ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

একমাত্র সন্তানকে কিভাবে মানুষ করবেন?

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২০ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একমাত্র সন্তানকে কিভাবে মানুষ করবেন?

প্রতীকী ছবি

ঝুমকি বসু : সবরকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মানুষ করার জন্য আজকাল অনেক মা-বাবাই একটি মাত্র সন্তান চাইছেন। আবার তাদের মনে কিছুটা শঙ্কাও থেকে যাচ্ছে একমাত্র সন্তান মানেই বুঝি একরোখা, জেদি আর বদমেজাজি। তাছাড়া ভাইবোন না থাকায় একমাত্র সন্তানকে ঘিরে থাকবে বুঝি একাকিত্ব।

আপনি যখন সারাদিন অফিসে ব্যস্ত, আপনার সন্তান আপনার জন্য বাড়িতে অপেক্ষা করছে। স্বামী-স্ত্রী দুজন এমন ব্যস্ত থাকলে সমস্যা আরো গুরুতর। বাবা-মায়ের মনে তখন সন্তানের একাকিত্ব নিয়ে চিন্তা থেকেই যায়। হয়তো আপনার সন্তান নতুন কিছু বানাতে শিখল বা হঠাৎ ওর কোনো বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া হওয়ায় খুব মন খারাপ হয়ে গেল, ওর এমন আনন্দ-বেদনা শেয়ার করার জন্য বাবা-মাকে তখন পাশেই পেল না। দিনের পর দিন এমন চললে শিশুর অন্তর্মুখী হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

একমাত্র সন্তানকে সঠিকভাবে মানুষ করাটাই জীবনের একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কীভাবে সামাল দেবেন সন্তানের সমস্যাগুলো? আপনার জন্য রয়েছে কিছু পরামর্শ।

* মনোযোগ দিন
একমাত্র সন্তানের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল বাবা-মায়ের আদর-ভালোবাসা অন্য কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হয় না। তবে একমাত্র সন্তান বলেই যা চাইবে তাই দেওয়া ঠিক নয়। পাওয়ার অনুভূতি যেমন জীবনে থাকবে, সেই সঙ্গে না পাওয়ার অনুভূতি উপলব্ধি করাটাও জীবনে খুবই জরুরি। ও যখন আপনার সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে চাইবে, তখন মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনুন। ওর যেহেতু কোনো ভাইবোন নেই, তাই সব কথা সে আপনাদের কাছেই বলতে চাইবে। আপনার অনেক কাজের ফাঁকেও ওর কথাগুলো শোনার জন্য প্রতিদিন কিছুটা সময় রাখবেন, তাহলে ও নিজেকে একা মনে করবে না।

* সন্তানকে ব্যস্ত রাখুন  
নানা কাজে সন্তানকে ব্যস্ত রাখুন। সকাল থেকে ঘুমাতে যাওয়া অবধি কী কী কাজ করবে তার একটি তালিকা তৈরি করে দিন। সন্তানকে সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিন। ওর অবসর সময় কেটে যাবে এটা নিয়েই। আর গঠনমূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে তা ওর পজেটিভ এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করবে। 

* মূল্যবোধ গড়ে তুলুন  
সন্তানের মধ্যে ছোট থেকেই মূল্যবোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। এই মূল্যবোধই ওকে ভালো আর খারাপটা চিনতে সাহায্য করবে। আপনি যদি সবকিছু ঠিকঠাক বিচার করার দৃষ্টিভঙ্গিটা ওর মধ্যে গড়ে তুলে দিতে পারেন, তাহলে ওর পরবর্তী জীবনে তা ওকে সঠিক পথ দেখাতে পারবে। সবকিছু ওকে হাতের কাছে দিয়ে দেবেন না। ছোট থেকেই শেখান জীবনে অনেক কিছুই অর্জন করে নিতে হয়, চাইলেই পাওয়া যায় না।

* আত্মরক্ষা শেখান  
আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার একমাত্র সন্তান যাতে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে তার জন্য ওকে আত্মরক্ষা করতে শেখান। বয়ঃসন্ধির শুরু থেকেই শারীরিক, মানসিকভাবে যাতে আপনার সন্তান নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে, সেই সচেতনতা ওর মধ্যে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। সন্তান একটু বড় হলেই আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয়-স্বজন সবার সঙ্গে মেলামেশা করার সময় শারীরিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখতে শেখান। রাস্তায় চলাফেরা করার সময় সিগন্যাল দেখে রাস্তা পার হওয়া, অচেনা কেউ কিছু খেতে দিলে না খাওয়া, গলি বা অন্ধকার রাস্তার বদলে মেইন রাস্তা দিয়ে হাঁটা, বিপদে পড়লে ফোন করা এগুলো মেনে চলতে শেখান।

* সন্তানকে তার শখের কাজে উৎসাহ দিন
কেউ ছবি আঁকে, কেউ গান বা নাচ করে, কারো আবার এমন তথাকথিত শখ নাও থাকতে পারে। আপনার সন্তান হয়তো ইট, কাঠ বা কাদা দিয়ে আনাড়ি স্ট্রাকচার বানাতে ভালোবাসে। এর জন্য বকাবকি করবেন না, বরং ওকে উৎসাহ দিন। কারণ এটাও হতে পারে ওর ভবিষ্যত প্রতিভার পরিচায়ক। তবে মনে রাখবেন, সন্তানের শখের কাজে উৎসাহ দেওয়া মানেই কিন্তু এই নয় যে সেখানেও আপনি ওকে প্রথম হওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করবেন। সৃজনশীল কাজের তুলনামূলক বিচার করবেন না। কিন্তু ওর আগ্রহ বাড়িয়ে তোলার জন্য ওকে বিভিন্ন নতুন তথ্য জানার সুযোগ করে দিন। পেন্টিং এক্সজিবিশন, জলশা, পাপেট শো, মঞ্চনাটক এগুলো দেখতে ওকে নিয়ে যান। সন্তানের পছন্দের বই, রঙ তুলি ওকে উপহার দিন।

* প্রায়রিটি মেনে কাজ করতে শেখান  
সন্তানকে প্রায়রিটির তালিকা তৈরিতে সাহায্য করুন। প্রায়রিটি মেনে কিভাবে কাজ করতে হয় তাও ওকে শিখিয়ে দিন। এতে আপনি ব্যস্ত থাকলে ও নিজেই গুরুত্ব অনুযায়ী কাজগুলো করে নিতে পারবে।

* স্পেস দিন  
সন্তানের উপর সবসময় নজরদারি করবেন না। ওকে কিছুটা সময় নিজের মতো করে কাটাতে দিন। ছোট হলেও ওর নিজস্ব একটা জগৎ আছে। সেই জগতে ওকে নিজের মতো করে ভাবতে দিন। সবকিছুতে বাঁধা পেলে ওর আত্মবিশ্বাস ভেঙে যেতে পারে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ নভেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়