ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দুই ফুল এক মালি

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৮, ২৩ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুই ফুল এক মালি

রাহাত সাইফুল: ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় জুটি শাকিব-অপু। ২০০৬ সালে এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ চলচ্চিত্রে তারা প্রথম জুটি বাঁধেন। এই জুটির প্রথম সিনেমা তুমুল ব্যবসা সফল হয়। ফলে রাতারাতি সবার নজরে আসেন তারা।

গত দশ বছরে এ জুটি অনেকগুলো ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। এর প্রমাণ একটি সংখ্যা। পাঠককে এই ফাঁকে সংখ্যাটি জানিয়ে রাখি। এখানে মনে রাখতে হবে, তারা এমন এক সময় জটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছেন যখন বাংলা চলচ্চিত্র ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সে সময় দুজনের অভিনয় প্রশংসিতও হয়েছে। যদিও শাকিব খান চলচ্চিত্রে পা রেখে শাবনূর, পূর্ণিমা, পপি, কেয়াসহ অন্যান্যদের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। এখানে অপু বিশ্বাস পিছিয়ে। তাকে অন্য নায়কদের সঙ্গে অতোটা দেখা যায়নি যতোটা শাকিবের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। শাকিবের সঙ্গে অপুর জুটি এ কারণে সর্বাধিক আলোচিত। এই আলোচনা কিছু সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। তখন থেকেই সন্দেহের তীর শাকিবের দিকে। ধারণা করা হয়, শাকিব খান হয়তো অন্য নায়কের বিপরীতে অপুকে অভিনয় করতে দেননি। 

অন্য নায়কের সঙ্গে অপু কেন অভিনয় করছেন না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অপু তখন বলতেন, ‘শাকিব-অপু জুটি দর্শক ভালোবাসে। আমাদের জুটি দর্শক দেখতে চায়। তা ছাড়া অন্য নায়কের বিপরীতে কাজ করতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’ মুখে না বললেও অদৃশ্য কিছু সমস্যা তো ছিলই। এদিকে সিনেমা নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে কোনো পরিচালক বা প্রযোজক শাকিব খানের কাছে গেলে তিনি তার বিপরীতে অপুকে নেয়ার পরামর্শ দিতেন। এমনকি অপুকে নিতে তিনি রীতিমত বাধ্যও করতেন। এ নিয়ে অনেক নির্মাতা বিভিন্ন সময় মুখ খুলেছেন। এখানেও প্রশ্ন থেকে যায় শাকিব কেন অপুর সঙ্গে অভিনয় করতে এতো আগ্রহী ছিলেন?

অপু বিশ্বাসের শিডিউল, পারিশ্রমিক থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন শাকিব খান। অপুর অভিনয়ের বিষয়ে প্রযোজক বা পরিচালকদের শুধু শাকিবের সঙ্গে কথা বললেই হতো। এসব ঘটনার রেশ ধরেই গুঞ্জন ওঠে শাকিব খান অপুকে বিয়ে করেছেন। এ প্রসঙ্গে যতবারই তারা সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন ততবারই তারা এড়িয়ে দিয়ে দিয়েছেন, ‘জনপ্রিয় জুটিদের নিয়ে বিয়ে, প্রেমের গুঞ্জন থাকবেই। এর আগেও জনপ্রিয় জুটিদের নিয়ে এমন গুঞ্জন উঠেছে।’

গত বছরের শুরুর দিকে অজানা কারণে মিডিয়া থেকে উধাও হন অপু বিশ্বাস। কেউ তাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। এমনকি পরিচালক, প্রযোজক, সাংবাদিকও না। কোথায় গেল অপু? এ নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায় চলচ্চিত্র পাড়ায়। তখন আবার সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে শাকিব-অপুর বিয়ের খবর। এবার শুধু বিয়ে নয়, তাদের ঘরে সন্তান রয়েছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়।

প্রায় এক বছর অপু না থাকায় শাকিব খান নবাগত বুবলীকে নিয়ে দুটি সিনেমার কাজ শেষ করেছেন এবং একটি সিনেমার কাজ এখনো চলছে। এর ফাঁকে যৌথ প্রযোজনার একটি সিনেমায় কলকাতার শ্রাবন্তীর বিপরীতে অভিনয় করেন শাকিব।

শাকিবের সঙ্গে দুটি সিনেমায় কাজ করার পর নবাগতা বুবলী অন্য নায়কদের সঙ্গে কাজের প্রস্তাব পেয়েও করেননি। শাকিব খানের বিপরীতে কাজ করতে তিনি বদ্ধ পরিকর। অর্থাৎ তারও রয়েছে অদৃশ্য বন্ধন।  কিন্তু কেন? প্রশ্ন থেকেই যায়। শাকিব খানও বুবলীকে নিয়ে বেশ ভালোই ঢোল পিটিয়েছেন সংবাদমাধ্যমগুলোতে। এরই বা কারণ কী?


এসব দেখেই যেন অন্তর জ্বালায় জ্বলছিলেন অপু। তিনি একটি সংবাদ মাধ্যমে ফোন করে তাদের দুজনের বিয়ের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। অপু বিশ্বাসের বরাত দিয়েই খবর প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে শাকিব খানকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। নীরবতা যখন সম্মতির লক্ষণ সুতরাং বলা চলে বিষয়টি মেনে নিয়েছেন তিনি।

চলতি বছরের শুরুতে অপু আবার বাংলাদেশে আসেন এবং বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে নিজে থেকে জানান দেন। তিনি আবার অভিনয়ে ফিরবেন এবং হঠাৎ উধাও হওয়ার কারণটিও জানাবেন। এখন প্রশ্ন হলো, কি এমন কারণ যা এখনও কেউ জানতে পারেনি? এ নিয়ে গুঞ্জন বাড়ছে বৈ কমছে না।

সম্প্রতি বুবলী সংবাদমাধ্যমে জানান, তিনি আগামী ঈদে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করবেন। এমন সংবাদের পর অপু সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘অপুকে নিয়েই শাকিবের পরিকল্পনা। বুবলীর সঙ্গে কাজ করবেন না শাকিব।’

গত ১৮ মার্চ বুবলী তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ওয়ালে শাকিব খানের সঙ্গে একটি গ্রুপ ছবি পোস্ট করেন। এ ছবির ক্যাপশনে লিখেন ‘ফ্যামিলি টাইম’। এতে বুবলীর পরিবারের লোকজনও আছেন। এই ছবি দেখেই ক্ষিপ্ত হন অপু বিশ্বাস। তিনি বুবলীকে ফোন করে গালাগাল করেন। এনিয়ে বুবলী সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ তোলেন। অপু বিশ্বাসও গালমন্দের বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেছেন।

বুবলীর পোস্ট করা ছবির ক্যাপশন নিয়ে অপু কেন ক্ষিপ্ত হলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে অপু জানান, বুবলী তার ফেসবুক ওয়ালে ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘ফ্যামিলি টাইম’। ফ্যামিলি টাইম দ্বারা কি বুঝাতে চেয়েছে বুবলী? শাকিব কি তা হলে বুবলীর ফ্যামিলি মেম্বার!  এ জন্য ফ্যামিলি টাইম লিখছে? এ বিষয়টি দেখে আমার ভীষণ মেজাজ খারাপ হয়। একজন শিল্পী আরেকজন শিল্পীর বাসায় যেতেই পারেন। এটা তো কোনো বিষয় না। কিন্তু ক্যাপশনটা অন্যরকম করেও দিতে পারত। বুবলীর বোনেরা একটু দূরে বসে আছে, শাকিব-বুবলী মাঝখানে বসে আছে। সব কিছু মিলিয়ে ওরা কী ফিলিংস দেখাতে চাচ্ছে?

এখন প্রশ্ন ওঠে, বুবলী তার ফেসবুক ওয়ালে শাকিব খানের সঙ্গে ছবি দিয়ে ‘ফ্যামিলি টাইম’ লিখেছেন তাতে অপু বিশ্বাস ক্ষিপ্ত হলেন কেন? এর উত্তর দিয়েছেন অপু। তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই জরুরি একটি প্রশ্ন। এটা নিয়ে শাকিবের সঙ্গে আলাপ করেন। এর উত্তর তিনি দিবেন।’
 

তার মানে আমরা ধরেই নিতে পারি- বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে ভেসে আসা শাকিবের সঙ্গে অপুর বিয়ের খবর সত্যি! এর সোজাসাপ্টা উত্তর নিজে না দিয়ে উত্তরের দায়িত্ব দিয়েছেন শাকিবের উপর। তিনি নাকি এর উত্তর দিবেন। তিনি আরো জানান, শাকিবের বিষয়ে তিনি এমন অধিকার রাখেন।

এদিকে অতীতের মতো এবারও শাকিব কোনো প্রতিবাদ বা মন্তব্য করেননি। তবে এ বিষয়ে শাকিবকে অপু বিশ্বাস বলে দিয়েছেন, ‘দেখ শাকিব, কথা বাড়াতে চাই না।  তুমি এই মুহূর্তে বুবলীকে ফোন করে বলে দাও, ক্যাপশন তুলে নিতে। এতেই আমি ঠান্ডা। আর কোনো কথা বাড়াব না।’ এরপর খান সাহেবও জানালেন, ‘যে মেয়ের সঙ্গে আমি কথা বলি না তাকে কীভাবে ক্যাপশন তুলে নিতে বলব।’ তাদের কথোপকথন শুনে খুব সাধারণভাবে মনে হয় তারা স্বামী-স্ত্রী।

বুবলীর উপর অপুর কোনো রাগ না থাকলেও শাকিবের আশেপাশে বুবলীকে দেখতে চান না। কিন্তু এর আগেও তো মাহি, পরী, ববিরা শাকিবের সঙ্গে কাজ করেছেন তাতে কেন চটেননি অপু?

চিত্রনায়িকা বুবলীই বা কেন শাকিবের সঙ্গে ছবি পোষ্ট করে ফ্যামিলি টাইম লিখবে এর কোন সঠিক উত্তর বুবলীর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তিনিও নাছোড়বান্দা। এখন তিনি ফেসবুক থেকে ফ্যামিলি টাইম লেখা ক্যাপশন ও ছবি মুছে দেননি।

এদিকে পুরো বিষয়টি নিয়ে কিং খান নীরব। তাদের লুকোচুরি গল্পের অবসান হয়তো খুব শিগগির ঘটতে যাচ্ছে। এসবের পর শাকিব-অপুর বিয়ের কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের বিয়ের সানাইয়ের সুর না বাজলেও দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের সুর বেজে আসছিল। এখন শুধু ঢাকঢোল বাজিয়ে শুভাকঙ্খিদের পান-মিষ্টি খাওয়ানো বাকি আছে বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু কেন এত লুকোচুরি? বিয়ে মানুষের জীবনের কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়। কেউ একটু দ্রুত এই কাজটি সেরে ফেলেন, অনেকে বুঝেশুনে সময় নিয়ে বিয়ে করেন। বিশ্বের অসংখ্য তারকা রয়েছেন যাদের খ্যাতি আকাশচুম্বি। তারা অনেক আগেই সংসারি হয়ে এখনো দিব্যি অভিনয় করে যাচ্ছেন। তাদের জনপ্রিয়তায় এতটুটু ভাটা পড়েনি। শাকিব-অপু জুটি বিয়ে করতেই পারেন। তাতে দোষের কি? কিন্তু তারপরও তারা কেন এত লুকোচুরি করছেন?

প্রেম, বিয়ে নিয়ে এমন নোংরা খেলায় শাকিব, অপু ও বুবলীর ক্যারিয়ারে কালিমার দাগ পড়ছে। এতে তাদের ক্ষতি তো হচ্ছেই, মূল ক্ষতিটা হচ্ছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির। লোক হাসছে। খ্যাতির চূড়ায় থাকা শাকিব খানই পারেন সত্যটা সামনে এনে লোক হাসানো বন্ধ করতে। 




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মার্চ ২০১৭/রাহাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়