ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ঢাকাই চলচ্চিত্রে বছরজুড়েই ছিল আশা-নিরাশার ছায়া

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫২, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকাই চলচ্চিত্রে বছরজুড়েই ছিল আশা-নিরাশার ছায়া

রাহাত সাইফুল : ডিজিটালের ছোঁয়ায় ঢাকাই চলচ্চিত্র নাজুক অবস্থা কাটিয়ে নতুন সম্ভাবনায় পা দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বেশ কিছু ব্যবসাসফল সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সিনেমা মুক্তির সংখ্যা কম।

চলচ্চিত্রের মন্দার বাজারে আশা আর অপেক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ২০১৮ সাল। চলতি বছরের প্রথম মাসের দুই সপ্তাহ প্রেক্ষাগৃহে চলেছে মানহীন দেশি সিনেমা। আর বাকি দুই সপ্তাহ চলেছে কলকাতার সিনেমা। তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে এসে দেশি সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে ব্যর্থ হয়। সাফটা চুক্তির মাধ্যমে কলকাতার দুটি সিনেমা বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশি ও বিদেশি সিনেমা না থাকায় সিনেমা শূন্য হয়ে পড়ে প্রেক্ষাগৃহগুলো। বাধ্য হয়ে পুরোনো সিনেমা দিয়ে হলগুলো সচল রাখেন কর্তৃপক্ষ। দুই ঈদ ব্যতীত বছরজুড়ে এভাবেই সিনেমা খরায় ছিল প্রেক্ষাগৃহগুলো। ঢাকাই চলচ্চিত্রে চলতি বছরের এমন আশা-নিরাশার পরিসংখ্যান নিয়েই সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।

চলতি বছর মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার তালিকা
এ বছর দেশের ৪২টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এগুলো হলো— পুত্র, দেমাগ, পাগল মানুষ, হৈমন্তী, ভালো থেকো, আমি নেতা হব, রাঙা মন, পাষাণ, মাটির প্রজার দেশে, বিজলী, কালের পুতুল, পলকে পলকে তোমাকে চাই, একটি সিনেমার গল্প, প্রেমের কেন ফাঁসি, আলতাবানু, ধূসর কুয়াশা, চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্যা মাইয়া, পাঙ্কু জামাই, কমলা রকেট, পোড়ামন-২, সুপার হিরো, প্রেমিক ছেলে, নামতা, জান্নাত, মনে রেখো, ক্যাপ্টেন খান, বেপরোয়া, ফিফটি ফিফটি লাভ, নায়ক, পবিত্র ভালোবাসা, মাতাল, মেঘকন্যা, সনাতন গল্প, দেবী, আসমানী, মিস্টার বাংলাদেশ, লিডার, পাঠশালা, দহন, পোস্টমাস্টার ৭১, স্বপ্নের ঘর, অর্পিতা।

আমদানি করা হয়েছে ১১ টি সিনেমা। এগুলো হলো- জিও পাগলা, ইন্সপেক্টর নটি কে, চালবাজ, সুলতান, ভাইজান এলো রে, ফিদা, পিয়া রে, নাকাব, ভিলেন, গার্লফ্রেন্ড, আমি শুধু তোর হলাম। যৌথ প্রযোজনার নীতিমালার কারণে ২০১৮ সালে কমে গেছে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণ। পুরো বছরে মাত্র তিনটি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মিত হয়েছে। এগুলো হলো-তুই শুধু আমার, নূরজাহান ও স্বপ্নজাল।

আলোচিত সিনেমা
২০১৮ সালে দেশীয় সিনেমা মুক্তি পেয়েছে মাত্র ৪২টি। আমদানি করা হয় ১১ টি। বাংলাদেশ ও ভারতে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা মুক্তি পায় ৩টি। এসব সিনেমার মধ্যে বছরজুড়ে আলোচনার শীর্ষে ছিল ‘স্বপ্নজাল’, ‘পোড়ামন-২’, ‘ভাইজান এলো রে’, ‘দেবী’, ‘দহন’, ‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’ নামের সিনেমাগুলো। সিনেমাগুলোর শুটিংয়ের শুরু থেকেই দর্শকদের আগ্রহ তৈরি হয়। এর মধ্যে ‘পোড়ামন-২’ সিনেমাটি আলোচনার পাশাপাশি ব্যবসায়ীকভাবেও সফল হয়েছে বলে জানা যায়। এ তালিকার বাকি সিনেমাগুলোও দর্শকদের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছে। এছাড়া ‘ক্যাপ্টেন খান’, ‘নায়ক’, ‘মাতাল’, ‘জান্নাত’ নামের সিনেমাগুলো আলোচনায় থাকলেও ব্যবসায়িকভাবে সফল হতে পারেনি।

আলোচনা হলেও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ
চলতি বছরের অধিকাংশ সিনেমাই মানহীন ‘বস্তাপঁচা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা। তা ছাড়া ‘আমি নেতা হবো’, ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া, নোয়াখাইল্যা মাইয়া’, ‘মনে রেখ’, ‘সুপার হিরো’, ‘বিজলী’, ‘নাকাব’, ‘একটি সিনেমার গল্প’ নামের সিনেমাগুলো নিয়ে দর্শক মনে প্রত্যাশা ছিল আঁকাশচুম্বি। কিন্তু সিনেমার গল্প ও নির্মাণ দুর্বল হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে সিনেমাগুলো।

মুক্তির অপেক্ষায়
চলতি বছরের এখন পর্যন্ত সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়া সিনেমার তালিকায় রয়েছে-‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’, ‘রাত্রীর যাত্রী’, ‘ভালোবাসা ডটকম’, ‘ডনগিরি’, ‘কালো মেঘের ভেলা’, ‘নীল ফড়িং’, ‘বীর যোদ্ধা’, ‘নামতা’, ‘চল যাই’, ‘আলফা’, ‘রাজশাহীর রসগোল্লা’, ‘আই এ্যাম রাজ’, ‘অনুপ্রবেশ’, ‘হৃদয় ছোঁয়া কথা’সহ কয়েকটি সিনেমা। এদিকে ‘অন্ধকার জগত’, ‘নোলক’, ‘একটা প্রেম দরকার’, ‘বাহাদুরি’, ‘প্রতিশোধের আগুন’, ‘বয়ফ্রেন্ড’, ‘আমার মা আমার বেহেশত’, ‘আমার কোন টেনশন নাই’, ‘ডেঞ্জার জোন’, ‘ভোলা’, ‘শশুড়বাড়ি জিন্দাবাদ-২’, ‘দাগ’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘মাই ডার্লিং’, ‘হৃদয় জুড়ে’, ‘পাগলামী’, ‘জান রে’, ‘বেসামাল’, ‘নদীর বুকে চাঁদ’, ‘সোঁয়াচান পাখি’, ‘এদেশ তোমার আমার’, ‘স্বামীভাগ্য’, ‘লাভ ইউ’, ‘বন্ধন’, ‘রাগী’, ‘তোলপাড়’, ‘বীরমাতা’, ‘প্রেমের বাঁধন’ সিনেমার শুটিং চলছে।

এভাবে সিনেমার খরা চলতে থাকলে হল মালিকদের লোকসান গুনতে গুনতে একসময় প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে দিতে হবে বলে ধারণা করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। তারা আরো মনে করেন, প্রযোজকের লগ্নিকৃত অর্থের ন্যায্য অংশ ও সিনেমার টিকিট বিক্রির সচ্ছতার ব্যবস্থা থাকলে প্রযোজক অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম হবে। মানসম্পন্ন নতুন সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে দর্শক আবার হলমুখী হবেন। ফলে হল মালিকদের লোকসান গুনতে হবে না, প্রযোজকরাও ফিরে পাবেন তাদের লগ্নিকৃত অর্থ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ ডিসেম্বর ২০১৮/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়