ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

অন্যদের পাশাপাশি নিজ পরিবার সাজাচ্ছেন রহিমা

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অন্যদের পাশাপাশি নিজ পরিবার সাজাচ্ছেন রহিমা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : স্বামী হারানোর পর বিপদে পড়েছিলেন শায়েস্তাগঞ্জের রহিমা খাতুন। একমাত্র ভিটা-ই ছিল তার সম্বল। তিন সন্তান নিয়ে দু’চোখে অন্ধকার দেখছিলেন। বিউটি পার্লারের কাজে কেটে গেছে তার সেই বিপদ।

নিজের উপার্জনে এখন ভালোই চলছে রহিমা খাতুনের সংসার। আরও অনেক নারী তার সহায়তায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উপায় খুঁজে পাচ্ছেন।

রহিমা খাতুনের বয়স ৩০ বছর। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হয় শায়েস্তাগঞ্জের লেঞ্জাপাড়া গ্রামের জিতু মিয়ার সঙ্গে। ১৩ বছরের সংসার জীবনে দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। দরিদ্র জিতুর ঘরে সুখে-দুঃখে একরকম চলছিল তার। দুই বছর পূর্বে স্বামী জিতু মিয়া মারা গেলে ঘোর বিপদে পড়েন তিনি। সন্তানদের নিয়ে রহিমা তখন অসহায়। ভিটে ছাড়া কিছু নেই। আহার জোগাড়, জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ে রহিমার কাছে। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। চেষ্টা করে যান, কীভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়।

শুরু হয় রহিমার নতুন পথচলা। এ পথচলা সৎপথে অর্থ উপার্জনের। বিউটি পার্লারের কাজ জানা ছিল তার। এরসঙ্গে আরও প্রশিক্ষণ নিয়ে বিউটি পার্লারের দোকান দেন। তবে অর্থের অভাবে তিনি এগুতে পারছিলেন না। কারো কাছে প্রয়োজনীয় অর্থসাহায্যও পাচ্ছিলেন না। এ সময় রহিমার পাশে দাঁড়ায় বেসরকারি  সংস্থা ‘আরডিআরএস বাংলাদেশ’।

আরডিআরএস-এর শায়েস্তাগঞ্জ শাখা থেকে পর্যায়ক্রমে ঋণ নিয়ে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করেন। আবার নিয়মিত পরিশোধও করেন। নিজের ব্যবসায়িক কাজের পাশাপাশি অসহায় নারীদের তিনি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি বেশ কয়েকজন নারীকে বিউটিশিয়ান হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

আলাপকালে রহিমা খাতুন জানান, স্বামীর স্মৃতি মনে করে সন্তানদের পড়াশুনা করাচ্ছেন। পাকা করে ঘর তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার চলার পথে ক্ষুদ্রঋণ অনেক কাজে এসেছে।’

জেলার বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে তিনি বিউটি পার্লার পরিচালনা করছেন। এ পার্লারে প্রতিদিন ২৫-৩০ জন নারী রুপচর্চার জন্য আসছেন। রহিমার কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া পারুল আক্তার, মান্না আক্তার, বিউটি আক্তার, জেসমিন আক্তাররা আজ নিজ পায়ে দাঁড়িয়েছেন। তারাও জেলার বিভিন্নস্থানে পার্লার দিয়ে সৎপথে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তাদের বক্তব্য, ‘রহিমা আপু এক সংগ্রামী নারী। তার অনুপ্রেরণায় আজ আমরা কর্মমুখী। তাকে আমরা কোনো দিন ভুলতে পারব না।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নওয়াব আলী বলেন, ‘রহিমার স্বামী জিতু আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। জিতু অসুস্থ ছিলেন। রহিমা তার স্বামীর সেবাযত্ন করেছেন। অভাবের সংসারে তিনি হাল ছাড়েননি। আজ জিতু নেই। রহিমা জীবন সংগ্রামে হেরে যাননি বরং সংগ্রামী নারীর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্য নারীদেরও জীবনযুদ্ধে সাহসী করে তুলছেন।’

রহিমা খাতুন জানান, বিউটি পার্লারে অন্যকে সাজানোর পাশাপাশি নিজের পরিবারকেও তিনি সাজিয়ে তুলতে চান। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে সত্যিকারের মানুষ গড়ে তোলাই এখন তার জীবনের লক্ষ্য।




রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/২০ এপ্রিল ২০১৭/মামুন চৌধুরী/টিপু/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়