ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

যেসব কারণে আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে

মাছুম বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ২৫ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেসব কারণে আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে

মাছুম বিল্লাহ : বিজ্ঞানের এক চরম উন্নতির যুগে বাস করছি আমরা। এটি বিশ্বায়নের যুগ। বিজ্ঞান, বিশ্বায়ন  ও ডিজিটালের এই যুগে একটি সংবাদ দেখে অবাক হলাম। আমাদের দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে এমন অনেক বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোতে পাঠদান করা হলেও সেখানে বিজ্ঞানাগার নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা  হাতে-কলমে বিজ্ঞান শিখতে পারছে না।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য থেকে জানা যায় যে, দেশের  মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ২৯ শতাংশে বিজ্ঞানাগার স্থাপন করা হয়নি। অর্থাৎ প্রায় এক তৃতীয়াংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার নেই। আঁতকে ওঠার মতো সংবাদ! আমরা জানি, বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞান দুটোই সমান অপরিহার্য। শ্রেণিকক্ষে তত্ত্বীয় বিষয়ে পাঠদান করা গেলেও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বিজ্ঞানাগার থাকা আবশ্যক। সে হিসেবে বলা যায়, শুধু বিজ্ঞানাগারের অভাবে বিজ্ঞান শিক্ষায় ব্যবহারিক জ্ঞানের অভাব থেকে যাচ্ছে দেশের ২৯ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। শুধু কি তাই? যেসব বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার আছে সেগুলোতে কি ধরনের যন্ত্রপাতি আছে, থাকলেও কতটা ব্যবহার করা হয় তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির একটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করছি। ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির বিজ্ঞান ইউনিট কয়েক বছর যাবত একটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগার আছে, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিও আছে কিন্তু কেউ ব্যবহার করছে না। অনেক প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করতে করতে একেবারে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। আবার এমনও অনেক বিদ্যালয় আছে যেগুলোতে যন্ত্রপাতি আছে কিন্তু অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী দূরের কথা ঐসব যন্ত্রপাতির নামও জানে না। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিগুলোর সাথে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের নতুন করে পরিচয় ঘটানো, অব্যবহৃত যন্ত্রগুলোকে কিভাবে কখন ব্যবহার করতে হয়, তার সাথে পরিচিত হওয়া এবং মরিচা ধরা বা অন্যভাবে অকেজো হয়ে যাওয়া যন্ত্রগুলোকে কিভাবে সচল ও কার্যকরী করা যায় ইত্যাদি বিষয়গুলোকে সামনে রেখে উক্ত ইউনিট বিভিন্ন গ্রামীণ বিদ্যালয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন এলাকার অনেক নামকরা বিদ্যালয়ে গিয়েও হতাশাজনক চিত্র দেখা গেছে। অনেক বিদ্যালয়ে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বছরের পর বছর ব্যবহার না করার ফলে প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। অথচ আমাদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এখন মাধ্যমিক পর্যায়েও শিক্ষা কর্মকর্তা রয়েছেন। জানি না বিষয়গুলো তাদের কতটা নজরে আছে।

অবকাঠামো দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী হচ্ছে না। প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিষয়ে অতি সামান্য ধারণা লাভ করে। তাদের মধ্যে বিজ্ঞানমনষ্কতা তৈরি হয় মূলত মাধ্যমিক স্তরে গিয়ে। কিন্তু  এ স্তরে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি অনাগ্রহ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে বিজ্ঞান শিক্ষায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব ও পর্যাপ্ত ভৌতকাঠামো না থাকা একটি বড় কারণ। এবারে জানা গেল আরও একটি কারণ, আর সেটি হচ্ছে বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার না থাকা। বিজ্ঞানাগার না থাকা মানে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে এবং বাস্তব জ্ঞান অর্জন ও ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে বিজ্ঞান শিক্ষায় তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বিজ্ঞানের বিষয়গুলো এমনিতেই অন্যান্য ডিসিপ্লিনের চেয়ে অধিকতর কঠিন ও সিলেবাসও দীর্ঘতর। এই বিভাগে পড়াশুনা করলে অভিভাবকদেরও অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়। এসব কারণে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বর্তমান যুগের বিশ্বায়ন প্রক্রিযার মূলে রয়েছে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য। এশিয়া মহাদেশে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীনে  বিজ্ঞানকে  গুরুত্বসহকারে শেখানো হয়। প্রতিযোগিতায় তাদের সাথে  টিকে থাকতে হলে বিজ্ঞান শিক্ষাকে আমরা কোনভাবে অবহেলা করতে পারি না।

ব্যানবেইসের সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ এডুকেশন ষ্টাটিসটিকস-২০১৭ অনুযায়ী দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে (নবম ও দশম) বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করছে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা নয় লাখ ৮১ হাজারেরও বেশি। কিন্তু বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার না থাকায় এর বড় একটি অংশই ব্যবহারিক বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই চিত্র নিশ্চয়ই হতাশাব্যাঞ্জক। আমরা এক দিকে বলছি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। অন্যদিকে বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন করছি না। এখানকার রিপোর্ট অনুযায়ী ৭১ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার আছে কিন্তু সেগুলোর সব ক’টিতে  কি নিয়মিত প্রাকটিক্যাল ক্লাস হয়? হয় না। সবগুলোর যন্ত্রপাতিই কি শিক্ষার্থীরা এমনকি শিক্ষকগণ চেনেন? চেনেন না। সব যন্ত্রপাতিগুলেই কি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়? হয় না। ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির বিজ্ঞান ইউনিটের কার্যক্রম বলে দিচ্ছে বহু বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার থাকা সত্ত্বেও তারা তা ব্যবহার করছে না ।

বিজ্ঞান শিক্ষার দুরবস্থার কথা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’র এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে। বেসরকারি এই উন্নয়ন সংস্থাটির  অর্থায়নে পরিচালিত ‘চাইল্ড পার্লামেন্ট’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার না থাকা এবং ব্যবহারিক ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞানের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জরিপের অওতাধীন  মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৬১.৭ শতাংশ বলেছে , তাদের কোন ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। এ ছাড়া ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বলছে বিজ্ঞনাগারের জন্য তাদের অতিরিক্ত ফি পরিশোধ করতে হয়।

সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বিজ্ঞানাগার স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানালেও তা পূরণ হচ্ছে না। গদ দুই দশকে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমতে দেখা গেছে। ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী ছিল মোট শিক্ষার্থীর ৪২.৮১ শতাংশ। অথচ ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৮.৯৭ শতাংশে। দুই যুগ সময়ের ব্যবধানে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি এ অনাগ্রহের প্রভাব পড়ছে পরবর্তী ধাপগুলোয়ও। পরের ধাপগুলোয় তা ক্রমাগত হারে কমছে। সে তুলনায় বাণিজ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। পরিসংখ্যাণ বলছে ১৯৯০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী ছিল মোট শিক্ষার্থীর ২৮.১৩ শতাংশ। অথচ ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায়  ১৭.২৬ শতাংশে। ১৯৯৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিল মাত্র ১৫.৩৩ শতাংশ। এরপর ২০০২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫.৮৪ শতাংশ। তারপর পতন শুরু হয় এবং ২০১৩ সালে তা নেমে আসে শতকরা ১৭.০১ শতাংশে। সবশেষে এ প্রভাব গিয়ে পড়ছে উচ্চ শিক্ষায়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যাণ অনুযায়ী স্নাতক পর্যায়ে ২০১৩ সালে বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোয় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী কমেছে আগের বছরের তুলনায় ০.২ শতাংশ। চিকিৎসায় কমেছে ১৮.২৭ শতাংশ। প্রকৌশলে  উত্তীর্ণের হার এ সময় বাড়লেও তা খুব বেশি নয়, মাত্র ৮.৮১ শতাংশ। অথচ এ সময়ে সামাজিক বিজ্ঞানে স্নাতক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৯.৪২শতাংশ। একইভাবে ২০১৩ সালে মানবিকে স্নাতক  উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী বেড়েছে ২১, ব্যবসায় প্রশাসনে ৭২.৭৫ ও আইনে ৩১.৮ শতাংশ। ইউজিসি আরও বলছে  ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিল ১৭ শতাংশ বর্তমানে তা ১১ শতাংশ। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভিড় করছে ব্যবসায় শিক্ষায়, বিজ্ঞানের দিকে ঝুকছে না। বিজ্ঞানে পড়া বাণিজ্য কিংবা কলা বিভাগের চেয়ে অনেক কঠিন। বিষয়গুলো পড়ানোর যেমন উপযুক্ত শিক্ষক বহু বিদ্যালয়ে নেই, তেমনি শ্রেণিকক্ষে সকল বিষয় শিক্ষার্থীরা আয়ত্ব করতে পারে না। ফলে, অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে প্রাইভেট পড়তে হয় যা অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব হয় না। তাছাড়া বিজ্ঞানের সিলেবাসও বাণিজ্য কিংবা কলার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তারপরেও আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বিজ্ঞান শিক্ষায় তো শিক্ষিত করতে হবে। কিন্তু কিভাবে?

আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছি অথচ গোড়াতেই এমন বড় গলদ থাকলে তা কতটা কার্যকরী হবে? দেশে যদি আমরা বিজ্ঞানের শিক্ষক ও  গবেষক তৈরি করতে না পারি তাহলে কারা বাস্তবায়ন করবেন আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন? বিশ্বায়নের কারণে এখন অনেকেই বাণিজ্য বিভাগে পড়াশুনা করছেন, সামাজিক অস্থিরতা ও অনাচার বেড়ে যাওয়ায়, বেসরকারি পর্যায়ে চাকরির আশায় অনেকেই সমজাবিজ্ঞানে পড়াশুনা করছেন। এতেও এক ধরনের ব্যবধান ও বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ও বিভাগে আমাদের যে পরিমান জনবল প্রয়োজন তা থেকে অনেক কম আমরা তৈরি করছি অথচ বাণিজ্য , কলা ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগসমূহ এত বেশি জনবল তৈরি করছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। এ বৈষম্য দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ব্যানবেইস ও ইউজিসি-এর হিসাব তাই বলছে। তাই অবারও বলতে হয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি পর্যাপ্ত গুরুত্ব না দিলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন কখন ও কিভাবে বাস্তবায়িত হবে সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে পাঠিয়ে আনন্দের সাথে বিজ্ঞান পড়ানোর কৌশল অবলম্বন করা হয় যা আমাদের দেশে বেশি বেশি প্রয়োজন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একদিকে  দেশপ্রেমের চর্চা হবে, অন্যদিকে অর্থ উপার্জন এবং সর্বোপরী শিক্ষা জীবনেই দেশের সমস্যা দূর করা ও দেশগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করার সুযোগ পাবে। অবহেলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠবে।

বিজ্ঞান মেলা আগের দিনগুলোতে  যেভাবে সারা ফেলতো এখন কিন্তু সেভাবে দেশের সর্বত্র হচ্ছে না। ব্যক্তি পর্যায়ে বা ছোট ছোট প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিচ্ছিন্নভাবে  বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড বা অন্যান্য কাজ হচ্ছে কিন্তু দেশব্যাপী সরকারি পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়কে সহজ, আনন্দময়, ব্যবহারিক চর্চা ও আকর্ষণীয় করার কোনো কর্মসূচি নেই । ফলে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে তরুণ প্রজন্ম। যারা বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ছে তারা প্রাকটিকাল ক্লাস করার সুযোগ না পেয়ে মুখস্থ করে বিজ্ঞান পড়ছে যা কোনভাবেই আনন্দের নয়, বরং বাস্তবতা বিবর্জিত। কোষের গঠনপ্রণালী, তেলাপোকার পৌষ্টিকতন্ত্র, ব্যাঙের অঙ্গ ব্যবচ্ছেদ, অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের গঠন ও উৎপাদন প্রণালী বিজ্ঞানাগারে না দেখলে  শিক্ষার্থীরা এ বিষয়গুলোতে কিভাবে বাস্তবজ্ঞান অর্জন করবে? তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ সেল থাকা উচিত যা বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবে, সমস্ত বিদ্যালয়ে নিয়মিত ও সঠিকভাবে প্রাকটিক্যাল ক্লাস নিশ্চিত করবে এবং যেসব বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার নেই সেসব বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতা নিয়ে। বিজ্ঞান শিক্ষাকে আকর্ষনীয়, সহজবোধ্য ও জনপ্রিয় করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। কারণ বিশ্বায়ন ও বিজ্ঞানের এই যুগে বিজ্ঞান শিক্ষাকে আমরা কোনভাবেই অবহেলা করতে পারি না। বিজ্ঞান শিক্ষাকে অবহেলা করা মানে বিশ্বায়নের গতি থেকে ছিটকে পড়া।

লেখক: ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জুলাই ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়