ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভিনদেশি সিনেমা আর সংস্কৃতির যাতাকলে ঢাকাই চলচ্চিত্র

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫২, ৩ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভিনদেশি সিনেমা আর সংস্কৃতির যাতাকলে ঢাকাই চলচ্চিত্র

রাহাত সাইফুল : বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস গৌরবময়। দেশ বিভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানের চলচ্চিত্র প্রযোজক এফ দোসানির পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ হয়ে জব্বার খান ‘মুখ ও মুখোশ’ চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্যোগী হন। ১৯৫৪ সালের ৬ আগস্ট আবদুল জব্বার খান পরিচালিত প্রথম সবাক পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর মহরত করেন। ইকবাল ফিল্মের ব্যানারে নির্মিত  এ সিনেমাটি ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট মুক্তি পায়। সিনেমাটি প্রথম প্রদর্শনী হয় মুকুল প্রেক্ষাগৃহে, বর্তমানে যা আজাদ সিনেমা হল নামে পরিচিত। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় একযোগে মুক্তি পায়। এ অঞ্চলের প্রথম চলচ্চিত্র হিসাবে দর্শকমহলেও আগ্রহের সৃষ্টি হয়।

তখন পূর্ব পাকিস্তানে নিজস্ব কোনো চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে উঠেনি।স্থানীয় সিনেমা হলগুলোতে কলকাতা অথবা লাহোরের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হতো। তবে ‘মুখ ও মুখোশ’ নির্মাণের পর তা দারুণ সাড়া ফেলে। এ বিষয়টি উপলব্ধি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি নিজে চলচ্চিত্রকে ভালোবাসতেন বলেই ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল উত্থাপিত বিলের মাধ্যমে পূর্বপাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (ইপিএফডিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় তিনি শিল্পমন্ত্রী ছিলেন।

এফডিসি প্রতিষ্ঠার পর ফতেহ আলী লোহানী ‘আসিয়া’ ও ‘আকাশ আর মাটি’ মহিউদ্দিন ‘মাটির পাহাড়’, এ জে কারদার ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ নামের ৪টি সিনেমার কাজ শুরু করেন। এরপর বাংলাদেশের গুণী নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাণে আরো আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৫৯ সালে থেকে ইপিএফডিসির সহযোগিতায় প্রতি বছর চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় ও মুক্তি পেতে থাকে। একের পর এক জনপ্রিয় সিনেমা মোহিত করে দর্শকদের। ঢাকাই সিনেমার সাফল্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও সুনাম অর্জন করে। বিএফডিসিতে চলচ্চিত্রের ফ্লোরগুলোতে নিয়মিত শুটিং চলত। এমনকি ফ্লোর নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যেত। বিএফডিসিতে থাকত উৎসবমুখর পরিবেশ।

নব্বই দশকের শেষের দিকে অশ্লীলতার ভূত এসে ভর করে এদেশের চলচ্চিত্রে। এরপর থেকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের শক্ত অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়। ধীরে ধীরে হলবিমুখ হতে থাকে দর্শক।

২০১২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারিভাবে ৩ এপ্রিলকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন করে আসছে বিএফডিসি। তবে এবার দুটি ভাগে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বিএফডিসি ও চলচ্চিত্র পরিবার। তাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। দিবসটিতে নানা আয়োজন থাকলেও দুঃখজনক হলো বিনোদনের সবচেয়ে বড় এ মাধ্যমটি এখনো অবহেলিত। এখনো এটি সি গ্রেডে পড়ে আছে। যার কারণে যে কোনো অনুষ্ঠানে সরকারের সর্বোচ্চ বাজেট ৫০ হাজার টাকা। প্রতিবার সরকারের কাছ থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের জন্য মাত্র ৫০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। বাকি অর্থের যোগান দিতে ধরনা দিতে হয় অন্যদের কাছে।

বিশ্বে যখন ডিজিটাল সিনেমা নির্মাণ করা হচ্ছে তখনো বাংলাদেশে থার্টি ফাইভে সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। নেট দুনিয়ার মাধ্যমে অবাধ আকাশপথ খোলা থাকায় দর্শক খুব সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন সিনেমা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। এ কারণে ঢাকাই চলচ্চিত্রের থার্টি ফাইভে সিনেমা দেখতে একদমই নারাজ এ দেশের দর্শক। দর্শকশূন্য প্রেক্ষাগৃহ থাকায় একের পর এক হল বন্ধ হতে শুরু করেছে। ১৪ শ প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে এখন প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে মাত্র ৩৩০টি।

চলচ্চিত্র শিল্পের এ বেহাল দশায় বিশ্বমানের চলচ্চিত্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে বর্তমান সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অ্যানালগ যুগ ছেড়ে ইতোমধ্যে চলচ্চিত্র ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনকে (বিএফডিসি) ঢেলে সাজানো হচ্ছে। অ্যানালগ যন্ত্রপাতিকে ডিজিটালে রূপান্তর করা হচ্ছে।পূর্ণাঙ্গ একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে লাইট, ক্যামেরাসহ ডাবিং, এডিটিং ও কালার মিক্সের যন্ত্রপাতির অনেক বেশি গুরুত্ব রয়েছে। সম্প্রতি এগুলোকে ডিজিটাল করা হয়েছে। বিএফডিসির জন্য পাঁচটি ডিজিটাল এডিটিং প্যানেল, একটি কালার গ্রেডিং মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। এগুলো পুরাতন শব্দ ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্থাপন করা হয়েছে। তা ছাড়া আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। কালার দেখার জন্য বড় পর্দার প্রজেক্টর স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ সিনেমা মুক্তির জন্য কন্ট্রোল প্যানেল চালুর পরিকল্পনা করছে। ৩টি ডাবিং, মিক্সিং ও রি-রেকর্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে শব্দ গ্রহণের যাবতীয় কাজ করা যাবে। ৫টি সনি এফ-৫৫ ক্যামেরা ও একটি রেড ক্যামেরাও রয়েছে। ১৭ ইঞ্চি মনিটরও ক্রয় করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বিএফডিসিতে আরো রয়েছে দূর নিয়ন্ত্রণযোগ্য ৪০ ফুটের সর্বাধুনিক দুটি জিমিজিব, ২০ ফুট ট্রলি, যা ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘোরানো যায়। এসি-ডিসি দুটোই আছে, যে কারণে পাহাড়ি বা দুর্গম অঞ্চলেও এগুলো ব্যবহার করা যাবে। একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের সব যন্ত্রপাতির সুবিধা এফডিসিতে রয়েছে।

পূর্ণদৈর্ঘ্য একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে মোট বাজেটের অধিকাংশ খরচ হয় শুটিংয়ে (ক্যামেরা, লাইট ইত্যাদি)। এ ছাড়া এডিটিং, ডাবিংয়েও খরচ কম হয় না। এসব খরচ কমাতে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ প্যাকেজ সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে। এতে করে একটি সিনেমার জন্য ৬ লাখ টাকায় ক্যামেরা, এডিটিং, ডাবিং আর ব্যাকগ্রাউন্ড সুবিধা পাবেন সিনেমার প্রযোজক। যেখানে প্যাকেজের বাইরে একটি সিনেমা নির্মাণে ১০ লাখের অধিক টাকা খরচ হয়। তবে সম্প্রতি এফডিসির একটি সিস্টেমে বিরক্ত প্রযোজকরা। এফডিসির শুটিং ফ্লোর ভাড়া নিলে এফডিসির ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে। এতে করে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে সিনেমার প্রযোজকদের।

সরকারের এসব সুবিধা সত্ত্বেও বিএফডিসিতে নেই চলচ্চিত্রের শুটিং। এখন আর বিএফডিসির ঝর্ণা স্পটে গানের দশ্য, সুইমিং পুলে সাঁতার আর কড়ই তলায় মারামারির দৃশ্য দেখা যায় না। এসব স্থান এখন যেন ময়লার ভাগাড়। শোনা যায় না দরাজ কণ্ঠের সংলাপ। সাড়া-শব্দহীন বিএফডিসি। বিএফডিসির মানুষগুলোও যেন প্রাণহীন। তাদের মুখেও নেই হাসি।

চলচ্চিত্র ও বিএফডিসির সঙ্গে জড়িত আছে কয়েক হাজার মানুষ। চলচ্চিত্রে কাজ করেই চলে তাদের সংসার। পরিচালক, ক্যামেরাম্যান, লাইটম্যান, মেকআপম্যান, শুটিং-বয়, টি-বয়, এক্সট্রা শিল্পী, স্ট্যান্টম্যানসহ কেউ-ই ভালো নেই। দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত মানুষগুলো এখন আর কাজ করার সুযোগ পায় না। অতিকষ্টে দিনযাপন করছেন তারা।  বিএফডিসিতে ঢুকলেই দেখা মিলবে তাদের। অথচ এক সময় চলচ্চিত্রের ঝলমলে আলোর মতোই বেশ ভালোই কাটছিল চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের জীবন। আর এখন নিভে গেছে আলোর ঝলকানি। অন্ধকারেই দিন কাটছে তাদের পরিবারের। বিএফডিসিতে প্রাণচাঞ্চল্য আগের মতো নেই। শুটিং স্পটে জমাট ময়লা পড়ে আছে। চলাচলের রাস্তায় টিভি চ্যানেলের যন্ত্রাংশ রাখা হয়েছে।  সিনেমার বদলে বিএফডিসিতে এখন দেখা যায় বেসরকারি টিভি চ্যানেলের নাটক নির্মাণের দৃশ্য।

এদিকে, আকাশ সংস্কৃতির এ যুগে ভিনদেশি চ্যানেল, সিনেমা আর সংস্কৃতির আগ্রাসনে ঢাকাই সিনেমা দাঁড়াতে পারছে না।  উচ্চ প্রযুক্তি ও বিগ বাজেটের ভিনদেশি সিনেমা এদেশে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।  ফলে দর্শকও দিন দিন স্বার্থপরের মতো দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের ভুলে সেদিকেই ঝুঁকে পড়ছেন। সরকার এদিকে নজর দিয়ে নতুন করে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা তৈরি করেছে। কিন্তু নিরব ঘাতকের মতো সাফটা চুক্তির মাধ্যমে কলকাতার সিনেমা সরাসরি বাংলাদেশে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। এটা ঢাকাই চলচ্চিত্রের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মত। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকাই সিনেমার অবস্থা সামনে কী হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে আমাদের প্রত্যাশা,  হলিউড, বলিউড, টালিউড সিনেমাকে পরোয়া না করে আবারো নতুন কোনো ‘মুখ ও মুখোশ’ নির্মাণে উদ্যোগী হবেন কেউ।  ঢাকাই চলচ্চিত্র ফিরে পাবে প্রাণ। দর্শকমহলে সৃষ্টি হবে নতুন আগ্রহ।  ফিরে আসবে চলচ্চিত্রের সোনালি অধ্যায়।

চলচ্চিত্রের সিনেমা হলগুলোর বেহাল দশা! হল মালিকদের কাছে সিনেমার অবস্থা জানতে চাইলে তারাও বলছেন প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের, হলের সংস্কার করব কীভাবে? হল বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে বর্তমান সরকার দেশের ৫০টি প্রেক্ষাগৃহ আধুনিকায়নের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি ‘সিনেমা হলে ডিজিটাল প্রদর্শন সিস্টেম প্রবর্তন’ শিরোনামের এক জরুরি সভায় ৫০টি প্রেক্ষাগৃহ আধুনিকায়ন করতে ৫০ কোটি টাকার সম্ভাব্য বাজেট ধরা হয়েছে। এটা ঢাকাই চলচ্চিত্রের জন্য ইতিবাচকই বটে।

সিনেমাপ্রেমী মানুষগুলো নিয়মিত প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে চড়া প্রবেশ মূল্য দিয়েই সিনেমা দেখছেন। তাদের দেয়া প্রবেশ মূল্যের পুরোটাই কি সিনেমার প্রযোজক ও হল মালিক পাচ্ছেন? হিসাব অনুযায়ী আধুনিক যুগে সবটাই এই দুই পক্ষের পাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের মাঝে নীরব ঘাতকের মতো এ দেশের সিনেমায় বাসা বেঁধেছে ‘বুকিং এজেন্ট’ নামক ব্যধি। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এ যুগেও আলু-পটলের মতো চলচ্চিত্রেও প্রযোজক ও হল মালিকদের মাঝখানে মধ্যস্থতাকারী দালাল রয়েছে। এ দালালদের অপর নাম ‘বুকিং এজেন্ট’। এদের মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রযোজককে প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তি দিতে হয়। প্রতি হল বুকিংয়ের জন্য মধ্যস্থতাকারী এই এজেন্টকে হল থেকে প্রাপ্ত নির্ধারিত পরিমাণ রেন্টাল বা বুকিং ফি বা সাইনিং মানির ১০% কমিশন দিতে হয়। প্রযোজক বা পরিবেশকের কাছ থেকে কমিশন নেয়ার পাশাপাশি বুকিং এজেন্ট একই সাথে হলে এনে দেয়ার জন্য প্রদর্শক তথা হল মালিকদের কাছ থেকেও ৫% কমিশন নিয়ে থাকেন।

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এদেশের চলচ্চিত্রশিল্পীকে এগিয়ে নিতে হলে দেশের সিনেমা হলগুলোতে ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু করলে অবস্থার অবসান হবে বলে আশা করা যায়। ই-টিকেটিং চালু হলে একজন প্রযোজক পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে খুব সহজেই তার সিনেমার সেল দেখতে পারবেন। এতে কোনো বুকিং এজেন্ট প্রয়োজন হবে না।

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা সম্প্রতি পরস্পরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুড়ি করছে। চলচ্চিত্রে তৈরি হয়েছে বিভক্তি। চলচ্চিত্র দিবসে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের প্রত্যাশা চলচ্চিত্রের স্বার্থে এগিয়ে আসা উচিৎ চলচ্চিত্রের অভিভাবকদের। সকল ভেদ ভুলে এখন প্রয়োজন বেশি বেশি মান সম্পন্ন সিনেমা নির্মাণ করা। তা হলেই চলচ্চিত্রে আবারো সুবাতাস বইবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ এপ্রিল ২০১৮/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়