ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘ধুয়ে-মুছে সব করেছে সাফ’

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ধুয়ে-মুছে সব করেছে সাফ’

নিজের মায়ের পা ধুয়ে দিচ্ছেন ছাত্রীরা

পাবনা প্রতিনিধি : দাদাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। দুপুর সাড় ১২টা। মাঠের একপাশে সারি করে রাখা চেয়ারে বসে আছেন ৫০ জন মা-বাবা। আর প্রত্যেকের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসেছে তাদেরই ছেলে-মেয়ে যারা ওই স্কুলের শিক্ষার্থী। পরম শ্রদ্ধায় মা-বাবার পা ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছে দিল তারা। এরপর তাদের যত্নের সঙ্গে ওষুধও খাইয়ে দিল।

এ দৃশ্য পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নে দাদাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। বুধবার দুপুরে এমন ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে ‘মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভক্তি-শ্রদ্ধা’ শীর্ষক এ কর্মসূচিতে ৪০ মা ও ১০ জন বাবা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন স্কুলের ৩০০ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। এ সময় অনেক মা-বাবা সন্তানের এমন ভক্তি ভালোবাসায় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো। ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিল মাহমুদের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আকতার, লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান শরীফ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক খালেদা আক্তার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো বলেন, ‘বাবা-মায়ের প্রতি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা জাগিয়ে তোলার এ কর্মসূচি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতে একটি সুন্দর ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত জাতি পাব।’


                                                 নিজের বাবার পা ধুয়ে দিচ্ছেন ছাত্ররা


এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা খাতুনের মা সালেহা খাতুন ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী তন্বী খাতুনের মা পারুল আক্তার বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা আজ আমাদের পা ধুয়ে দিয়ে মুছে দিয়েছে। এজন্য আমাদের খুব ভালো লেগেছে। তারা যেন ভবিষ্যতেও আমাদের প্রতি এমনভাবে খেয়াল ও ভালোবাসা ধরে রাখে সেই কামনা করি।’

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রিতিক ইসলামের বাবা জিয়াউল ইসলাম ও নবম শ্রেণির ছাত্র রুবেল হোসেনের বাবা আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘সন্তান যে আমাদের পা ধুয়ে দেবে, ওষুধ খাইয়ে দেবে- তা ভাবতেই পারিনি। এমন আয়োজন খুবই ভালো। সন্তানেরা আজ যে শিক্ষা পেল তা আগামীতে তাদের জীবন গঠনে কাজে লাগবে।’

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা খালেদা আক্তার বলেন, ‘আমরা অস্থির সময় পার করছি, যেখানে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানরা অবহেলা করছে, দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। তাই এখন থেকে যদি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এভাবে বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও বৃদ্ধ বয়সে পাশে থেকে কর্তব্য পালনের শিক্ষা দিতে পারি, তাহলে আগামীতে এর ফল নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে। পারিবারিক পরিবেশ আরো উন্নত হবে।’


                                অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন রেখা রাণী বালো


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার, মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার’- নচিকেতার গাওয়া এই গান শুনে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের অবহেলা-উদাসীনতার বিষয়টি তাকে নাড়া দেয়। সেখান থেকেই তিনি চিন্তা করতে থাকেন- কীভাবে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত করা যায়।’

সেই চিন্তা থেকেই ‘মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভক্তি-শ্রদ্ধা’ শীর্ষক এই কর্মসূচি গ্রহণ করেন। অনুকরণীয় এ কর্মসূচি ঈশ্বরদী উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে পালন করা হবে বলে জানান তিনি। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভক্তি-শ্রদ্ধা বাড়বে। নৈতিক শিক্ষা পাবে শিক্ষার্থীরা।



রাইজিংবিডি/পাবনা/৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/শাহীন রহমান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়