ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রনির কঠোর সাজা চান রুনা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৬, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রনির কঠোর সাজা চান রুনা

মামুন খান : স্বামীর হত্যাকারীর বিচারের আশায় প্রায় চার বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত সালমা বেগম। তবুও থামতে চান না তিনি। আগামীকাল বুধবারও তিনি আসবেন। কাল অবশ্যই রায় ঘোষণা হবে- এটাই তার আশা। তবে তার শঙ্কার কারণ, এর আগে রায় ঘোষণার দিন ধার্য থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।

ভালোই চলছিল তার সংসার। স্বামী ও এক মেয়ে নিয়ে সুখেই ছিলেন তিনি। অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী যা উপার্জন করতেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন সালমা বেগম। তার অন্তর জুড়ে ছিল স্বামী-সন্তানের জন্য ভালবাসা। এরাই ছিল তার একমাত্র পৃথিবী। কিন্তু হঠাৎ একদিন বিপর্যয় নেমে আসে তার পরিবারে। অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় তার স্বপ্ন। এখন তিনি অসহায়, শরীরে বাসা বেঁধেছে নানান রোগ। ওষুধ কেনার তেমন সাধ্য নেই। একমাত্র মেয়ের উপার্জনে বেঁচে আছেন। তার এই পরিণতির জন্য যিনি দায়ী তার কঠোর সাজা হোক সব সময় এই আশা করছেন।

২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে প্রাক্তন সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি একটি কালো রঙের প্রাডো গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম আহত হন। পরে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলা আগামীকাল বুধবার রায়ের জন্য ধার্য রয়েছে। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল ঈমাম এ রায় ঘোষণা করবেন। গত ১৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের এ তারিখ ঠিক করেন।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় নিহত অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলীর স্ত্রী সালমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজ চারটা বছর আদালতে ঘুরলাম। দেখি জজ সাহেব কি রায় দেন, তার রায়ের অপেক্ষায় রইলাম। দু:খে যাদের জীবন ভরা, তাদের আবার দু:খ কিসের। এত কষ্টের পরও তো বেঁচে আছি। শরীরের অবস্থা ভালো নেই। ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার আছে। তার ওপর দুইবার স্ট্রোক হলো। অসুস্থ, কাজকর্ম করে খেতে পারি না। মেয়ের উপরই আছি। আগে এক বাসায় কাজ করতাম, অসুস্থতার কারণে এখন আর তা করতে পারি না।’

ইয়াকুব আলীর মেয়ে রুনা বলেন, ‘ওর (বখতিয়ার আলম রনি) সাজা চাই, আমি ওর ফাঁসি চাই। আমারও একটা ছোট মেয়ে আছে। এতদিন আমার আম্মা একটা বাসায় কাজ করতো। এখন তাও করতে পারে না। আমি গার্মেন্টসে কাজ করে যা উপার্জন করি তা আমার আম্মার পেছনে খরচ হয়ে যায়। উনি হার্টের রোগী; ডায়াবেটিস, প্রেসার আছে; বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত। অসুখ তার লেগেই আছে।’

রুনা বলেন, ‘রায় শুনতে আদালতে যাই কিন্তু রায় হয় না। কাজ বাদ দিয়ে আদালতে আসি। এতে অফিস বেতন থেকে টাকাও কেটে নেয়। এ অবস্থায় আছি। সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হই আর রাত ১২টায় বাসায় আসি।

তিনি বলেন, ‘আমার আব্বা মারা যাওয়ার পর আমি যতটা কষ্ট করছি, রনির যেন উপযুক্ত সাজা হয়।’

জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে রমনা থানায় ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল একটি হত্যা মামলা করেন। ওই বছরের ৩০ মে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে বখতিয়ার আলম রনিকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

মামলাটিতে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই ডিবি পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস রনির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৬ সালের ৬ মার্চ মামলাটিতে এ আসামির অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে আদালত চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন। মামলাটির বিচারকালে আদালত ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর আসামি রনি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

এরপর গত ৮মে মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন বিচারক স্বপ্রণোদিত হয়ে রায় ঘোষণার তারিখ বাতিল করে পুনরায় যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন। পরে ওই আদালতের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের বদলি মিস মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর মামলাটির যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায়ের দিন বৃহস্পতিবার ঠিক করেন। কিন্তু এদিন তা পিছিয়ে গত ১৭ অক্টোবর শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়। এরপর বুধবার (৩০ জানুয়ারি) রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জানুয়ারি ২০১৯/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়