ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকাতে কারাগার!

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৪, ১৯ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকাতে কারাগার!

শাহিদুল ইসলাম: দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়া। দেশটির ট্রানসিলভানিয়া কাউন্টির একটি ছোট জনপদ বিয়ারটন। গোটা ইউরোপে যেখানে উন্নত শিল্প-বাণিজ্য এবং প্রযুক্তির ছাড়াছড়ি, সেখানে বিয়ারটনের বাসিন্দারা এখনো ঘোড়ায় টানা গাড়ি ব্যবহার করেন। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রয়ের জন্য জড়ো হন গ্রামের একটি নির্দিষ্ট স্থানে।

পনের শতকে তৈরি একটি গীর্জা এবং তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই জনপদের জীবনযাত্রা প্রাচীন কাল থেকেই ইউরোপের অন্যান্য অংশের থেকে আলাদা। ফলে তাদের সমাজ-সংস্কৃতির কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আজও মানুষকে অবাক করে। বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকাতে স্বামী-স্ত্রীকে কারাগারে প্রেরণ ছিল বিয়ারটনের প্রাচীন সংস্কৃতির সবচেয়ে আলোচিত অংশ। এটিকে বলা হতো ‘ম্যারিটাল প্রিজন’।
 
নামে কারাগার হলেও এটি ছিল পনের শতকে তৈরি বিয়ারটন কেন্দ্রীয় গীর্জার একটি ঘর। এই ঘরটিতে বিচ্ছেদের আশঙ্কা তৈরি হওয়া দম্পতিকে ছয় সপ্তাহ পাদ্রীর তত্ত্বাবধানে আটকে রাখা হতো। খাওয়া, ঘুম থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজকর্ম সবই করতে হতো ওই ঘরের মধ্যে।
      
আকারে ছোট রান্না ঘরের মতো এই ঘরটিতে একটি মাত্র চেয়ার-টেবিল, বিছানা ও পানির মশক ছাড়া তেমন কোনো আসবাবপত্র থাকত না। সুতরাং এই বিরূপ পরিস্থিতিতে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সাহায্য করে অতি কষ্টে টিকে থাকতে হতো। এর ফলে তাদের মধ্যে জন্ম নিত এক ধরনের সহমর্মিতা ও প্রগাঢ় ভালোবাসা যা তাদের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সাহায্য করত। 

টানা ছয় সপ্তাহ ওই ঘরে কাটানোর পর স্বামী-স্ত্রী যখন বেরিয়ে আসত তখন তারা আর একে অন্যকে ছেড়ে যেতে চাইতো না। ফলে বিচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা পেত একটি পবিত্র সম্পর্ক। হাফ ছেড়ে বাঁচতেন শিশু কিংবা বয়স্করা। কারণ তারা পারিবারিক জীবনের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। 

দু-এক বছর নয়, টানা তিন শতাব্দী ধরে বিয়ারটনের মানুষ বংশ পরম্পরায় এই রীতি অনুসরণ করেছিল। মধ্যযুগে এই রীতি কাজ করেছিল ওষুধের ন্যায়। প্রাচীন এই রীতির কারণেই বিয়ারটনে তিনশ বছরের ইতিহাসে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিল মাত্র একটি।   

সময়ের সাথে সাথে বিয়ারটনের জীবনযাত্রার অন্যান্য বিষয় মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকলেও এখন আর বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকাতে কোনো দম্পতিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয় না। সেই ঘরটি এখন জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার হয়। কিছু আসবাবপত্র থাকলেও সেখানে মানুষের পরিবর্তে এখন রয়েছে দুটি ম্যানিকুইন।

তবে গীর্জার বর্তমান পাদ্রী উলফ জিগলার মনে করেন, বর্তমানে সমাজে যে হারে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে তাতে করে প্রাচীন ওই রীতি ফিরিয়ে আনা দরকার। কারণ বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকাতে মধ্যযুগীয় ওই পন্থা আধুনিক যে কোনো পন্থার চেয়ে অধিক কার্যকারী হবে বলে মনে করেন তিনি।   

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জুলাই ২০১৭/মারুফ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়