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নীতির পরিবর্তন থেকে শুরু করে সাধারণ বিষয়েও নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা। ক্ষমতায় এসেই দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা বিতর্কিত তেল পাইপলাইন নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে নাটকীয়ভাবে নির্বাহী আদেশ জারি করেন ট্রাম্প। আবার ২০১৫ সালে ওবামা একটি নির্বাহী আদেশে বড়দিনের আগের দিন অর্ধকর্মদিবস অফিস করার আইন জারি করেন, যা ছিল, বলতে গেলে, সাধারণ বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রেসিডেন্টকে নির্বাহী আদেশ জারি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো প্রেসিডেন্টের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত থাকবে।’

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, প্রেসিডেন্টরা কেন নির্বাহী আদেশ জারি করেন? এ প্রশ্নের উত্তর হলো, সাধারণত যুদ্ধের সময় বা অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাহী আদেশ জারি করে থাকেন। যেমন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ১ লাখ ২০ হাজার জাপানিজ আমেরিকানদের জন্য বন্দিশালা নির্মাণে নির্বাহী আদেশ জারি করেন।

১৯৫২ সালে ধর্মঘট এড়াতে স্টিল ইন্ডাস্ট্রি সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার নির্বাহী আদেশ জারি করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান।

প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ৩ হাজার ৭২১টি নির্বাহী আদেশ জারি করেন


প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার শাসনামলে রিপাবলিকানদের তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। ওবামা সরকারের কয়েকটি বিল কংগ্রেসে আটকে দেয় বিরোধী রিপাবলিকানরা। কংগ্রেসে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে ২০১৪ সালে কানসাস সিটিতে জনতার উদ্দেশে ওবামা বলেন, ‘যদি তারা কিছুই না করতে দিতে চায়, তাহলে আমরা যা পারি তাই করব।’

নির্বাহী আদেশ নিয়ে এই যে মতভেদ, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, রাজনৈতিকভাবে নির্বাহী আদেশ সংবেদনশীল কেন? এখানে স্পষ্টতই দেখা যায়, কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে কোনো নীতি বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশ জারি করায় তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে নির্বাহী আদেশ বরাবরই সমালোচিত হয়ে থাকে। নির্বাহী আদেশের পুরো দায়-দায়িত্ব থাকে সংশ্লিষ্ট প্রেসিডেন্টের ঘাড়ে। নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা নেওয়ার পরও যদি আগের প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ বহাল রাখেন, তাহলেও এর দায় প্রেসিডেন্ট এড়াতে পারেন না। যে কারণে আগের প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ পরের প্রেসিডেন্ট বাতিল করে থাকেন।

কোনো বিল বা নীতি পাশ করাতে কংগ্রেস খুব বেশি দেরি করলে এবং প্রেসিডেন্ট জরুরি মনে করলে, সে বিষয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন তিনি।

একজন প্রেসিডেন্ট কতসংখ্যক নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন?
প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ জারির ক্ষেত্রে সংখ্যাগত কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতা যেহেতু প্রেসিডেন্টের হাতে, সেহেতু প্রয়োজনে তিনি তা করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি নির্বাহী আদেশ জারি করেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। তিনি ১২ বছর ক্ষমতা ছিলেন এবং এ সময়ে ৩ হাজার ৭২১ বার নির্বাহী আদেশ জারি করেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা তার আট বছরের শাসনামলে ২৭৯ বার এবং জর্জ ডব্লিউ বুশ তার দুই মেয়াদে ২৯১ বার নির্বাহী আদেশ জারি করেন।

প্রেসিডেন্ট ওবামা তার আট বছরে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নির্বাহী আদেশ জারি করেন। বছরে গড়ে ৩৫টি নির্বাহী আদেশ জারি করেন তিনি। ১৮৮৫-১৮৮৯ সাল এবং ১৮৯৩-১৮৯৭ সাল, দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় বছরে গড়ে ৩২টি নির্বাহী আদেশ জারি করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। ওবামার চেয়ে কমসংখ্যক নির্বাহী আদেশ জারি করা প্রেসিডেন্ট হলেন ক্লিভল্যান্ড।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ জারির বৈধ ভিত্তির বিষয়ে জানানো এই লেখার উদ্দেশ্য। তবে ক্ষমতা থাকলেই তা ইচ্ছামতো ব্যবহার করার দৃষ্টান্ত যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট স্থাপন করেন, তাহলে বিশ্বজুড়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে বাধ্য। শীর্ষ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্বও সবার চেয়ে বেশি। কিন্তু ট্রাম্প কি সেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন, না কি যাচ্ছেতাই করে যাবেন- এর উত্তর সময়ের জঠরে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জানুয়ারি ২০১৭/রাসেল পারভেজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়