ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘প্রতিদিন দশ লক্ষ ভোট কমছে আ.লীগের’

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘প্রতিদিন দশ লক্ষ ভোট কমছে আ.লীগের’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : সরকার কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে, এ অভিযোগ করে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, তাকে প্রতিটি দিন জেলে রাখার জন্য ক্ষমতাসীনদের দশ লক্ষ ভোট কমে যাচ্ছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দলের ঐক্য আরো বেড়েছে বলে দাবি করেছেন মওদুদ আহমদ। ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে নেত্রীকে মুক্ত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ‘স্বাধীনতা হলে’ এক প্রতিবাদী আলোচনা সভায় মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। তাদের (সরকার) উদ্দেশ্য বেগম জিয়াকে কষ্ট দিতে হবে। কিন্তু তাকে যতই কষ্ট দেবেন, আপনাদের ভোট ততই কমবে।’

‘যতদিন তিনি জেলখানায় থাকবেন, আপনাদের ১০ লক্ষ ভোট কমে যাবে। কোনো নেতাকে জেলে রাখলে তার জনপ্রিয়তা কমে না, বরং বাড়ে’, বলেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কী ভাবছে জানি না, কে তাদের বুদ্ধি দিল যে জেলখানায় পাঠাতে হবে। জেলে পাঠালেই মনে হয়, বিএনপি একেবারেই শেষ হয়ে যাবে।  কিন্তু বিএনপির আরো বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ আছে। যেকোনো সময়ের তুলনায় বিএনপি সবচেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং সংগঠিত।’

সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে খালেদা জিয়ার প্রতি নির্যাতন করতে পরিত্যক্ত অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির অন্যতম এই নীতিনির্ধারক।

খালেদা জিয়া মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

‘আমরা এই আন্দোলন চালিযে যাব, যতদিন নেত্রী মুক্ত না হন। তাকে মুক্ত করেই আমরা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। বেগম জিয়া ছাড়া দেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। তিনি ছাড়া আমাদের দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। এজন্য তার মুক্তি প্রয়োজন,’ বলেন প্রবীণ এই আইনজীবী।

‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমনাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাজা : প্রতিহিংসার রাজনীতি’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম’ নামের একটি সংগঠন।

কারাগারে গেলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোবলে কোনো ধরনের আঘাত লাগেনি, জানিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘দেশের জনগণ যা ভাবছে, সরকার তার উল্টো ভাবছে। তারা ভাবছে, খালেদা জিয়াকে যতদিন বেশি জেলে রাখা যায় ততই তার এবং বিএনপির মনোবল ভেঙে যাবে। কিন্তু আমরা তার সঙ্গে দেখা করে দেখেছি, খালেদা জিয়ার মনোবল বিন্দুমাত্র কমেনি, বরং আরো বেড়ে গেছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়।’

কুমিল্লায় নাশকতার মামলায় খালেদা জিয়াকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর প্রসঙ্গ তুলে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘পত্রিকায় দেখেছি, তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। করে দেখুক। এবার আমরা ছাড়ব না। যে আন্দোলনের সূচনা করেছি, এটা চলবে। যেকোনো ভাবেই হোক আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নেব।’

সরকার বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সাড়া না দিলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ইঙ্গিত দেন বিএনপির অন্যতম এই নীতিনির্ধারক।

‘একটা পর্যায়ে গেলে আমাদের চরম কর্মসূচি দিতে হবে, যদি সরকার আমাদের দাবি না মানে। তখন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনকে সফল করতে হবে,’ বলেন তিনি।

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বানোয়াট, মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারা অন্তরালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর পরিণাম, পরিস্থিতি এবং রাজনীতি ভবিষ্যতে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যাতে সরকার তখন বাধ্য হবে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের আয়োজন করার জন্য।’

সরকার খালেদা জিয়ার ডিভিশন প্রাপ্তি নিয়ে প্রথম থেকেই মিথ্যাচার করেছে, অভিযোগ করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘তিন দিন তাকে অমানবিক পরিবেশে ডিভিশন না দিয়ে রাখা হলো। এটি সংবিধান পরিপন্থী। আমি নিজেও কারাগারে গেলে আমাকে ডিভিশন দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন তো কিছু জিজ্ঞাসা করা হলো না। হঠাৎ বেগম জিয়ার সময়ে আইন কোথা থেকে এলো নতুন করে।’

‘ওখানে খুব মশা। সেগুলো কে মারবে। খালেদা জিয়ার নির্জন কারাবাস সংবিধান পরিপন্থী। সরাসরি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘার্ষিক। বেগম জিয়াকে তিনটি কারণে প্রথম দিন থেকেই প্রথম শ্রেণিতে রাখা উচিত ছিল’, বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

খালেদা জিয়াকে কারাগারে কষ্ট দিতে রায়ের কপি দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মওদুদ আহমদ।

‘বৃহস্পতিবারে আমরা রায়ের কপি চেয়েছি আপিল ফাইল করতে। তারা এটা নিয়ে গড়িমসি করছে। প্রত্যাশা কিছু রোববার পাব। বিচারক কোর্ট ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আজকে এখন পর্যন্ত শুনি নাই আমরা পেয়েছি কি না। এটি হলো একেকটা দিন দেরি করলে বেগম জিয়া একটি দিন বেশি কষ্ট পাবেন। এটি তাদের মনের ইচ্ছা, মনে হয়। জেলখানাতেও যদি মানবিক আচরণ না করে তাহলে তো বলব, এই সরকার অমানবিক সরকার, মানবতা বোধ নেই।’

আপিল করলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া সাজার রায় টিকবে না বলে দাবি করেন প্রবীণ এই আইনজীবী।

আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাসির উদ্দিন হাজারীর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা রহমত উল্লাহ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/রেজা/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়