ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনকেও পাশে পাওয়ার আশা আ.লীগের

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনকেও পাশে পাওয়ার আশা আ.লীগের

নিজস্ব প্রতিবেদক : রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বজনমত আমাদের পক্ষে। তাই চীনকেও পাশে পাওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ত্রাণ ও  সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পাঁচ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে। রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযানের খবর পাচ্ছি। আমরা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এরপর বর্তমান সরকারের সময়ে আমাদের ওপর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসলো রোহিঙ্গাদের নিয়ে। আমরা চ্যালেঞ্জগুলো ঠা-া মাথায় অতিক্রম করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট কত দীর্ঘায়িত হবে আমরা তা জানি না। তবে আশার কথা হচ্ছে জাতিসংঘ, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতসহ বিশ্ব জনমত আমাদের পক্ষে, আশা করছি চীনকেও পাশে পাবো।’

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে তাতে বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে আছে বলে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও রাশিয়া ভেটো দিতে পারে বলে আমরা প্রথমে মনে করেছিলাম। কিন্তু এই প্রথমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ার বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে। মিয়ানমারের পক্ষে কেউ অবস্থান নেননি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের একটা শক্তিশালী টিম চীন যাচ্ছে। সেখানে দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও অবশ্যই রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হবে। এছাড়াও আগামী মাসে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের আমন্ত্রণে একটি টিম ভারত যাবে। আগামী মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের পরেই এ সফর হবে বলে আমরা আশা করি।’

রোহিঙ্গাদের জন্য বিএনপির ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগের প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘বিএনপি তো ত্রাণ দিতে যায় না, তারা যায় কয়েকটা নিউজ আর ছবির জন্য। এরপর দলীয় কার্যালয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করে।’

বিএনপির ত্রাণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে  কাদের বলেন, ‘কতকগুলো ট্রাক সাজিয়েছে, ওখানে যাবে। এর ভিতরে কি আছে, না আছে? অনেক কথা আছে সেগুলো বলতে চাই না। সেখানে আদৌ ত্রাণ ছিল কিনা, অনেক কিছু থাকলেও থাকতে পারে। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।’

ত্রাণ বিতরণের নিয়ম না মানায় বিএনপি বাধার সম্মুখীন হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটা রুলস এন্ড রেগুলেশন আছে। নিয়ম আছে। আমি যে ত্রাণ দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী যে ত্রাণ দিয়েছেন। সব ত্রাণ সেখানে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে, এই কমিটির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে পাঠাতে হয়। সেটি সবাই করে আসছে। আমার ত্রাণও আমি সঙ্গে নিয়ে যাইনি। আমি যে ত্রাণ দিয়েছি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগসহ সকল ত্রাণ জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে যে কমিটি সে কমিটির মাধ্যমে সমন্বয় করে দেওয়া হয়েছে। আমরা ওখানে দাড়িয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছি। এটা হচ্ছে নিয়ম কিন্তু বিএনপি নিয়ম মানতে চায় না।

আমি এজন্যই বলেছি, এটা তাদের দায়সারা গোছের, লোক দেখানো, প্রতারণা। তারা যদি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যে কমিটি এই কমিটির কাছে, তারা কত ত্রাণ দিচ্ছে, কি দিচ্ছে, এগুলো জমা দিত তাহলে ওখানে পৌঁছে যেত। আমাদের বেলায়ও সেটা হয়েছে। বিএনপির বেলায় এটা হত। এটা তো মানবিক সাহায্যের বিষয়, এখানে আমরা রাজনীতি করব কেন?’

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য বিরাট একটি চ্যালেঞ্জ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা একা এটা মোকাবেলা করব, এটা তো আমরা কখনো ভাবিনি। আর বিএনপি ওখানে মানবিক সাহায্য নিয়ে গেলে, কেন আমরা বাধা দিব? এই অমানবিক ব্যবহার আমরা কেন করব? কিন্তু তারা তো এখানে রাজনীতির জন্য গেছে। তা না হলে তারা নিয়ম মানত। নিয়ম অনুযায়ী তারা ওখানে ত্রাণ দিত। তারা ওখানে যাবেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ জানে না।’

তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা রওনা দিলেন ওখানে যাওয়ার উদ্দেশে। আপনারা কি ভাবতে পেরেছেন, ওখানে কি ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। কত লোক না খাওয়া, প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের ¯্রােত আসছে। এই ট্রাকগুলো সব লুটপাট হয়ে যেত এবং যারা নিয়ে যেত তাদের জীবন সংশয় সৃষ্টি হতো। আমি নিজে ওখানে কয়েকবার গেছি, বাস্তবতা এই। ঢাকায় বসে সবকিছু উপলব্ধি করা যায় না।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপির নেতাদের তো সিকিউরিটির ব্যাপার আছে। আমি এ কথাগুলো কোন প্রকার ভনিতা নিয়ে বা মিথ্যাচার করার জন্য বলছি না। সেখানে যে পরিবেশ এই পরিবেশে ২০/২৫টি ট্রাক গেলে কি অবস্থা হত, যখন তারা বুঝত ট্রাকে খাদ্য আছে। অথচ বিএনপি বিষয়টিকে রাজনীতিতে নিয়ে গেছে। এটা একটা মানবিক সমস্যা। এটা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক না। সস্তা রাজনীতি সবক্ষেত্রে করা উচিত নয়।’

পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সাহায্যের নামে চাঁদাবাজির মহোৎসব যেন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, ‘এক্ষেত্রে চাঁদাবাজি বা জোর-জবরদস্তি সহ্য করা হবে না। এটি তো মানবিক ব্যাপার, যারা স্বেচ্ছায় সাহায্য করবে, সেটিই কেবল আমরা গ্রহণ করব।’

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আর আওয়ামী লীড়ের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির পক্ষ থেকে আসন্ন শীতকে সামনে রেখে প্রায় ২০ হাজার কম্বল রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান।

দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে এসময় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭/নৃপেন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়