ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আবারও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

বোরবার দুপুরে রাজধানীর ধানন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশে প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারে এক সভায় উক্ত দাবি জানান ওমর ফারুক চৌধুরী।

আগামী ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভা সফল করার লক্ষ্যে এ সভা হয়।

ওবায়দুল কাদের ৭ মার্চের জনসভা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দলীয় নেতাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যে বিজয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি, সেটার প্রধান হাতিয়ার হবে তরুণ ভোটার, ফার্স্ট টাইম ভোটার এবং নারী ভোটার। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। সেটাকে লক্ষ্য রেখেই আপনারা আপনাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবেন।

ওবায়দুল কাদেরের এমন নির্দেশনার বিষয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, আপনি সঠিক জায়গাটি নির্ণয় করেছেন। সমস্যার জায়গাটি আপনি চিহ্নিত করেছেন। সফল হবেন কীভাবে, সে বিষয়ে সাজেশন আছে আমার। সেটা হচ্ছে, চাকরিতে ৩০ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ- এটি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিশ্ব শান্তির দর্শন ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আপনি আমাকে অধিকারবঞ্চিত করছেন। আমাস বয়স ৩০ এর অধিক, আমি আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছি না। চাকরি দেবেন কি দেবেন না, এটা বিষয় নয়। যাদের বয়স ৩০ এর অধিক তারা আবেদন করতে পারে না। তাই ৩০ এর অধিক যাদের বয়স তাদের আবেদন করার সুযোগ দিন। তারা কোনো করুণা চাচ্ছে না। তাহলে এই বয়সসীমার কারণে আমরা তাদের সমর্থন পাব না। এটা আমি বিশ্বাস করি। ৩০ এর বয়সসীমা রাখার দরকার নাই।

এর পরিপেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা তো সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

এর জবাবে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, আপনি সরকারের একজন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ঠিক আছে। আই উইল স্পিক টু পিএম। আমি তার সঙ্গে আলাপ করতে পারব।

গত  বছরের ২৮ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবনের সামনে ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় তিনি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছরের বেশি করার আহ্বান জানান।

এর আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশসীমা বাড়ানোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে সরকার দলীয় সদস্য নুরুল ইসলাম ওমরের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছরে উন্নীত করেছে। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা যা ছিল তাই থাকবে। সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই বলে জানান। এছাড়া জনপ্রশাসনমন্ত্রী ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের আপাতত নেই বলে জানান।

যুবলীগ চেয়ারম্যান চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী  সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের জবাবে বলেন, এত বড় আয়োজনে তরুণদের দেখছি, যুবকদের দেখছি। গত ২০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা নাকি ৩০ বছরের বেশি বাড়ানো যাবে না। কেন, তা জানতে চাই। ৩০ বছরের বেশি বয়সীদের বেদনা কি মাননীয় মন্ত্রী আপনি দেখেছেন? কী কারণে এই তরুণ সমাজ শিক্ষা শেষে পরিবার সমাজ দেশের সম্পদ হওয়ার পরিবর্তে বোঝা হয়ে পড়ছে? এ কথা আপনাকে বলতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অর্জিত বিদ্যা আইনের মারপ্যাঁচে সীমাবদ্ধ ও সুযোগের কাছে পরাজিত হচ্ছে। নানান প্রতিবন্ধকতা জয় করে, স্নাতক শেষে অর্জিত বিদ্যা দেশ ও জাতির কল্যাণের কাজে লাগানোর আগে তাদের স্বপ্ন ঘোর অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর সীমাবদ্ধ থাকার কারণে।’

ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, আইনকে যুগোপযোগী রাখার জন্য সময়ে সময়ে পরিবর্তন-পরিবর্ধন, সংযোজন-বিয়োজন করার প্রয়োজন পড়ে। সময়ের আলোকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এমনই একটি আইন, যা পরিবর্তনের মাধ্যমে ৩০ থেকে বাড়াতে হবে  আপনাকে।

তিনি আরো বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের দিকে থাকান। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো সীমারেখা নির্দিষ্ট করা নাই। কোনো কোনো দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ আছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০ বছর। বিভিন্ন রাজ্যে ৩৮ থেকে ৪০ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৪৫ বছর, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫, ইতালিতে ৩৫, ফ্রান্সে ৪০, যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর আর সবোর্চ্চ ৫৯ বছর। কানাডার ফেডারেল পাবলিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে কমপেক্ষ ২০ বছর, সর্বোচ্চ ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে নয় এবং সিভিল সার্ভিসে সর্বনিম্ন ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছর সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যায়।’

ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন- দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, আবদুস সোবহান গোলাপসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা।  ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার আওয়ামী লীগ নেতা, দলীয় সংসদ সদস্য, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও সভায় অংশ নেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ ডিসেম্বর ২০১৮/নৃপেন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়