বর্ষবরণে জঙ্গিবাদ নির্মূলের প্রত্যয়
ডেস্ক রিপোর্ট : সারা দেশে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাস নির্মূল করার জন্য এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে উদযাপন করা হয়েছে বাঙালির ঐতিহ্যের বর্ষবরণ উৎসব। নানা লোকজ আয়োজনে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ।
ফরিদপুর : ফরিদপুর শহরের স্বাধীনতা চত্বরে সকাল ৭টায় ফরিদপুর সাহিত্য সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনকালে মন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে আমাদের শিক্ষা সংস্কৃতি মিলিয়ে বৈশাখের আচার অনুষ্ঠান করে থাকি। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে বৈশাখের কোনো সংঘাত নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই উৎসবে সকল ধর্মের, শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে মিলে গেছে।’
সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজের সভাপতিত্বে এ সময় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লোকমান মৃধা, পুলিশ সুপার সুভাষ সাহা উপস্থিত ছিলেন।
পরে স্বাধীনতা মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আবৃত্তি ও গানসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। বর্ষবরণ উৎসবে অংশ নেওয়া মানুষ মনে করেন, মানুষের মিলন মেলায় চেতনার যে জোয়ার বইছে, সেই জোয়ারের তোড়ে এ দেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নিপাত যাবে।
বেলা পৌনে ৯টার দিকে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।
বাগেরহাট : বাগেরহাটে বর্ষবরণ উপলক্ষে সাতদিন ব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মেলা উদযাপন পরিষদ।
সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়াম থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা পরিষদ মাঠে এসে শেষ হয়। এতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
ফিতা কেটে সাতদিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজ্জাম্মেল হোসেন। বাগেরহাট জেলা পরিষদ মাঠে ও স্বাধীনতা উদ্যানে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
অন্যদের মধ্যে বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হ্যাপী বড়াল, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মেলায় শহরের ১৯টি সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে রয়েছে লালনগীতি, পল্লীগীতি, যাত্রাগান, পালাগান, পটগান, জারিগান, কবিগান ও পদাবলী কীর্ত্তন গান। প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্বাধীনতা উদ্যানে অনুষ্ঠান শুরু হবে।
নববর্ষ উপলক্ষে হা ডু ডু ও লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) গোল চত্বরে বৈশাখী শোভাযাত্রার মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোর অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি চুয়েট আবাসিক গোল চত্বর থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এ সময় উপাচার্য উপস্থিত সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
চুয়েটে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে পান্তা-ইলিশ, বাউল উৎসব, ঘুড়ি উৎসব, শিশু-কিশোরদের অনুষ্ঠান, লটারি ড্র, বৈশাখের আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং লোকসঙ্গীতের অনুষ্ঠান।
গোপালগঞ্জ : সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গোপালগঞ্জ শহরের লেকপাড়ে শিল্পকলার উদ্যোগে ‘এসো হে বৈশাখ...’ গানের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
এ ছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিবেনী সাংস্কৃতিক সংস্থা, এস এম সরকারী মডেল স্কুল, বিনাপানী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, অর্ণিবান স্কুল, সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহরে পৃথকভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের প্লাকার্ড, ব্যানারে বিভিন্ন ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করে।
পরে বাঙালির প্রাণের এই উৎসবে সকলকে পান্তা-ইলিশ পরিবেশন করা হয়। বিকেলে স্থানীয় শেখ রাসেল শিশু পার্কে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ শহরের ওয়াজির আলী স্কুল মাঠ থেকে সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
বিভিন্ন সংগঠন অসংখ্য মুখোশ, হরেক রকম পুতুল, কাগজ দিয়ে তৈরি পাখি নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই, জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান প্রমুখ।
পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্বরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরে উদ্বোধন করা হয় ১৫ দিন ব্যাপী বৈশাখী মেলার। জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নানা আয়োজনে বর্ষবরণ উদযাপন করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম শহরের স্বাধীনতার বিজয় স্তম্ভ থেকে সকালে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এর নেতৃত্ব দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী, জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রেসক্লাব, প্রচ্ছদ কুড়িগ্রাম, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, কুসাক্রী সংসদ, জীবিকা, সলিডারিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের শত শত মানুষ অংশ নেন। সুর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে শুরু হয় বর্ষবরণের প্রভাতী অনুষ্ঠান।
মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে কুড়িগ্রাম পৌরসভায় পান্তা ইলিশ ভোজের আয়োজন করা হয়। কুড়িগ্রাম পৌরসভায় আয়োজন করা হয়েছে মাসব্যাপী বৈশাখী মেলার।
লক্ষ্মীপুর : জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে সকালে এক শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
শোভাযাত্রায় ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা, পালকি, বর-কনে, রাজা-সেপাই সাজে সজ্জিত ছিল অনেকে। বহন করা হয় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম, বাঙালি সংস্কৃতির পরিচয়বাহী উপকরণ, মুখোশ ও নানা প্রাণির প্রতিকৃতি।
শোভাযাত্রা শেষে আদর্শ সামাদ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে তিন দিন ব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
মাগুরা : জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের নোমানী ময়দান থেকে সকাল সাড়ে ৮ টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।
শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান, পুলিশ সুপার মুনিবুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক খোন্দকার আজিম আহমেদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুন্ডু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রোস্তম আলীসহ বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ অংশ নেয়।
শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নোমানী ময়দানে এসে শেষ হয়। সেখানে মুড়ি, থৈ, সাস ও বাতাসা দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের আপ্যায়ন করা হয়।
এ ছাড়া জেলা জজসীপ, মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মাগুরা আদর্শ কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। জেলা প্রশাসন, জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সারেগামা সংগীত নিকেতন ব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করে।
সাতক্ষীরা : জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সকাল পৌনে ৭টায় সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ শেষে সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে শেষ হয়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
পরে সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। উদ্বোধন শেষে জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দীনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন, পৌর মেয়র আলহাজ্ব তাজকিন আহমেদ চিশতি, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী এ এন এম মইনুল হোসেন প্রমুখ।
শেরপুর : শেরপুরে শিশু আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার আনন্দমেলার উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ টি এম জিয়াউল ইসলাম।
জেলা প্রশাসন ও জেলা শিশু একাডেমী আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্কুল-মাদ্রাসার দুই শতাধিক শিক্ষার্থী দড়ি লাফ, দৌঁড়, মোরগ লড়াই, ঘুড়ি উড়ানো, বউচি, হাড়ি ভাঙা, যেমন খুশি তেমন সাজ, খেলাধুলা অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানে জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আসলাম খান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মানিক দত্তসহ শিশুদের অভিভাবকরা উপস্থিত।
সিরাজগঞ্জ : দিনের শুরুতে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে হৈমবালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রশাসনিক চত্বর থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সংসদ সদস্য সেলিনা বেগম স্বপ্না, জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা, পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য্য, মোস্তফা কামাল খান প্রমুখ।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ জেলা শহরে সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী প্রমুখ।
হবিগঞ্জ জেলা জুড়ে মূল উৎসব উদযাপন করা হলেও বৃন্দাবন কলেজ, গ্রীনল্যান্ড পার্ক, সাতছড়িসহ শহরতলীর অর্ধশতাধিক স্থানে উৎসবসহ মেলা চলছে।
এ সব স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে বর্ষবরণ উদযাপনের লক্ষ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ এপ্রিল ২০১৭/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন