ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা : নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনলেন খালেদা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা : নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনলেন খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্যাটকো দুর্নীতির মামলায় নিজের, ছেলে আরাফাত রহমান কোকো এবং অন্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ শুনেছেন খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে দুদকের পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনান।

এদিন বেলা ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তার গৃহকর্মী ফাতেমাও আসেন। খালেদা জিয়া শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। চার মিনিট পর মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে মামলায় আলামত জব্দ করার কাগজপত্র পাওয়া যায়নি, উল্লেখ করে মামলার কার্যক্রম মূলতবির আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। বিচারক তখন দুদকের আইনজীবীকে অভিযোগ শুনানি করতে বলেন। বেলা ১২টা ৫৫ মিনিট থেকে প্রায় ২টা পর্যন্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনান মোশাররফ হোসেন কাজল।

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ২০০৩ সালের ১ মার্চ তৎকালীন সরকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা আইসিডি টার্মিনাল এবং চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল- শুধু অভিজ্ঞ ইকুইপমেন্ট ওনার্স, ইকুইপমেন্ট সাপ্লায়ার্স, ইকুইপমেন্ট ইউজারস, ইকুইপমেন্ট হ্যান্ডলিং ফার্ম এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিং কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বন্দর ব্যবহারকারীরা এ টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবে। শর্ত অনুযায়ী টেকনিক্যাল বিডের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও এর পরিচালকদের সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতার দলিল অবশ্যই থাকতে হবে এবং অভিজ্ঞতাসংবলিত প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারির পর টেন্ডারে অংশগ্রহণের জন্য কোনোরূপ ইকুইপমেন্টের ওনার/ইউজার/ইকুইপমেন্ট হ্যান্ডলিং ফার্ম হিসেবে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকা এবং পূর্বাপরে বন্দর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্বেও বনানীর জি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ৪৩ নম্বর বাড়ির গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানিকে (গ্যাটকো) কাজ দেওয়া হয়। এর জন্য তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রীর পুত্র সায়মন ও তার মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে নিয়মিত অবৈধ অর্থ প্রদান করেন। গ্যাটকোর পরিচালকদের কারোই টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী ইকুইপমেন্ট হ্যান্ডলিংয়ের অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা শাহজাহান এস হাসিব নামের এক ব্যক্তিকে কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দেখিয়ে টেন্ডারের শর্ত পূরণের চেষ্টা চালান।

তিনি বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সুকৌশলে এ অবৈধ প্রস্তাবটি অভিজ্ঞতাহীন গ্যাটকোর অনুকূলে প্রদানের সুপারিশসহ অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় দরপত্র দলিলের শর্ত অনুযায়ী গ্যাটকোর প্রতিষ্ঠানের মালিক ও পরিচালকদের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কোনো অভিজ্ঞতা নেই মর্মে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। তা সত্বেও ওই দরদাতার প্রস্তাব রেসপনসিভ বিবেচনা করে মন্ত্রিসভা কমিটির ওই সভায় উপস্থিত অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আকবর হোসেন কমিটির সুপারিশ তার পুত্র ইসমাইল হোসেন সায়মনকে অবহিত করেন। সায়মন এক পর্যায়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আনুকূল্য লাভের উদ্দেশ্যে তার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সহায়তা কামনা করেন। কোকো সবকিছু অবগত হন এবং তার মা খালেদা জিয়াকে প্রভাবিত করার বিনিময়ে গ্যাটকো কাজটি পেলে সায়মনের কাছে অবৈধ অর্থের অর্ধেক দাবি করেন। সায়মন এতে রাজি হলে আরাফাত রহমান তার মা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে এ বিষয়ে প্রভাবিত করেন।

তিনি আরো বলেন, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তসহ অন্যান্য আলোচ্য সূচির সিদ্ধান্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে তিনি ‘আলোচ্য বিষয়-৩ সংক্রান্ত সুপারিশ অনুমোদন ছাড়া অবশিষ্ট সুপারিশসমূহ অনুমোদন করা হলো’ মর্মে ২০০৩ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাক্ষর প্রদান করেন। বিষয়টি জেনেও মন্ত্রিসভা ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা কোনো আপত্তি তোলেননি।

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলায় গ্যাটকোর অনভিজ্ঞতা ও অদক্ষতাজনিত কারণে ঢাকা আইসিডি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকার আইসিডির কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম বিভিন্ন সময়ে বিলম্বের কারণে সরকারের আনুমানিক ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়। তবে দুদকের তদন্তে এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৭ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, গ্যাটকোকে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে আরাফাত রহমান কোকো ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী আকবর হোসেনের পুত্র সায়মনকে ওই কাজ প্রাপ্তির শর্ত অনুযায়ী বিভিন্ন তারিখে আনুমানিক ২ কোটি ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৯১ টাকা প্রদান করেন।

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়া নিজে লাভবান হওয়ার জন্য, কোকোকে লাভবান করার জন্য, আকবর হোসেনকে লাভবান করার জন্য, তার ছেলে সায়মনকে লাভবান করার জন্য প্রস্তাব অনুমোদন না করে পুনরায় আবার প্রস্তাব গ্রহণ করে অবৈধভাবে গ্যাটকো কাজ দিয়েছিলেন। যার ফলে ১ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এতে পোর্ট অচল, বন্দরে কার্যক্রম ব্যাহত ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়।

আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দম কমিশন আইন ৪০৯, ১০৯ এবং ৫ (২) ধারায় চার্জ গঠন করার প্রস্তাব করেন মোশাররফ হোসেন কাজল। তার শুনানি শেষে আদালত আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের শুনানির তারিখ ঠিক করেন।

এদিকে, এদিন গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব অসুস্থ থাকায় আদালতে হাজির হতে না পারায় সময় আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

এদিন বেলা ২টার দিকে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। এরপর আবার খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়