ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে ভাবনা

অলোক আচার্য || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৯, ৩ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে ভাবনা

অলোক আচার্য: বর্তমান বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব দেশে গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমকর্মীদের জোরালো ভূমিকা পালন করতে হয়। আজকের বিশ্বে গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত কর্মীরা কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে বা নিজেরাই নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আজকে আমরা সবাই জানি বা মানি স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। সে হিসেবে এই স্তম্ভটি হওয়া উচিত অত্যন্ত শক্তিশালী। কোনো দেশের উন্নয়নে মুক্ত গণমাধ্যম অন্যতম শর্ত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত রাষ্ট্রে গণমাধ্যমের ভূমিকাও শক্তিশালী হওয়া উচিত। কারণ গণমাধ্যম রাষ্ট্রের পরিচালিত ব্যবস্থার খুঁটিনাটি দিকগুলো চিহ্নিত করে এবং বিশ্লেষণ করে সমাধানের পথ দেখায়। 

গণমাধ্যমের প্রকার এখন বিস্তৃত। টেলিভিশন চ্যানেল, প্রিন্ট পত্রিকা এবং রেডিওর সঙ্গে অনলাইন পত্রিকা, অনলাইন টিভি এবং অনলাইন রেডিও’র সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর নতুন পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। জানার ইচ্ছা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এই সহজাত প্রবৃত্তি পূরণের জন্যই গণমাধ্যমগুলো কাজ করে। এর সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা প্রতিনিয়ত মানুষের তথ্য জানার আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে তা সংগ্রহ এবং প্রচার করে। এই তথ্য জানানোর কাজটি সবক্ষেত্রে সহজ হয় না। অনেক সময় রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে কাজ করতে হয়। হরহামেশাই সাংবাদিককে তথ্য সংগ্রহের সময় হয়রানির শিকার হতে হয়। এত কিছুর পরেও সে বাধা উপেক্ষ করে কাজ চালিয়ে যায়। প্রতিটি মুহূর্তে একজন গণমাধ্যমকর্মীর ঝুঁকির মধ্যে কাজ করে যেতে হয়।

রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক জনগণ। তথ্য জানার অধিকার তাদের রয়েছে। আর তথ্য জানানোর দায়িত্বও রয়েছে। সেজন্য গণমাধ্যমকে সমাজের আয়না হিসেবে পরিগণিত করা হয়। আয়নায় যেমন নিজের অবয়ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে, গণমাধ্যমেও সমাজের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই ছবি ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব নেন গণমাধ্যমকর্মী। দেশে এখন শত শত পত্রিকা। জাতীয়, স্থানীয়, সাপ্তাহিক, মাসিক, পাক্ষিকসহ বিভিন্ন পত্রিকা টেলিভিশন এবং অনলাইনে কাজ করা সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছেন কয়েক হাজার সাংবাদিক। পত্রিকায় কাজ করা প্রান্তিক পর্যায়ের সাংবাদিকদের পরিশ্রম করতে হয় ঠিকই কিন্তু তাদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম। নেই বললেই চলে অনেক ক্ষেত্রে। পত্রিকা প্রকাশের বিজ্ঞাপন দিলে দেখা যায় প্রচুরসংখ্যক আবেদন জমা হচ্ছে মফস্বল প্রতিনিধি হওয়ার জন্য। তারা এটা জানে, এখান থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে না। সাংবাদিকতা বা গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত থাকা সম্মানের-এজন্যই মূলত এত আগ্রহ। একসময় বিষয়টি যখন তার জীবিকার সঙ্গে জড়িয়ে পরে তখন সেই সাংবাদিকের ফেরার আর উপায় থাকে না। সে তার দায়িত্ব পালন করে যায়। আর তখনই তাকে নানাভাবে নির্যাতিত হতে হয়। জেল-জরিমানা, হুমকি সহ্য করতে হয়। তারপরও গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদ সংগ্রহ থেমে থাকে না।

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের সৈনিকদের থেমে থাকলে চলে না। ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হয়। গণমাধ্যম বরাবরই দুর্বলের পক্ষে লড়াই করে। তাই এ পথটা বেশ কঠিন হয়। গণমাধ্যমের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা। রাষ্ট্রের একেবারে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত কোথাও দুর্নীতি বা অনিয়ম হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখা। জনগণ তাদের প্রাপ্য ঠিকমতো পাচ্ছে কি না তাও দেখার দায়িত্ব রয়েছে। গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা সমাজের সবক্ষেত্রে আবশ্যক। সরকারের লক্ষ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে একেবারে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত জনগণকে অবহিত করার কাজটিও গণমাধ্যম করে থাকে। গণমাধ্যম হলো উন্নয়নের অংশীদার। দেশকে উন্নত করতে হলে মুক্ত গণমাধ্যমের বিকল্প নেই। যে দেশ গণমাধ্যমকে মুক্তভাবে মত প্রকাশের সুযোগ দিয়েছে সেসব দেশ এগিয়েছে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই আজকাল মুক্ত গণমাধ্যম চর্চার সুযোগ নিয়ে মূলধারার বাইরের কিছু গণমাধ্যম নামের লেবাসধারী সমাজে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছাড়ানো এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য ছড়ায়। এটা সমাজের জন্য হীতকর নয় এবং গণমাধ্যমের কাজও এটা নয়। তারা গণমাধ্যমের ক্ষমতার অপব্যবহার করে।

অথচ ক্ষমতাকে দায়িত্বে রূপান্তর করা উচিত। কেননা কলম তরবারির চেয়েও শক্তিশালী। এই যে আজ, বাংলাদেশে শত শত গণমাধ্যম রয়েছে,  সাধারণ পাঠকের কতটুকু আস্থা রয়েছে সেগুলোর প্রতি? ভেবে দেখতে হবে। পাঠককে আরো সচেতন হতে হবে। অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে যারা কপি-পেস্ট নির্ভর। বিভ্রান্তিমূলক সংবাদও প্রচার করছে কেউ কেউ। অনেকের পত্রিকার পরিচয় ফেসবুকে খবর শেয়ারের মাধ্যমে সিমাবদ্ধ। তারা গণমাধ্যমের নাম দিয়ে কেবল অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জন করতে এসেছিল বা নিজের পিঠ বাঁচাতে এসেছিল। এসব গণমাধ্যম থেকে সাবধান থাকতে হবে। গণমাধ্যমে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে দেশের শিক্ষিত শ্রেণির ভেতরে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে অনেক তরুণ গণমাধ্যমে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে। বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তাদের আকর্ষণ করছে। এছাড়া নারীদের একটি বড় অংশ এখন গণমাধ্যমে কাজ করছে। দিনদিন এই সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সুতরাং তারা যেন মুক্তভাবে সাংবাদিকতা করতে পারে সেই পরিবেশ রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য প্রদানে আরো সহনশীল হতে হবে। সঠিক তথ্য প্রকাশে গণমাধ্যমকেও আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মে ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়