ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চলচ্চিত্রের সুদিন আর ফিরবে কি?

অলোক আচার্য || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১১, ৩ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চলচ্চিত্রের সুদিন আর ফিরবে কি?

অলোক আচার্য : বিনোদনের একটি বড় মাধ্যম চলচ্চিত্র। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশে ভালো মানের চলচ্চিত্রের সংখ্যা কম। দুই ঈদের আগে কয়েকটি নতুন সিনেমার প্রচার দেখা গেলেও সারা বছর বলতে গেলে নতুন কোনো সিনেমার দেখা মেলে না। নতুন চলচ্চিত্র দর্শক মহলে আলোচনাও সৃষ্টি করতে পারছে না। বাংলাদেশের দর্শক এখন রীতিমত ভারতীয় চলচ্চিত্রের দর্শক। অনেকে এদেশের চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের ঠিকমতো চেনেন বলেও মনে হয় না।

একসময় এদেশের  চলচ্চিত্রের জোয়ার ছিল। নায়ক-নায়িকারা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন। এখন সেরকম কোনো নায়ক-নায়িকা বা পার্শ্ব অভিনেতার দেখা পাওয়া যায় না। নতুন কোনো মুখও উঠে আসছে না। দু’একজনের ওপর নির্ভর করে বাংলা সিনেমা ধুকছে। সিনেমার কাহিনি বা অভিনয়ে বৈচিত্র্য নেই। ফলে একঘেঁয়ে চলচ্চিত্র থেকে মানুষ আজ দূরে সরে গেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সিনেমা নিয়ে তেমন আগ্রহও নেই। অথচ সিনেমার গান মানুষের মুখে মুখে ফিরতো একসময়। আজ সেরকম উল্লেখযোগ্য কোনো উদাহরণ নেই। কারণ চলচ্চিত্রের বাজার এদেশে নষ্ট হয়ে গেছে। দর্শক সিনেমা বিমুখ একথা বলা ঠিক হবে না। বলা যায় দর্শক বাংলা সিনেমা বিমুখ। অথচ এদেশে একসময় প্রচুর ভালোমানের সিনেমা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও সেগুলোর কদর ছিল।

আশি বা নব্বই দশকের কথা। চলচ্চিত্র তখন রমরমা সময় পাড় করছে। একসময় গতানুগতিক সিনেমার সংখ্যা বাড়তে লাগলো। ঘরে তো বটেই, পাড়া বা মহল্লায় ভিসিআর-এর মাধ্যমে শুরু হলো হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনী। ডিশ এন্টিনার মাধ্যমে ঘরে ঘরে পৌঁছে গেল ভারতীয় নাটক, সিরিয়াল, সিনেমা। ফলে এদেশের দর্শক তাদের নিজেদের সিনেমার প্রতি আগ্রহ হারাতে শুরু করল। সঙ্গে যুক্ত হলো মানহীন সিনেমা তৈরির ধারা। এক ধরনের গল্প, না-হয় নকল সিনেমার কারণে দর্শক হলে যাওয়া ছেড়ে দিলো। সিনেমা হলগুলোর শোচনীয় অবস্থাও এজন্য দায়ী। ফলে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেলো। হঠাৎ করেই বাংলা সিনেমায় নেমে এলো অশ্লীলতার হাওয়া। প্রথম প্রথম দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়লো। তবে এই শ্রেণির দর্শক আর পরিবার নিয়ে দেখার দর্শক এক নয়। পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখা মানুষ ভুলে গেলো। তবে হলগুলো রমরমা ব্যবসা করতে লাগলো। কারণ মানুষ যা লুকিয়ে দেখতো তা হলগুলো দেখাতে শুরু করলো। এমনকি রাস্তাঘাটে চলতে-ফিরতে যে পোস্টার চোখে পড়তো সেগুলোও ছিলো অশ্লীল। এভাবেই বাংলা সিনেমার গায়ে অশ্লীলতার তকমা লেগে গেল।

আমি বহুদিন দেখেছি স্কুল-কলেজগামী ছেলের দল হা করে সেসব পোস্টার দেখছে। এভাবেই আমাদের চলচ্চিত্র সংস্কৃতি তার সম্মান হারালো। সিনেমার মাঝে কাটপিসও ঢোকানো হলো। এমনও দেখেছি শেষ পর্যন্ত এক টিকিটে দুই সিনেমা চালাচ্ছে কেউ কেউ। বলাবাহুল্য সেগুলোকে কোনোভাবেই আমাদের সিনেমা বলা যায় না। আজ দেশের সিনেমাসংশ্লিষ্টরা জানেন মাঝখানে একটা বড় ভুল হয়ে গেছে। কেবল লাভের মুখ দেখার জন্য সিনেমা শিল্পটাকেই তারা ধ্বংস করা দিয়েছে। এমন নয় যে দেশে কোনো ভালো সিনেমা নির্মাণ  হচ্ছে না বা মাঝখানেও হয়নি। প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ, তারেক মাসুদসহ অনেক খ্যাত পরিচালক উল্লেখযোগ্য ভালো সিনেমা নির্মাণ করেছেন। এই দেশেই তৈরি হয়েছে বিখ্যাত সব সিনেমা। ছিল বিখ্যাত সব পরিচালক। সেই দিনের গান আজও মানুষের মুখে মুখে। এখনো কিন্তু ভালো ভালো সব সিনেমা তৈরি হচ্ছে। তবে তার খোঁজ মফস্বল অঞ্চলের মানুষ কমই জানে। কারণ বাড়ির টেলিভিশনগুলোতেও বাংলার চেয়ে বিদেশি চ্যানেল দেখার প্রতি আগ্রহ বেশি।

দেশিয় চলচ্চিত্রের প্রতি মানুষের যে স্থায়ী বিতৃষ্ণা জন্মেছে তা ঠিক কবে কাটবে বলা যায় না। তবে আমরা খুব বড় একটি শিক্ষা পেয়েছি। একবার যদি বিশ্বাস উঠে যায় তাহলে ফেরানো কঠিন কাজ। আজও অনেকে ভাবেন সিনেমা হলে সিনেমা দেখা মানে খারাপ কিছু দেখা। বা ছেলেমেয়ে নিয়ে পরিবার নিয়ে একসাথে সিনেমা দেখার সেই পরিবেশ নেই। ধীরে ধীরে আমাদের সংস্কৃতি নষ্টের দিকে যাচ্ছিল তখন কেউ এসে এটি প্রতিরোধ করেনি। কেউ এগিয়ে এসে হাল ধরেনি।

ভালো কাজ, সৃষ্টিশীল কাজের মূল্য যে মানুষের কাছে আছে তা আমাদের পরিচালকেরা সম্ভবত ভুলে গেছেন। এজন্য মেধা খাটাতে হয়। পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু এতো পরিশ্রম করতে আজ আর কেউ রাজি না। কেবল লাভ লোকসানের হিসেব থাকলে ভালো মানের নির্মাণ এবং অভিনয়শিল্পী পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এখনও সময় আছে। চেষ্টা করলেই পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে কথাগুলো ভাবা প্রয়োজন|



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ এপ্রিল ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়