ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রচলিত ভ্যাট ও প্রস্তাবিত ভ্যাট আইন নিয়ে কিছু কথা

আলি জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৯, ২৩ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রচলিত ভ্যাট ও প্রস্তাবিত ভ্যাট আইন নিয়ে কিছু কথা

আলি জামান : আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট ও এসডি আইন ২০১২ কার্যকর হতে যাচ্ছে। এই আইনের আওতায় প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট বাবদ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে এই ভ্যাট নিয়ে মহাবিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

যেভাবেই হোক, প্রচারিত হয়েছে যে, সর্বক্ষেত্রে ১৫% ভ্যাট ধার্য করা হবে। কিন্তু তা সত্য নয়। ১৫% ভ্যাট কেবল মাত্র আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ধার্য হবে। কিছু কিছু সেবা খাতেও ১৫% ভ্যাট ধার্য হবে। অবশ্য এগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিগত বছর থেকেই ১৫% ভ্যাট আরোপিত ছিল। এ আইন মোতাবেক উৎপাদন খাতে রেয়াত নেওয়ার সুবিধা বিদ্যমান থাকায় ভ্যাটের হার ১.৫% থেকে ২.৫ % এর বেশি হবে না। এর ফলে স্থানীয় শিল্প যারপর নাই, উপকৃত হবে। সম্পূরক শুল্কও বহাল আছে। তা ছাড়া এ আইনে ট্যারিফ ভ্যালু থাকবে না। আইনের খারাপ দিক হল, যেসব উৎপাদন পণ্যের কাঁচামালের ওপর ভ্যাট নেই সেগুলি রেয়াত সুবিধা নিতে পারবে না। এক্ষেত্রে সেসব পণ্যের ওপর সরাসরিভাবে ১৫% হারে ভ্যাট ধার্য হবে। যেমন-পাউরুটি-বনরুটি, বিস্কুট, কম দামের হাওয়াই চপ্পল, ভাঙারি পণ্য দিয়ে উৎপাদিত লৌহজাত সামগ্রী ইত্যাদি।

ভ্যাটের সৌন্দর্য হল রেয়াত গ্রহণের সুবিধা। অথচ এসব ক্ষেত্রে রেয়াত গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে ভ্যাট আইন অথবা বিঁধিতে ভ্যাটের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিতে হবে যে, ‘ভ্যাট হল এমন এক কর ব্যবস্থা যেখানে রেয়াত গ্রহণ করার সুবিধা বিদ্যমান’। এই কথাগুলি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রচার পত্রেও উল্লেখিত আছে। সেক্ষেত্রে এগুলি আইন বা বিঁধিতে সন্নিবেশিত করলে সাধারণ মানুষের ভ্যাট নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকবে না। এই আইনের সব থেকে বিতর্কের বিষয় প্যাকেজ ভ্যাট থাকছে না। সাধারণ ব্যবসায়ীরা এভাবে ভ্যাট দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখন তাদের ওপর একটা জটিল পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ায় তারা আতংকিত হয়ে পড়েছে। এই খাতে কিন্তু খুব বেশি ভ্যাট আদায় হয় না। কেবল মাত্র জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের লোকেদের সুবিধা করে দিতেই পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ের ওপর এই ভ্যাট ধার্য করা হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন চালু করার সময় বলা হয়েছিল যে, বিদ্যমান আবগারি শুল্ক ও বিক্রয় কর উঠিয়ে দিয়ে আধুনিক ভ্যাট প্রথা চালু করা হল। কিন্তু এ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তখন এই প্রথার বিরোধিতা করেছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তখন একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে সুস্পষ্টভাবে বলেছিল যে, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হবে না। অথচ পরবর্তীকালে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা তথা ট্রেড ভ্যাট আরোপ করা হয়। এইটা ভ্যাট প্রথার বিকৃতি। এই ভ্যাট তুলে দেওয়া উচিৎ। এটা এক ধরনের বিক্রয় কর, যা ভ্যাট আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটি ‘ট্যাক্স অন ট্যাক্স’। কারণ, দোকানে বিক্রিতব্য প্রতিটি পণ্যের বিপরীতে আমদানি অথবা উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট প্রদান করা হয়েছে। জনসাধারণই বা একই পণ্যের ওপর বারবার ভ্যাট প্রদান করবে কেন? দোকান পর্যায়ে এই ভ্যাট উঠিয়ে নিলে ৯০% ভ্যাট বিতর্কের অবসান ঘটবে।

মাথা ব্যাথা থাকলে মাথা কেটে ফেলা কি উচিৎ? নতুন আইনের বিতর্কিত দিকগুলি বাদ দিয়ে এর বাস্তবায়নে সমস্যা কোথায়?

লেখক : সভাপতি, এসএমই ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুন ২০১৭/হাসান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়