ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ব্লু হোয়েল গেমের ফায়দা নিতে চায় কারা?

আয়শা সিদ্দিকা তুলি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ১৩ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্লু হোয়েল গেমের ফায়দা নিতে চায় কারা?

আয়শা সিদ্দিকা তুলি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এবং গণমাধ্যমের কল্যাণে অনলাইন গেম ‘ব্লু হোয়েল’ সম্পর্কে এরই মধ্যে আপামর জনগণ জেনেছেন। এটি এখন অনেকের কাছে পরিচিত ‘আত্মঘাতি খেলা’ হিসেবে। যদিও এখনো দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে ব্লু হোয়েল একটি ধাঁধা। অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই এ সম্পর্কে।  

গত সপ্তাহে আমরা দেখেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিটিআরসি’কে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) নির্দেশ দিয়েছেন ব্লু হোয়েল সর্ম্পকে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে। সংস্থাটি এখনো কিছু জানায়নি। কিন্তু আজ শুক্রবার আমরা দেখেছি একটি চক্র ব্লু হোয়েল-এর নাম ভাঙ্গিয়ে একটি ক্ষুদে বার্তা বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে, মেসেঞ্জারে পাঠাচ্ছে। এতে সতর্কবাণী হিসেবে ‘মোবাইল ফোন এক ঘণ্টা বন্ধ রাখার জন্য’ বলা হচ্ছে।

মোবাইল ফোনে পাঠানো এসএমএস-এ বলা হচ্ছে, ‘১৩ অক্টোবর রাত ৯টা থেকে রাত ১০টা এই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সকল অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ব্লু  হোয়েল গেম ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। গেমটি ফোনের সকল ব্যক্তিগত তথ্য, ফেসবুক, টুইটার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ সব কিছু ধ্বংস করতে সক্ষম।’
এ কারণে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সবার ফোন বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ওই এসএমএস-এ। বিটিআরসি বরাত দিয়ে এসএমএস বার্তাটি বেশি বেশি ফরোয়ার্ড করার আহ্বানও জানানো হয় এতে।

অনেকেই একে নিছক অপপ্রচার বলছেন। কিন্তু বাস্তবিকই কি এটি শুধুমাত্র অপপ্রচার? এই বার্তা ছড়িয়ে রাতে এক ঘণ্টার জন্য মোবাইল বন্ধ রাখার অন্য কোনো পরিকল্পনা নেই তো অপপ্রচারকারীদের? এ বিষয়ে আমরা বিটিআরসি এবং সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বিশ্বে এই গেম খেলে এরই মধ্যে অনেকের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এসব মৃত্যুর সংবাদ কতটা সত্য সে বিষয়ে হয়তো মতভেদ রয়েছে। কিন্তু এই খেলা যে মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে এবং গেমের মডারেটরের কাছে জিম্মি বানিয়ে ফেলে এটি সর্বজনস্বীকৃত। সম্প্রতি এই গেম সম্পর্কে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশিত হলে দুজন অভিভাবক জানিয়েছেন তাদের নিকটাত্মীয়ের এই গেমে আসক্ত হওয়ার কথা।  এটি আমাদের জন্য সংশয়ের কারণ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এই খেলায় আসক্ত একটি ছেলে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে আমাদের যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে, তা হলো- বাবা-মায়ের ব্যস্ত জীবনের কারণে সন্তানদের একাকীত্ব। মনোবিজ্ঞানীরাও বলছেন, প্রযুক্তির সহজলভ্যতার পাশাপাশি একাকীত্ব ও বাবা-মায়ের অসচেতনতা ব্লু হোয়েল-এর মতো মরণঘাতি খেলাগুলোর প্রতি আসক্তির জন্য বড় দায়ী।

আমাদের অনুরোধ থাকবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি, ব্লু হোয়েলের তৎপরতা বন্ধ করুন, ‘পপকর্ন কার্নিভাল’ নামের লিঙ্ক এবং ভারতের কান্ট্রি কোড ব্যবহার করে +৯১৭৫৭৪৯৯৯০৯৩ নাম্বার থেকে ফোন বা লিঙ্ক ছড়ানো বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে বিষয়টি, এই ব্লু হোয়েল গেমের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যেন অন্য কোনো উদ্দেশ্য সফল করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকাটাও জরুরি।  

 

লেখক: উন্নয়নকর্মী



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ অক্টোবর ২০১৭/হাসান/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়