ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১১, ২০ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন বন্যাকবলিত। মনু ও ধলাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে ভেঙে যাওয়ায় মৌলভীবাজার সদরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে  পানি ঢুকে পড়ে প্লাবিত হয়েছে। এই দুই নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এতে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার নয় ইউনিয়নের ১২টি স্থান ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

মনু নদের পানি ঢুকে সদর উপজেলার চারটি সরকারি খাদ্যগুদামে বিপুল পরিমাণ চাল ভিজে গেছে। বহু ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সিলেটের ওসমানীনগর এবং সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ওসমানীনগরে কুশিয়ারা নদীর ডাইক দুটি স্থানে ভেঙে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়া ছাড়াও উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের ডাইকের কালভার্ট পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। এতে এই এলাকার সঙ্গে সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ছে তিস্তায়। ভারি বর্ষণে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে পানি বেড়েছে। ফেনীর মুহুরী নদীর আট পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ২৪ গ্রাম। ফলে  ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে পড়েছে ওইসব স্থানে। সাতক্ষীরার আশাশুনিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে শতাধিক মাছের ঘের ও ফসলি জমি।  পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বিপুলসংখ্যক পরিবার।

বিভিন্ন স্থানে যেভাবে আগাম বন্যা দেখা দিয়েছে তাতে  উৎকণ্ঠা  তৈরি হয়েছে জনমনে। বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ভরা বর্ষায় পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা নিয়ে  মানুষ শঙ্কিত। অতিবর্ষণ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের হাত নেই। কিন্তু অবনতি পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। দাঁড়াতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে। প্রশাসন থেকে অবশ্য বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে পেদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বন্যার্তদের উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনী।

বন্যার্তদের জন্য দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্র খোলা, প্রয়োজনীয় ত্রাণ এবং নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। বন্যার্ত এলাকার মানুষের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর পাশাপাশি বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের দিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ ও বণ্টনে যাতে অনিয়ম-দুর্নীতি না হয়, এ বিষয়ে সংশ্নিষ্টদের নজর রাখতে হবে। বন্যা-পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি।

দুর্গত এলাকা যেখানে  মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে জরুরিভিত্তিতে সেখানে খাবার পানি, শুকনো খাবারসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।  যেসব এলাকায় বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে সেসব দ্রুত সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করতে হবে। যেহেতু প্রায় প্রতিবছরই বন্যা দেখা দেয় তাই প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের ক্ষতি মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। বন্যার প্রকোপ কমাতে নদনদীর নাব্যতা বাড়াতে হবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জুন ২০১৮/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়