ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিএনপি আগের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ, বললেন নেতারা

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিএনপি আগের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ, বললেন নেতারা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে বিএনপিতে বিভেদের রাজনীতির ‘সমাপ্তি ঘটেছে’ জানিয়ে দলটির নেতারা বলেছেন, যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন দলটি অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী।

শান্তিপূর্ণ অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র এবং খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করবেন, এমন প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছেন তারা। এ সময় ক্ষমতাসীনদের কোনো ধরনের উসকানি ও ফাঁদে পা না দিতে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলটির নেতারা এ কথা বলেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) ভেবেছিল দেশনেত্রীকে (খালেদা জিয়া) জেলে নিয়ে বোধ হয় বিএনপি ভেঙে যাবে। কিন্তু বিএনপি ভাঙেনি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমরা নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি। বিএনপি এখন আগের চেয়ে আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ, আরো বেশি শক্তিশালী।’

বর্তমান সময়কে মোকাবিলা করা বাংলাদেশের জন্য ‘সবচেয়ে বড় পরীক্ষা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সময়। এই যে আমরা সংগ্রাম করছি তা বিএনপির নয়, খালেদা জিয়ার নয়, এই সংগ্রাম এই দেশকে রক্ষা করার সংগ্রাম, দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রাম।’

খালেদা জিয়াক কারান্তরীণ করার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকেও বন্দি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র লুণ্ঠিত হয়ে গেছে। মানুষের সব ধরনের অধিকার আজ হরণ করা হয়েছে। দুর্ভাগ্য যে মানুষটি গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আজ কারাগারের অন্ধকারে দিন কাটাতে হচ্ছে।’

খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভোট চাওয়াকে অগণতান্ত্রিক অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘তিনি রাজশাহীতে ভোট চেয়ে বেড়াবেন আর দেশনেত্রী কারাগারে থাকবেন এটা গণতন্ত্র হতে পারে না। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’

এজন্য নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন হবে। তবে তা শান্তিপূর্ণ। নেত্রী বলেছেন, ধৈর্য্য ধরতে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে। এটি মনে রাখতে হবে। সরকার অনেক উসকানি দেবে. ফাঁদ পাতবে। সেই ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার আবারো একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। সেজন্য খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে বলে তারা বিএনপি নেত্রীকে দেশের মানুষের কাছে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশের আপামর মানুষ তা বিশ্বাস করেনি।’

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে ঐক্য আরো জোরালো হয়েছে বলে জানান বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।

বিএনপিতে কোনো ধরনের নেতৃত্বশূন্যতা নেই জানিয়ে দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদও দলের ঐক্যের বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সেই অনুযায়ী দলের শীর্ষ নেতারা দল চালাচ্ছেন। এখানে বসেই যে তাকে (তারেক রহমান) দল চালাতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। প্রযুক্তির এ যুগে সেখান থেকে দল চালানো কঠিন কিছু নয়। বিএনপির এখন যে পরিমাণ ঐক্যবদ্ধ এর আগে ততটা কখনো ছিল না। এভাবেই আন্দোলনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরে আসবে এবং খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসবেন,’ বলেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।

খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলন চলবে বলে জানান মওদুদ।

খালেদা জিয়াকে কারাগারে দিয়ে গণতন্ত্র ও দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা হয়েছে উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) ভেবেছিল খালেদা জিয়াকে জেলে দিলে কোনো নেতা-কর্মী মাঠে নামবে না, তাদের পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাদের সেই আশায় গুড়েবালি। নেতা-কর্মীরা আগের তুলনায় আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ, আরো বেশি শক্তিশালী আরো বেশি রাজপথে।’

মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার স্মৃতিচারণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান নেতারা। তারা বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে জাতিসত্তার উন্মেষ ঘটেছিল। ভাষা শহীদদের প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন হয়েছিল।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক প্রমুখ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/রেজা/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়