ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চানাচুর বিক্রেতার জীবনের গল্প

মো. হৃদয় সম্রাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ৭ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চানাচুর বিক্রেতার জীবনের গল্প

মো. হৃদয় সম্রাট : ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ঢাকার শ্রমজীবী মানুষ শুরু করে দেয় তাদের জীবনযুদ্ধ। ভ্রাম্যমাণ নানা ব্যবসা করে অনেক মানুষ করে চলেছে তাদের জীবিকা নির্বাহের কাজ। সেই জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলোর মধ্য জায়গা করে নিয়েছেন চানাচুর বিক্রেতা শামিম মিয়া।

মোহাম্মদপুর মকবুল হোসেন কলেজের সামনে প্রায় ১ যুগ ধরে চানাচুর মাখা বিক্রি করে আসছেন তিনি। প্রতিদিন প্রায় কয়েকশত লোক আসে তার চানাচুর মাখার স্বাদ নিতে। এত মজাদার চানাচুরের স্বাদে আপ্লুত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। তাদের মধ্য একজন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিম আহমেদ বলেন, আমি নিয়মিত এখানের চানাচুর খাই। প্রতিদিনই খাবার সময় নতুন স্বাদ খুঁজে পাই।

এত মজাদার চানাচুর তৈরির রহস্য উন্মোচনের জন্য কথা হয় শামিম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার তৈরি মজাদার চানাচুরের আসলে কোনো রহস্য নেই। আমি সব সময় স্বাস্থ্যকর এবং ভালো মসলা ব্যবহার করে চানাচুর মাখা বানাই। ফলে এর স্বাদটা সবার কাছে ভালো লাগে।

তার এই পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি মুখে একরাশ দুঃখ নিয়ে বলেন, আমার বাড়ি বরিশালে। ছেলেমেয়ে বউ সবাই গ্রামে থাকে। বড় ছেলেটি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে। পড়ালেখার প্রতি তার আবার ভীষণ আগ্রহ।

 



একসময় গ্রামে আমার একটি ছোট মুদি দোকান ছিল। জীবনযাপন ভালোই ছিল। কিন্তু বন্যা আর নদী ভাঙ্গনে সব নদী গর্ভে চলে যায়। অনেক কষ্ট করেছিলাম মুদি দোকানটাকে বাঁচাতে কিন্তু ঋণের দায়ে সেটাও চলে যায় সুদখোর মহাজনের দখলে। চরম অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের।

অভাব অনটন সহ্য করতে না পেরে পকেটে সাতশত টাকা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে চলে আসি চট্টগ্রামে। সেখানে দীর্ঘ ৬ বছর চানাচুর ও ঝালমুড়ি বিক্রি করি। জমিয়েছিলাম বেশ কিছু টাকাও। পরে জমানো টাকা আর ধার করা ৩ লাখ টাকা দিয়ে পাড়ি জমাই বিদেশে নিজের উন্নতির আশায়। কিন্তু বাহরাইনে গিয়ে দেশ থেকে আসার সময় যে ঋণ নিয়েছিলাম সেটা পরিশোধ করতে করতেই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। আমাকে আবার ফিরে আসতে হয় দেশে। দেশে এসে চাকরির সন্ধানে হন্য হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি সব জায়গায়। কিন্তু কোথাও চাকরি না পেয়ে ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরে চানাচুর বিক্রি শুরু করি। আস্তে আস্তে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে আমার। ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে নিজের বড় একটি দোকান দেওয়ার। যাতে করে ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষা দিতে পারি।

ফুটপাতে বসে ব্যবসা করতে গেলে সমস্যা সম্পর্কে তিনি জানান, মাঝে মধ্যে পুলিশ উঠিয়ে দেয় আমাকে। এর জন্য বেচকেনা নিয়ে ভীষণ সমস্যা মধ্য পড়তে হয়। তবে এখানে এখন আমাকে সবাই চিনে তাই আর আগের মতো সমস্যার মধ্য পড়তে হয় না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়