ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘সিঙ্গাপুর সৌদি পারলে আমরা কেন পারব না’

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সিঙ্গাপুর সৌদি পারলে আমরা কেন পারব না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে ইটের ব্যবহার বন্ধ করে ব্লকের ব্যবহার করছে। তাহলে আমরা কেন ব্লকের ব্যবহার করতে পারব না। আমাদেরও ইটের ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। এ বিয়য়টি আমি সংসদেও বলেছি।

বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের আয়োজনে ‘পোড়া ইটের বিকল্প কংক্রিট ব্লক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতিমধ্যে ব্লকের ব্যবহার শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে পুনর্বাসন করা হচ্ছে তার সবটাই ব্লকের ব্যবহার হচ্ছে।

এছাড়া নোয়াখালীতে ১০টি বিল্ডিংয়ের কাজ ব্লকের মাধ্যমে করা হচ্ছে। 

ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন বলেন, টেকসই উন্নয়নে পোড়ানো ইটের বিকল্প হচ্ছে কংক্রিট ব্লক। কোনো  ব্রিকস খোয়া দিয়ে রাস্তা তৈরি করবেন না। কারণ এটা দীর্ঘস্থায়ী নয়। এর জন্য আগে ইটের ভাটা বন্ধ করা জরুরি।

মন্ত্রী বলেন, আমি সরকারের লোক হয়েও সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে ব্লক বানাতে যে কাচামালের প্রয়োজন হয় তার ওপর টাক্স সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য।  

সেমিনারে বক্তারা দাবি জানিয়ে বলেন, উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক উন্নয়নশীল দেশেই প্রচলিত ইটের বদলে ভবন নির্মাণে বালি, সিমেন্ট, নুড়িপাথার দিয়ে বানানো ব্লক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে যেমন কমছে কার্বন নির্গমন অন্যদিকে রক্ষা পাচ্ছে ফসলি জমি। ২০২০ সালের পর ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং রিচার্স ইনস্টিটিউটের এক তথ্য উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন, দেশে এখন বছরে কম করে হলেও ১৭ দশমিক ২ বিলিয়ন পিস ইট তৈরি হচ্ছে। প্রতি মিলিয়ন ইট তৈরিতে পোড়াতে হয় ২৪০ মিলিয়ন টন কয়লা। কয়লার পাশাপাশি গ্রামঞ্চলে বনভূমি ধ্বংস করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও বাঁশ। ইটভাটাগুলো থেকে বছর কম করে হলেও ৯ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাইঅক্সাইড নির্গত হচ্ছে বায়ুমন্ডলে, যা দেশের মোট কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের প্রায় ২৩ শতাংশ।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ একর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১৯৮৪ সালে দেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩৮ হাজার একক। ১৯৯৭ সালে এসে কমে তা ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার একরে এবং সর্বোপরি ২০১২ সালে বাংলাদেশের আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫৪ হাজার একর। প্রতি বছর জনসংখ্যা বাড়তির কারণে বাড়তি আবাসন, রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাঠামো নির্মাণে ভূমির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

তারা আরো বলেন, উন্নত-উন্নয়নশীল দেশে ভবন  নির্মাণে বালি, সিমেন্ট ও নুড়িপাথর দিয়ে ব্লক ব্যবহার করছে এতে করে একদিকে যেমন কমছে কার্বন নির্গমন অন্যদিকে রক্ষা পাচ্ছে ফসলি জমি। আমাদের দেশে কংক্রিট ব্লক ব্যবহার ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। নদী থেকে ড্রেজিংসহ করা বালির সাথে সিমেন্ট এবং পাথর কুঁচি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে এসব ব্লক। যা পোড়ানো প্রয়োজন নেই। ইটের চেয়ে বহুগুণেই এই কংক্রিট ব্লক টেকসই, স্বাস্থ্য সম্মত ও পরিবেশবান্ধব। দেশের সার্বিক পরিবেশ ও ফসলি জমি রক্ষাকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা আশা করি বর্তমান জনবান্ধব সরকার একটি সময়োপযোগী নীতিমালা গ্রহণ করে ইটের পরিবর্তে কংক্রিট ব্লক ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করবে।

এ সময় আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-অবিলম্বে সমস্ত সরকারি ও আধা সরকারি ভবনে ইটের ব্যবহার বন্ধ করা। ২০২০ সালের পর ঢাকা সহ সব বিভাগীয় শহরে ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধ করা। ২০২২ সালের পর সকল জেলা শহরে ভবন  নির্মাণে ইট ব্যবহার বন্ধ করা পাশাপাশি ইটের বিকল্প যেকোনো প্রকার ব্লক তৈরির ফ্যক্টরিকে ন্যূনতম দশ বছরের জন্য সব প্রকার ট্যাক্স ও ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল, সাধারণ সম্পাদক মতিন আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ রেডিনিক্স কংক্রিট এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল আউয়াল, নগর পরিকল্পনাবীদ নিয়াজ রহমান, আদিলুর রহমান প্রমুখ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮/হাসিবুল/সাইফ 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়