ভারতে এবারও কি মোদি ম্যাজিক?
অলোক আচার্য || রাইজিংবিডি.কম
অলোক আচার্য : বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সাত ধাপের প্রথম ধাপের নির্বাচন দোরগোরায়। নির্বাচনের গরম হাওয়ায় উত্তপ্ত রাজনীতি। ১১ এপ্রিল থেকে শুরু করে শেষ দফার ভোট হবে ১৯ মে। ভোট গণনা হবে ২৩ মে। প্রচার প্রচারণায় দলগুলো মুখর। ভারতের বাজারে ভোটের শাড়ি এসেছে। শাড়ির নাম প্রার্থীদের নামে- প্রিয়াঙ্কা শাড়ি, মমতা শাড়ি, মোদি শাড়ি এসব ভিন্ন ভিন্ন নামে শাড়িগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিজেপি তাদের এক তৃতীয়াংশ এমপিকে প্রার্থী করছে না। ২০১৪ সালে নির্বাচিত ৭১ জন এমপিকে তারা এখন পর্যন্ত বাদ দিয়েছে। মোদি বলছেন, ‘বিজেপিতে পরিবারতন্ত্র চলে না।’ তবে এই পদক্ষেপের পর বিজেপিতে গৃহদাহ বাড়ছে কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে। মোদি ম্যাজিকে ফের বিজেপি না কি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় আসবে তা নিয়েও রয়েছে গুঞ্জন। এবং এটাই এই সময়ে স্বাভাবিক। কথার লড়াই চলছে বিজেপি-কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতর। মোদির ব্যক্তি ইমেজ ভারতের রাজনীতিতে অত্যন্ত শক্তিশালী। তাই ব্যাপক বেকারত্ব ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অসন্তোষের কারণে এবারের নির্বাচনে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা কম হলেও মোদির বিপরীতে ভারতীয়রা কাকে বেছে নেবেন বা কার ওপর তাদের ভবিষ্যত দায়িত্ব অর্পণ করবেন এখনই তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে মোদি বিরোধীদলীয় নেতার চেয়ে এগিয়ে আছেন বিষয়টি বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে।
নির্বাচনের কারণে বিশ্বের দৃষ্টি এখন ভারতের দিকে। ব্যাপক প্রচার প্রচারণা আর অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ ছিল মোদির বিজেপি এবং কংগ্রেসসহ ছোট-বড় সব দলের বিরুদ্ধে।
৫৪৩টি আসনে ভোট দেবেন ৮৪ কোটি ৩০ লাখ ভোটার। এর মধ্যে দেড় কোটি ভোটার এবারই প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। এই তরুণ ভোটাররা নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে বলে থিঙ্ক ট্যাক মনে করছে। বেকার সমস্যাসহ নানা কারণে তরুণ ভোটারদের আশা আকাঙ্খার বাস্তবায়ন এবং বিগত আমলের তরুণদের জন্য নেয়া উদ্যোগ এই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসা তরুণদের প্রতিক্রিয়া দেখলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, তারা সবাই তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সবাই ভাবছেন একটি নিরাপদ এবং কর্মসংস্থানপূর্ণ জীবন। এরসঙ্গে ধর্মীয় উত্তেজনা এবং সাম্প্রদায়িক টানাপোড়েন নিয়েও তাদের উদ্বেগ রয়েছে। কারণ এসব বিষয় সামাজিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তরুণ ভোটার যে কোনো দেশের নির্বাচনেই একটি আলোচিত বিষয়। তারা কি চায় বা তাদের আশা আকাঙ্খার কথা মাথায় রেখেই রাজনীতিকরা প্রতিশ্রুতি দেন। পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হওয়ার পর মোদির অবস্থান অনেক ভারতীয়কে মোদির পক্ষে টেনেছেন বলে ধারণা অনেকের। বিশেষ করে কৃষক ও গ্রামীণ জনগণ তার ওপর আস্থার কথা জানিয়েছেন। যদিও মোদির সময়ে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির বিষয়ে কৃষকদের ভেতর যথেষ্ট অসন্তুষ্টি লক্ষ্য করা গেছে। তারা পদযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছে। তবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অসন্তুষ্টি থাকলেও মোদির দৃঢ়তা তাদের আকর্ষণ করে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রধান প্রার্থীর ওপর ফোকাস করে বিগত ৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। এ নির্বাচনেও তারা মোদিকে ফোকাস করেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছে। পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলার পর দলটির নেতারা দাবি করেছিল ভারত এখন শক্ত ও নিরাপদ নেতৃত্বের হাতে রয়েছে। সব সমস্যার সমাধান হিসেবে মোদিকেই বেছে নিচ্ছে দলটি। বিজেপির শাসনামলে বৈশ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তারা মোটামুটি সফল বলা যায়। মহাকাশসহ প্রযুক্তি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। ফলে তারা মোদি ম্যাজিকেই ভরসা রাখতে চান। বিশ্লেষকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিতে মোদি কেন্দ্রীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনেও ব্যক্তি মোদির প্রভাব থাকবে। কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তার প্রভাব কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে। তবে বিগত নির্বাচনের মতো মোদি এবারও জনগণের মনোযোগ তার দিকে ঘোরাতে পারবেন কি না তা সময় বলে দেবে। কিন্তু সে বারের প্রেক্ষাপট থেকে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কিছু ঘটনা মোদির পক্ষে কাজ করলেও সমালোচনার অভাব নেই।
এদিকে ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে একে অপরের প্রতি বাক্যবাণ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের নাগপুরে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে রাফায়েল নিয়ে তদন্ত হবে। এদিকে আসামের এনআরসি খসড়া প্রণয়ন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বিরোধীরা এর সূত্র ধরেই মোদিকে কড়া আক্রমণ করছে। আসামে জাতীয় নাগরিক তালিকা প্রণয়নের সমালোচনা করে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, কে দেশ ছেড়ে যাবে সে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিতে পারেন না। বিজেপি আবার ক্ষমতায় এলে মোদি সংবিধান অমান্য করতে সব চেষ্টা করবেন। এনআরসি’র প্রসঙ্গটি গত বছর থেকেই আলোচনায়। গত বছরের জুলাই মাসে আসামে খসড়া এনআরসিতে ৪০ লাখেরও বেশি নাম বাদ পরে। যাদের এখন নানা হয়রানি ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। এই ঘটনার পর থেকেই মোদি সরকারের নানা সমালোচনা হচ্ছে। বিরোধীরাও বিভিন্ন সময় মোদি সরকারের সমালোচনা করছেন। বিরোধীদল যতই মোদিকে ‘চাওয়ালা’ বা ‘চৌকিদার’ ডাকুক না কেন তাকে নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তা বিরোধী শিবিরে। মোদিকে নিয়ে যত সমালোচনা হোক না কেন মোদিকে পেরিয়ে যাওয়া কষ্টকর হবে বলেই মনে হয়।
লেখক : সাংবাদিক
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ এপ্রিল ২০১৯/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন