ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রিলে ফসল আবাদে ঝুঁকছেন পাবনার কৃষক

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রিলে ফসল আবাদে ঝুঁকছেন পাবনার কৃষক

পাবনায় মটর ডালের রিলে ফসলের একটি খেত

পাবনা প্রতিনিধি : খাদ্য চাহিদার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য রিলে ফসল উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছেন পাবনার কৃষকেরা।

এ পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে চারটি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা অধিকহারে লাভবান হচ্ছেন। জমির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য শেকড় বা ডাল জাতীয় ফসল আবাদের পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাবনা অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম জানান, ক্রমবর্ধমান ডালের চাহিদাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণার মাধ্যমে ডাল ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে।

এর ফলে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষকদের আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। রিলে আবাদ খরাপ্রবণ এলাকায় জনপ্রিয় করার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে পাবনা জেলার আটঘড়িয়া উপজেলার বাওইখোলা গ্রামে বিনাচাষে মটর ডালের ১৫ বিঘা জমিতে আমন ধানের সঙ্গে রিলে আবাদ করা হয়।

আটঘড়িয়া উপজেলার কড়ইতলা গ্রামের মটর ডালচাষি ফারুক জানান, এ এলাকাতে মটর ডালের আবাদ বেশি হয়। অতীতে তারা চাষের মাধ্যমে এ আবাদ করে আসছিলেন। কিন্তু পাবনার  বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণার বিভাগ থেকে তাদের পরামর্শ পেয়ে আমন ধান কাটার ১০-১৫ দিন আগে ধানের মধ্যে মটর ডালের বীজ বপন করায় তারা ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছেন।

ধানে প্রয়োগকৃত সার রিলে মটরের জন্য সহায়ক হবার কারণে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ ও চাষ ছাড়াই তারা এ আবাদ করতে সক্ষম হয়েছেন। চাষ ও সারের অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়াই রিলের মাধ্যমে পুষ্টিকর খাদ্য মটরের ডাল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। চাষের মাধ্যমে বিঘাপ্রতি ৩-৪ মণ মটরের ফলন হলেও ভূমির প্রকার ভেদে সেটা বর্তমানে ৫-৬ মণে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাওইখোলা গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য ও পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদাও বেড়ে গেছে। সে কারণে গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন না করলে দেশে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে। সীমিত জমিতে কিভাবে আরো বেশি ফসল উৎপাদন করা যায় সেদিকে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। জমির স্বাস্থ্য রক্ষায় শেকড় জাতীয় বা ডাল তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাবনার উপপরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ফসল উৎপাদনের পদ্ধতি পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। খরা ও লবনাক্ত এলাকায় আবহাওয়া সহিষ্ণু ফসলের আবাদ বেছে নেওয়া হচ্ছে। মানুষের ন্যায় জমিরও একটি স্বাস্থ্য আছে। জমিকে অতিরিক্ত চাপ দিলে তার উর্বরতা শক্তি হারিয়ে যাবে। সে কারণে জমির স্বাস্থ্য রক্ষায় কৃষি বিভাগ রিলে ফসল আবাদের ওপর জোর দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ডাল জাতীয় ফসলের শেকড় থেকে নাইট্রোজেন উৎপন্ন হয়ে থাকে। কৃষক ইউরিয়া সার প্রয়োগের মাধ্যমে জমিতে নাইট্রোজেন বৃদ্ধি করে থাকে। জমির স্বাস্থ্য রক্ষায় বেশ কয়েকটি উপাদানের মধ্যে নাইট্রোজেন অন্যতম। সেজন্য এক চাল, দুই ডাল ও এক তেল পদ্ধতিতে বছরে একই জমিতে চারটি ফসল উৎপাদন করার প্রযুক্তি পাবনার কৃষকদের মধ্যে ছড়িয় দেওয়া হচ্ছে। এতে উপকৃতও হচ্ছেন কৃষক।



রাইজিংবিডি/পাবনা/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/শাহীন রহমান/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়