ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মাশরাফিকে অভিনন্দন, তবে…

জাহাঙ্গীর আলম বকুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাশরাফিকে অভিনন্দন, তবে…

জাহাঙ্গীর আলম বকুল: মাশরাফি মুর্তজা বাংলাদেশে পরিচিত নাম। শুধু বাংলাদেশ নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি নিজের নাম ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি যেমন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী, তেমনি ভালো খেলোয়াড়। খেলা এবং দলের প্রতি তার কমিটমেন্ট এবং অনন্য নেতৃত্ব গুণে নিজেকে তিনি এমন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছেন, যা অতুলনীয়।   

মাশরাফি জনপ্রিয় যেমন খেলোয়াড় হিসেবে, তার চেয়ে বেশি দলের নেতৃত্বের কারণে। তিনি দলকে জয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন এবং সকল খেলোয়াড়কে একই মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে পারেন। তিনি দলের সকল খেলোয়াড়কে গুরুত্ব দেন এবং প্রত্যেকের থেকে সেরাটা আদায় করতে পারেন। দলের সকলে তাকে সমীহ করেন। এ কারণে তিনি অন্যদের থেকে আলাদা। তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে।

দেশে অনেক খেলা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে ক্রিকেটসহ কয়েকটি খেলায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অংশ নেয়। কিন্তু স্মরণে রাখার মতো অর্জন নেই, শুধু ক্রিকেটে ছাড়া। খেলার মাধ্যমে যতটুকু পরিচিতি বিশ্বে বাংলাদেশ পেয়েছে, তা ক্রিকেট দিয়েই। এই ক্রিকেটে আমরা একদিন বিশ্বকাপ অর্জনের স্বপ্ন দেখি। এ জন্য ক্রিকেট নিয়ে তরুণদের এতো উন্মাদনা। এখনকার কিশোররা মাশরাফি, সাকিব, তামিম হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

তবে ভালো খেলোয়াড় হলেই তিনি সব মহলে জনপ্রিয় বা পছন্দের মানুষ হবেন, তেমন না। পৃথিবীর বহু ভালো খেলোয়াড় আছেন, তারা সব মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়তা পাননি। জনপ্রিয় হতে গেলে মানুষকে গুরুত্ব দিতে হয় এবং ভালোবাসতে হয়। মাটি এবং মানুষের কাছে থাকতে হয়। এ ধরনের ব্যক্তিত্ব তৈরি করা কঠিন এবং সবাই তা পারে না। অনেক সৎ ও নির্ভিক মানুষ তা পারেননি। কিন্তু সেটা পেরেছেন মাশরাফি। বিনয়, নিরহঙ্কার এবং গণমানুষের মধ্যে থাকার মানসিকতা তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। এই গুণাবলী একজন সফল রাজনীতিকের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 

অনেকের মতো আমারও মাশরাফি মুর্তজা পছন্দের মানুষ। তিনি খেলোয়াড় হিসেবে যতটা না পছন্দের, তার চেয়ে বেশি একজন বড় মানুষ হিসেবে। আমি তাকে সবচেয়ে পছন্দ করি তার বিনয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকতে পারার মানসিকতার কারণে। এবং অবশ্যই তার নেতৃত্বের কারণে। তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন লিডার। তিনি অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। আজ সমাজে এমন মানুষের বড় অভাব। 

এ কথা ঠিক, মাশরাফি তার খেলোয়াড়ী জীবনের শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। এই শেষপ্রান্তে পৌঁছানোর গল্প যেমন সমীহ এবং সম্মানের, তেমনি অসম যুদ্ধের। তাকে মাঠের যুদ্ধের চেয়ে এই দীর্ঘ সময়ে লড়াই করতে হয়েছে ইনজুরির বিরুদ্ধে। তবে সব বাধা অতিক্রম করে মাশরাফি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে যা দিয়েছেন, তা অনন্য। তিনি নবীন খেলোয়াড়ের কাছে আইডল। ইচ্ছা থাকলেও তিনি খেলোয়াড়ী জীবনকে বেশিদূর টেনে নিতে পারবেন না। শরীর এবং বয়স সমর্থন দেবে না।

মাশরাফি যদি ভেবে থাকেন, এখন রাজনীতি করে মানুষের আরো কাছে যাবেন এবং সেবা করবেন। এটা তার অধিকার এবং মহৎ উদ্যোগ। রাজনীতিতে যেভাবে মাটি এবং মানুষের কাছে যাওয়া যায়, অন্য কোনোভাবে সেটা সম্ভব নয়। দেশের রাজনীতি এবং রাজনীতিকদের নিয়ে বহু বিরূপ কথা প্রচার আছে। যার অনেকটাই সত্য। হয়ত বহু দেশে এমন আছে। নিরাপদ দূরত্বে বসে যারা দেশের রাজনীতি এবং রাজনীতিকদের কষে দুটো গালি দেন, তারা কিন্তু ওই গালি দিয়েই ক্ষান্ত, তারা রাজনীতির পরিবর্তন করার জন্য ময়দানে আসেন না। এসি রুমে বসে কথার ফুলঝুরি ফোটানো আর মুচি-মেথর, কৃষক-শ্রমিকের সঙ্গে থেকে তাদের মন জয় করে ভোট আদায় করা- দুটিতে বিস্তর পার্থক্য। গণমানুষের মধ্যে মিশে থাকার দুঃসাসহস সবাই দেখাতে পারে না। যেটা মাশরাফি দেখিয়েছেন। অভিনন্দন তাকে।

রাজনীতির মাঠ ক্রিকেটের মাঠের চেয়ে কঠিন এবং জটিল। তবে সেই মাঠেও অনেকে সফল যে হন, তার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বাংলাদেশেও সফল হওয়ার উদাহরণ আছে। সবচেয়ে বড় কথা, চরিত্রে এবং মননে পরিচ্ছন্ন একজন মানুষ রাজনীতিতে নেমেছেন, তিনি রাজনীতিকে আরো পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টা করবেন, সেটাই সকলের প্রত্যাশা।

মাশরাফি যখন রাজনীতিতে নেমেছেন, তখন তিনি জাতীয় দলের অধিনায়ক এবং বেতনভুক্ত খেলোয়াড়। এর আগে কেউ খেলা চলমান রেখে রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন কি না, আমি জানি না। সম্ভবত তেমন দৃষ্টান্ত নেই। তার এই সিদ্ধান্ত আমাকে আহত করেছে। সম্ভবত আমার মতো অনেককে।

জানি না মাশরাফি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব দিক বিবেচনা করেছিলেন কি না? এমন সিদ্ধান্তে তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে নিশ্চয়। তিনি হয়ত কয়েক মাসের মধ্যে অবসর নেবেন। কিন্তু দেশের ক্রিকেটকে অনেক কিছু দেওয়ার মধ্যেও একটা ‘অপসংস্কৃতি’ও ঢুকিয়ে দিলেন। এটা প্রতিষ্ঠা পেল- জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড় সুযোগ পেলে এমপি বা মন্ত্রী হতে পারেন। এর জন্য তাকে অবসর নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এতে দলে শৃঙ্খলা নষ্ট হবে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতি প্রকাশ্যে চলে আসবে।

ভবিষ্যতে যখন এমন পুনরাবৃত্তি ঘটবে অথবা দলের কোন খেলোয়াড় কোন দলের সমর্থক সেই বিবেচনায় মূল্যায়ন করা হবে, তখন বারবার ঘৃণাভরে উচ্চারিত হবে মাশরাফির নাম। আমি মনে করি, মাশরাফির উচিত এখনি অবসরের ঘোষণা দেওয়া। এটা মঙ্গলজনক তার জন্য, দেশের ক্রিকেটের জন্যেও।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ নভেম্বর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়