ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঈদকে ঘিরে ঢাকার অর্থনীতি যাচ্ছে গ্রামে

শায়েখ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ২৩ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদকে ঘিরে ঢাকার অর্থনীতি যাচ্ছে গ্রামে

ছবি : সংগৃহীত

শায়েখ হাসান : পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন। ঈদকে ঘিরে এখন বাড়ি ফেরার পালা, চলছে শেষ সময়ের কেনাকাটা। তবে আগামী কয়েক দিনে দেশের অর্থনীতি পরিচালিত হবে গ্রামকে ঘিরে।

ঈদকে ঘিরে আগামী এক সপ্তাহের জন্য ঢাকার অর্থনীতি যাচ্ছে গ্রামে। এ সময়ে টাকার প্রবাহ বাড়বে গ্রামপর্যায়ে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে টাকার জোগান যাচ্ছে গ্রামে। জাকাত, ফিতরার বড় অংশই বিতরণ হবে গ্রামে। ঈদ এলেই বাড়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ। সে সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারণার অংশ হিসেবেও এবার গ্রামে বড় অংকের অর্থের ব্যবহার হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, গ্রাম এখনো আমাদের প্রাণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিবছর ঈদ এলেই গ্রামে আপনজনের কাছে ছুটে যান শহরের বাসিন্দারা। সঙ্গে করে নিযে যান বিশাল অংকের অর্থনীতি। ফলে ঈদ এলে বাড়তি টাকার প্রবাহে সচল হয়ে ওঠে গ্রামের অর্থনীতি।

তিনি বলেন, ঈদ হচ্ছে মুসলিমদের একটি অন্যতম সার্বজনীন উৎসব। এ সময়ে নিম্ন আয়ের মানুষের হাতেও টাকা আসে। এতে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। এটি ইতিবাচক দিক।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, তবে বাড়তি টাকার প্রবাহের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এজন্য ঈদের পরে ওই টাকা উৎপাদন খাতে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ থাকা জরুরি।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছরই বড় হচ্ছে দেশের ঈদের অর্থনীতি। বাড়ছে এই অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ। ঈদে অর্থনীতিতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ, শিল্প উৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা রকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটে। এই উৎসবে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে আর্থিক লেনদেনসহ গোটা অর্থনীতি তথা দেশজ উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় প্রভাব পড়ে।

এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন পরিচালক এবং মহানগর দোকান মালিক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি হেলাল উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই ঢাকার বাইরের জেলা পর্যায়ের ঈদভিত্তিক অর্থনীতির আকার বাড়ছে। ঈদকে সামনে রেখে এসব এলাকার ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি এবং ঢাকায় এসে তাদের কেনাকাটার পরিমাণ থেকে তা খুব সহজেই আন্দাজ করা যায়।

তিনি বলেন, ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার এখন প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজধানীর বাইরের কনট্রিবিউশনও কম নয়।

এই ব্যবসায়ী আরো বলেন, ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির এই বিস্তার এখন শাড়ি থেকে শুরু করে গাড়িতে গিয়েও ঠেকেছে। দেশের বাইরের শাড়ি বাদে, দেশীয় শাড়ির বড় একটি উৎস আউট অব ঢাকা। নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, প্রভৃতি স্থান থেকে। অর্থাৎ ঢাকার বাইরে থেকেই এসব ঢাকায় ঢুকছে, ঈদের বাজারে ঢুকছে। আলটিমেটলি ঈদ অর্থনীতিতে ঢুকছে গ্রাম হয়ে। সুতরাং গ্রামের অর্থনীতি এ সময়ে জাতীয় অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলে তা অনুমেয়।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) প্রাক্তন এই পরিচালক আরো বলেন, এফবিসিসিআইয়ের হিসাবে প্রতি বছর জাকাত ও ফিতরা বাবদ খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ টাকার বড় অংশই চলে যায় গ্রামে। এছাড়া রোজা ও ঈদে নানা কর্মসূচিতে শহরের চাকরিজীবীরা গ্রামে যাচ্ছে। যে কারণে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। এছাড়া গ্রামের দরিদ্র মানুষের সহায়তায় শহরের লোকজন সাধ্যানুযায়ী অর্থের জোগান দিচ্ছে।

ব্যাংকিং চ্যানেলেও এখন গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ৫৭টি ব্যাংকের সারা দেশে ৯ হাজার শাখা রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ শাখা ৫ হাজার ৪৯টি, যা মোট শাখার ৫৭ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকিং খাতে শহুরে শাখার চেয়ে গ্রামীণ শাখাই বেশি। ব্যাংকগুলোতে গ্রামের আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ও ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা। রোজা ও ঈদ উপলক্ষে এ টাকার একটি অংশও গ্রামে খরচ হবে। এছাড়া এনজিও ও গ্রামীণ ব্যাংক থেকেও টাকার প্রবাহ বাড়বে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্র জানায়, রমজানে প্রতি বছরই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। রমজান ও ঈদে বাড়তি খরচের জন্য প্রবাসীরা তাদের স্বজনদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ পাঠায়। এর বড় অংশই যায় গ্রামে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, মে মাসে ১২৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এর মধ্যে গ্রামীণ পর্যায়ের জন্য আসা রেমিট্যান্সের অধিকাংশই ঈদকে কেন্দ্র করে এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, জুন মাসে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। এভাবে প্রতি বছরই ঈদের মাসে রেমিট্যান্স বাড়ে।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুন ২০১৭/শায়েখ/হাসান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়