ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দারিদ্র্য দমাতে পারেনি তাহেরকে

আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দারিদ্র্য দমাতে পারেনি তাহেরকে

বাবা-মায়ের সঙ্গে তাহের

আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : বন্ধুরা যখন সবাই জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফল উদযাপনে ব্যস্ত, আর ঠিক তখন মো. আবু তাহের শেখের (১৩) বাবার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুরের বোয়ালমারীর শালথা গ্রামের দুদু মিয়ার জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণের কাজ করছে। জেএসসি পরীক্ষা শেষ করেই তাহের বাবার সঙ্গে শ্রমিকের কাজ করছে।

 

স্কুল বন্ধ হলেই তাহেরকে বাবার সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের কাজ করতে হয়। এই টাকা দিয়েই চলে তার পড়ালেখা ও খাওয়ার খরচ। একদিনের জন্য বাড়ি এসে পরীক্ষার ফল জেনে আবার বাবার সঙ্গে কাজ করতে চলে গেছে সে।

 

মো. আবু তাহেরের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়নের চরপাচুড়িয়া  মধ্যপাড়া গ্রামে।

 

অদম্য মেধাবী তাহের এবারের জেএসসি পরীক্ষায় মাগুরার  মহম্মদপুর উপজেলা সদরের  আরএসকেএইচ ইনস্টিটিউশন থকে গোল্ডেন জিপিএ ৫  পেয়েছে।

 

তাহেরের বাবা মোহাম্মদ শেখ দিনমজুর। সব দিন কাজ জোটে না তার। তাই সংসারে অনটন লেগেই থাকে। এ কারণে তার সস্তান আবু তাহেরকে বহুদিন না খেয়েই বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু অভাব তাহেরকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ সাফল্য এনে দিয়েছে তাকে।

 

মোহাম্মদ শেখ  জানান, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তাহের দ্বিতীয় । বড় বোন সাথী পারভিন  মহম্মদপুর সদরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। চার শতক জমির ওপর পাটখড়ির বেড়ার ঝুপড়ি ঘর। আর কোনো জমি নেই। অন্যের জমিতে  কৃষি শ্রমিকের কাজ করে কোনোমতে সংসার চলে তার। যা আয় করেন তা দিয়ে দুই ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালানো তার পক্ষে কষ্টকর। বাধ্য হয়ে বাবা-ছেলে মিলে পার্শ্ববর্তী বোয়ালমারীর রেল স্টেশন এলাকায় শ্রমিক বিক্রির হাটে যান। গৃহস্থরা তাদের কিনে নিয়ে কৃষি কাজ করান।

 

তিনি জানান, ছেলেকে (তাহের) নিতে চান না। অভাবের তাড়নায় না নিয়েও পারেন না। তাহের আয় করলে দুই ভাইবোনের পড়ার খরচটা চলে যায়।

 

তাহেরদের চরপাচুড়িয়া মাগুরা ও ফরিদপুরের মধ্যে সীমানা বিরোধ চলা একটি এলাকার গ্রাম। মধুমতি নদী সিকস্তি এই জনপদের সীমানা বিরোধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ আদালতে মামলা চলে আসছে।  এই গ্রামের একটি অংশ এখন ফরিদপুরের বোয়ালমারী  ও অন্য অংশ মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় অবস্থিত।

 

মহম্মদপুরের চরপাচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগম জানান, তাহের ছোটবেলা থেকেই মেধাবি। পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারলে সে অনেক দূর যেতে পারবে। কিন্তু দারিদ্রতা তার চলার পথে বড় বাঁধা।

 

তাহেরের মা জলি বেগম জানান, অভাবের সংসার তাদের। ঘরভিটা ছাড়া কোনো জমিজমা নেই। তিনি বাড়তি আয়ের জন্য অন্যের বাড়িতে মৌসুমি ফসল মাড়াইয়ের কাজ করেন। এ অবস্থায় তাহেরের পড়াশোনা কীভাবে চালিয়ে নেবেন, তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় মধ্যে আছেন।

 

মহম্মদপুর উপজেলা সদরের আরএসকে.এইচ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক এ কে এম নাসিরুল ইসলাম বলেন, মেধাবী ছাত্র হওয়ায় শিক্ষকরা তাহেরকে সহযোগিতা করেছেন।

 

তিনি বলেন, কোনো ধরনের সহযোগিতা না পেলে তাহেরের শিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/মাগুরা/ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬/আনোয়ার হোসেন শাহীন/রুহুল/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়