ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘পেঁপে মিজান’

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘পেঁপে মিজান’

নিজের পেঁপে খেতে কৃষক মিজান

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : পেঁপে চাষ করে সারা বছর আয় করা যায়, এই মন্ত্রটি এখন ভালই জেনেছে মাগুরার কৃষক। ফলে মাগুরার অনেক এলাকাতেই কৃষকদের অন্যতম আগ্রহ পেঁপে চাষ।

মাগুরা সদর উপজেলার বারইপাড়া গ্রামে কৃষক মিজান বড় আকারের পেঁপে চাষ করে লাভবান হন। এখানকার অন্য কৃষকরাও তাকে অনুসরণ করেন। বলা যায়, এখন এ এলাকার প্রধান ফসল পেঁপে চাষ। ‘পেঁপে মিজান’ বললে এক নামে সবাই তাকে চেনে।

পেঁপে চাষ লাভজনক। একবার পেঁপের চারা লাগালে তিন বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এ ছাড়া  সবজি জাতীয় এ ফল চাষ করে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কারণে মাগুরার কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পশাপাশি  পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে  উঠেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৪৯৮ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৯৬ হেক্টর, শ্রীপুরে ৭৫ হেক্টর, মহম্মদপুরে ১৫  এবং শালিখায় ১২ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে। যা থেকে (সবজি হিসেবে) প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন পেঁপে উৎপাদিত হবে।

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের  গ্রামের  কৃষক মিজানুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লাভজনক হওয়ায় তিনি এই পেঁপে চাষের দিকে ঝুঁকেছেন।  তিনি এ বছর তিনি  ৯ বিঘা জমিতে পেঁপে লাগিয়েছেন। প্রথম বার পেঁপের চারা লাগানোসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যায়  বিঘা প্রতি তার খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। পেঁপে চাষের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে কৃষি বিভাগ নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছে।

তিনি জানান, ইতিমধ্যে নতুন লাগানো খেত থেকে পেঁপে বিক্রি শুরু করেছেন। বর্তমানে প্রতিমণ পেঁপে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। প্রতি ২০ দিন পরপর প্রায় ৪০০মন পেঁপে বিক্রি হচ্ছে।

এ বছর থেকে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি হবে আশা করছেন তিনি। পেঁপে চাষ প্রসঙ্গে তিনি জানান, একবার পেঁপে চারা লাগালে প্রায় ৩ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী দ্ইু বছর পেঁপে গাছের পরিচর্যায় খরচ খুবই কম লাগে। এছাড়া ঝড় বৃষ্টিতে গাছের ক্ষতি না হলে চাষকৃত পেঁপে খেত থেকে আগামী তিন বছরে গড়ে  ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি হবে বলে তার ধারণা।  পেঁপে চাষে খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় জেলার অনেক কৃষকই অন্যান্য ফসলের পাশপাশি পেঁপে চাষের দিকে ঝুঁকছেন বলে জানান তিনি।

বারইপাড়া গ্রামের কৃষক হাসেম আলি জানান, তিনি এ বছর ৩ বিঘা জমিতে পেঁপে লাগিয়েছেন। যা থেকে চলতি বছরে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি হবে বলে ধারণা করছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে খেত নষ্ট না হলে আগামীতে আরো বেশি লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পেঁপে গাছের বিভিন্ন রোগ যেমন-গাছের গোড়া পঁচা, পোঁকা বাহিত বিভিন্ন রোগ,ক্ষতিকারক ভাইরাস থেকে গাছ কে মুক্ত রাখতে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া  পেঁপে গাছের খাদ্যের অভাব মিটাতে বোরোন নামক অনুখাদ্য প্রয়োগ করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে পেঁপের পরাগায়ণসহ ভালো ফলন পাওয়ার জন্য কৃষকদের বিঘাপ্রতি ২টি পুরুষ গাছ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চলতি মৌসুমে জেলায়  স্থানীয় জাতের পেঁপের পাশাপাশি বারি জাতের শাহিরাচি, কাশিমপুরিসহ বিভিন্ন জাতের পেঁপের চাষ করেছেন কৃষকরা। এসব জাতের পেঁপে খেত থেকে কৃষকরা যাতে ভালো ফলন পতে পারেন এর জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। পেঁপে মানুষের পেটের রোগসহ শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাঁকা পেঁপে খুবই সুস্বাদু। এটি থেকে ভিটামিন-এর অভাব পূরণ হয় । এ কারণে কারো বাড়িতে জায়গা থাকলে অন্তত ৪টি পেঁপে গাছ লাগানো উচিত। এতে করে বাড়ির মালিক সারা বছর পেঁপে খেতে পারবেন।  বাড়িতে পেঁপে চারা লাগিয়ে বিশেষ যত্ননেওয়ার দরকার হয় না। গাছের গোড়ায় মাঝেমধ্যে বোরোন নামক অনুখাদ্য প্রয়োগ করলেই চলে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

শ্রীপুর উপজেলার বারইপাড়ায় বেপারী রেজাউল ইসলাম ও লাবু বিশ্বাস জানান, তারা কৃষকদের খেত থেকে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা প্রতিমণ পেঁপে কিনছেন।  যা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে বিক্রয়ের জন্য পাঠাচ্ছেন।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘পেঁপে চাষের সুবিধা হচ্ছে জমিতে একবার চারা লাগালে ৩ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে  প্রথম বছরের পর পরবর্তি দুই বছর খেত পরিচর্যার খরচ খুবই কম লাগে। এতে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারও কৃষকরা পেঁপে চাষে ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন।’

 

 


রাইজিংবিডি/মাগুরা/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আনোয়ার হোসেন শাহীন/টিপু                                                         

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়